বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেছেন বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নারী নির্যাতনের ঘটনার বিচার সরকার করবেই।
তবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেছেন এ ধরনের ঘটনার বিচার হয়না বলেই বারবার এসব ঘটছে।
আজ ঢাকায় বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে অংশ নিয়ে তারা এসব মন্তব্য করেন।
একি সাথে আলোচক ও দর্শকদের অনেকেই পহেলা বৈশাখের দিন সংঘটিত ঘটনার বিচারের বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।
ঢাকায় টিসিবি মিলনায়তনে সংলাপের এ পর্বে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে জাতিসংঘসহ কয়েকটি দেশের প্রতিক্রিয়া এবং সিটি নির্বাচনে সমান সুযোগের বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে।
এবারের পর্বে আলোচক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বা বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস।
একজন দর্শক জানতে চান পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষের দিনে প্রকাশ্যে নারীদের লাঞ্ছনার সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার কি হবে ?
আরেকজন দর্শক জানতে চান যৌন হয়রানির জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করার সংস্কৃতির শেষ কোথায়?
জবাবে গওহর রিজভী বলেন ওই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের সরকার ছাড়বেনা কারণ ওই দিন যা ঘটেছে তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে তদন্ত সহ আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন সরকারের পদক্ষেপের পাশাপাশি নাগরিকদেরও এ জাতীয় ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, “এ ধরনের একটা দুর্ঘটনা এতো লোকের সামনে হয়ে গেলো। পুলিশের কর্তব্য ছিল ঠেকানো। কিন্তু আমরা নাগরিকরা কি করেছি। দয়া করে বিশ্বাস রাখুন, ধৈরয ধরুন, এ সরকার এ ঘটনার বিচার করবেই”।
একি সঙ্গে নারী পোশাককে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরির চেষ্টার সমালোচনা করে তিনি বলেন নারী কোন ধরনের পোশাক পড়বে সেটি একান্তভাবেই নারীর নিজের সিদ্ধান্ত।
ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন নৈতিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি অনেকে এ ধরনের অপরাধ করেও মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। পহেলা বৈশাখের দিনে এমন ঘটনার পরও আইন শৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তা অস্বীকার করা অত্যন্ত দু:খজনক। সব রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সচেতন নাগরিকদের এসব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, “এ ধরনের জঘন্য অপরাধ হলো। অথচ প্রথমে দেখেছি আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলো। এগুলো খতিয়ে দেখার তো কিছু নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও একি ঘটনা ঘটলো।যাদের কোমরে জোর আছে তারা এগুলো করে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়”।
মিস্টার চৌধুরীও নারী লাঞ্ছনার জন্য যারা পোশাককে দায়ী করছেন তাদের মানসিকতার সমালোচনা করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য শুনে বিষয়টি বেশিদূর অগ্রসর হবেনা বলেই মনে করেন তিনি। পূর্নাঙ্গ তদন্ত না করে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেয়ারও সমালোচনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, “এতো মানুষের সামনে সম্ভব এটা করা ? এ যে প্রতিবাদ না করার কালচার সেটা নেতিবাচক রাজনীতি, আতঙ্ক ও মত প্রকাশের অধিকার বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে সবার মধ্যে ঢুকে গেছে। কেউ নারীর কাপড় খুলছে তাকে বাধা দিবো? তাহলে পুলিশ উল্টো আমাকেই ধরবে। বিচার চাইতে গেলে যে বিচার চায় উল্টো তারই বিচার হয়”।
নাসিম ফেরদৌস বলেন, “নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ঘরে ঘরে নারীদেরকেই পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য সচেতন করে তুলতে হবে। তিনি বলেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সত্যিকার ভাবেই নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে”।
তিনি বলেন, “কোন কিছুরই বিচার আমরা পাইনা। কে কি পড়লো সেটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। নারীকে তার স্বাধীনতা দিতেই হবে”।
আরেকজন দর্শক জানতে চান ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কি সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারছে।
জবাবে ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন নির্বাচন কমিশন এখনো সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারেনি।
তবে গওহর রিজভী বলেন নির্বাচন কমিশনের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের ক্ষমতা আছে এবং সেটি প্রয়োগের দায়িত্বও তাদের।
Leave a Reply