বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অভাবেই আইপিএল থেকে কোলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) বিদায় নিয়েছে বলে মনে করেন সাবেক ক্রিকেটার দীপ দাশগুপ্ত।
‘সাকিব-নারিন জট আর একটা ভুল স্ট্র্যাটেজিতে শেষ কেকেআর’ শিরোনামে কোলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা সোমবার এ নিয়ে দীপ দাশগুপ্তের একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
দীপ দাশগুপ্ত তার লেখায় বলেছেন, মুম্বাই-হায়দরাবাদ ম্যাচে কমেন্ট্রি করার ফাঁকে কেকেআর নিয়ে লিখতে বসেও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, টিমটা প্লে অফ খেলবে না। ভাবাটা কঠিন হচ্ছে এই কারণে যে, কেকেআর আইপিএল আটের অন্যতম সেরা টিম ছিল। ওপেনাররা ভাল খেলছিল, মিডল অর্ডারে আন্দ্রে রাসেলের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ছিল। ইউসুফ পাঠান— ভেবে দেখুন তো গত তিন বছরে এর চেয়ে ভাল ফর্মে দেখেছেন কি? ব্র্যাড হগ, পীযূষ চাওলারাও দুর্দান্ত বল করেছে। তার পরেও পারল না কেকেআর, ভেবে আশ্চর্য লাগছে।
গোটা পাঁচ-ছয় কারণে কেকেআরকে এ ভাবে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে হলো। কোথাও না কোথাও যে ফ্যাক্টরগুলো কাজ করে টিমটাকে আর একটা পয়েন্ট পাওয়া থেকে আটকে দিল, যেটা পেলেই ওরা প্লে অফে চলে যেতে পারত।
দীপ দাশগুপ্ত কারণ হিসেবে বলেন, আইপিএল সেভেনে কেকেআর যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তার পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কিন্তু বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। ও থাকা মানে মিডল অর্ডার ব্যাটিংটা শক্তিশালী হবে। আবার বোলিংয়েও চারটে ওভার করিয়ে দেয়া যাবে। আর সেই সাকিবকেই এ বার সাত-আটটা ম্যাচ পেল না কেকেআর। মাঝের এই সময়টায় নাইটরা কয়েকটা ম্যাচ হেরে গেল। কখনও কখনও দেখলাম, জোহান বোথাকে নামানো হল ওর বদলি হিসেবে। কিন্তু লাভ হল না। ধাক্কাটা যেমন ছিল, তেমনই থেকে গেল।
সুনীল নারিন একটা বড় ফ্যাক্ট হিসেবেও কাজ করেছেন বলে মনে করেন দীপ।
তিনি বলেন, নারিনের অ্যাকশন নিয়ে একটার পর একটা সমস্যা কোথাও গিয়ে মনে হয় ওর সঙ্গে টিমেও প্রভাব ফেলেছিল। একে তো নারিন কেকেআরের এক নম্বর বোলার। অ্যাকশন নিয়ে পরের পর বিতর্কে ওর বোলিং আগের মতো আর থাকল না। প্রথম দিকে উইকেট পায়নি, রানও দিয়েছে। ইডেনে আরসিবি ম্যাচে তো নারিনকে অতি গুরুত্বপূ্র্ণ সময়ে একটা ছয়ও মেরে দেয় হর্ষল পটেল। আবার সানরাইজার্সের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ৪ ওভারে ৩৮ দেয়। তার পর নারিনকে নিয়ে ক্রমাগত টেনশন টিমটারও ফোকাস বোধহয় কিছুটা নড়িয়ে দিয়েছিল। আসলে আপনার সেরা বোলারকে নিয়ে যদি রোজ-রোজ ঝামেলা হয়, ড্রেসিংরুমে সেটা নিয়ে আলোচনা সাধারণত চলে। যেমন, আবার কবে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে নারিন? রিপোর্টটা কবে আসবে? এ ধরনের কিছু প্রশ্ন। কিন্তু এই প্রশ্নগুলো একটা টিমে নেগেটিভ ব্যাপার ঢুকিয়ে দিতে পারে।
ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে অতিরিক্ত পরীক্ষাকেও আইপিএল থেকে কোলকাতার বিদায়ের একটি কারণ হিসেবে দেখছেন দীপ।
তিনি বলেন, একটা উদাহরণ দেব। সূর্যকুমার যাদবকে একটা সময় টানা চারে খেলিয়ে যাওয়া। সূর্যকে আমি বেশ কয়েক বছর ধরে চিনি। ও পরে এসে ১০ বলে ২০ দেবে। কিন্তু তিরিশ বলে পঞ্চাশ করতে গেলে মুশকিলে পড়বে। সিএসকে-র সঙ্গে যেমন চারে নেমে ২৬ বলে ১৬ করে। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে দু’রানে ওই হার নাইটরা ভুলতে পারবে না।
ক্লোজ ম্যাচ হেরে আইপিএল থেকে বিদায় নিতে হলো কোলকাতাকে।
দীপ বলেছেন, যে ক’টা ম্যাচ কেকেআর এ বার হেরেছে, একটাও কিন্তু বড় ব্যবধানে নয়। কখনও দু’রান, কখনও চার, কখনও নয়। মানে, একটা শটের ব্যাপার ছিল। বলতে চাইছি, কেকেআরকে কেউ দাপট দেখিয়ে হারাতে পারেনি। কোনও রকমে হারিয়েছে। যে ম্যাচগুলো কেকেআরও জিততে পারত। আইপিএলের মতো লম্বা টুর্নামেন্টে ক্লোজ ম্যাচ খুব বেশি হারলে পরে মুশকিল হয়ে যায়। কেকেআরেও সেটা হয়েছে।
Leave a Reply