ফিফা-কেলেঙ্কারিতে খুব করে ডুবে ফুটবল-বিশ্ব। বুঁদ হয়ে ছিল কাল রাতে হয়ে যাওয়া চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল নিয়েও। ওদিকে অলক্ষ্যে যে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে কোপা আমেরিকা, সেদিকে যেন নজর নেই তেমন কারো। অবশ্য আর মাত্র চার দিন পরই যখন পর্দা উঠছে লাতিন আমেরিকার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের ওই লড়াইয়ের, তখন একটু একটু করে রোমাঞ্চ এবার ছড়িয়ে পড়বে নিশ্চিত।
কোপা আমেরিকার সফলতম দল উরুগুয়ে। ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন ‘লা সেলেস্তে’রা। ‘আলবিসেলেস্তে’ আর্জেন্টিনার ঘরে ট্রফি গেছে ১৪ বার। বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বকালের সফলতম দল ব্রাজিল এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে বেশ। ‘সেলেসাও’রা কোপা আমেরিকা জিতেছে মোটে আটবার। যার সর্বশেষটি ২০০৭ সালে। বৈশ্বিক শ্রেষ্ঠত্বে ফেরার পথে আগে মহাদেশীয় রাজত্ব জয়ের জন্য মরিয়া এবার ব্রাজিল। যার প্রস্তুতির চূড়ান্ত ধাপ শুরু হচ্ছে আজ মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে।
বড় আশা করে গত বছর বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ব্রাজিল। আশা ছিল, ১৯৫০ সালের ‘মারাকানাজো’র দুঃস্বপ্ন কবরচাপা দেবে অবশেষে। উল্টো হলোটা কী! সেমিফাইনালের জার্মানির কাছে ১-৭ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে নতুন দুঃস্বপ্নের দেয়ালে পিষ্ট ফুটবলপাগল দেশটি। কক্ষপথে ফেরার জন্য কোচ হিসেবে ফেরানো হলো কার্লোস দুঙ্গাকে। তাঁর খেলার ধরন নিয়ে ‘জোগো বোনিতো’র স্মৃতিচারণে আবিষ্ট সমর্থকরা প্রশ্ন তুলতে পারেন। তবে কার্যকারিতা নিয়ে একেবারেই না। প্রমাণ? বিশ্বকাপের পর দুঙ্গার অধীনে যে আট ম্যাচ খেলেছে ব্রাজিল, জিতেছে আটটিতেই। হারিয়েছে আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, কলম্বিয়ার মতো দলকে।
এবার দুঙ্গা ও ব্রাজিলের সামনে কোপা-চ্যালেঞ্জ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আজ মেক্সিকো ও ১০ জুন হন্ডুরাসের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে তারা। আর ১৪ জুন পেরুর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে মূল অভিযান। বিশ্বকাপের পর দুঙ্গা-রেনেসাঁয় উজ্জীবিতই থাকার কথা ছিল ব্রাজিলের। কিন্তু ইনজুরি সেলেসাওদের স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে কই! এরই মধ্যে অস্কার, লুই গুস্তাভো, মার্সেলোর মতো একাদশের তিন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছেন। অভিজ্ঞ রবিনহোও ইনজুরির কারণে খেলছেন না মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচটি। কোপা আমেরিকায় তাঁর অংশগ্রহণও অনিশ্চিত এখন।
এই ইনজুরির মিছিল আবার ব্রাজিলের তরুণদের সামনে এনে দিয়েছে সুযোগ। শাখতার দোনেতস্কের মিডফিল্ডার ফ্রেদ যেমন। গুস্তাভো ছিটকে যাওয়াতেই না স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন তিনি! এবার সুযোগটা কাজে লাগাতে চান। আর দল হিসেবে যে গত বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্ন পিছু ফেলার সুযোগ এবার ব্রাজিলের, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন ফ্রেদ, ‘বিশ্বকাপে ওই ১-৭ গোলের হারটি ছিল খুব কঠিন। তবে যা হওয়ার, তা হয়ে গেছে। এখন পিছু না তাকিয়ে আমাদের সামনে তাকাতে হবে। আর সমর্থকদেরও উচিত হবে কোপা আমেরিকায় আমাদের উজাড় করে সমর্থন দেওয়া।’
এদিকে মেক্সিকোর বিপক্ষে আজকের ম্যাচটিতে ব্রাজিল পাচ্ছে না অধিনায়ক নেইমারকে। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের পর এবার তিনি যাবেন দলের সঙ্গে যোগ দিতে। দলের ভরসার ভরকেন্দ্র তো বার্সেলোনায় খেলা এই ফরোয়ার্ডই। গত বছর বিশ্বকাপেও দলের পতাকা ছিল নেইমারের কাছে। এর প্রতিদানে খেলছিলেনও দারুণ। কিন্তু কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ইনজুরিতে পড়ে শেষ হয়ে যায় তাঁর বিশ্বকাপ। এর পরই তো জার্মানির কাছে ব্রাজিলের বিধ্বস্ত হওয়া। দুঙ্গা দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্রাজিলের কৌশল সাজিয়েছেন নেইমারকে কেন্দ্র করে। এই কোচের অধীনে আট ম্যাচে তাঁর ৮ গোল। কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে তাই অধিনায়কের ওপর। ফিফার সঙ্গে সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে সাবেক তারকা রবার্তো কার্লোস বলেছেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে নেইমার হবে বিশ্বসেরা ফুটবলার। আর আমি মনে করি, ব্রাজিলকে আবার বিশ্বকাপ জেতাবে ও।’
এবারের কোপা আমেরিকা জেতানো হতে পারে নেইমারের সেই বিশ্বজয়ের পথে প্রথম পদক্ষেপ! গোল ডটকম, ফিফা
Leave a Reply