ফরিদপুর জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি’র বেশকিছু প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। এ জেলায় দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে যোগদানের ‘হিড়িক’ ফেলেছে রীতিমত। যোগদানের অপেক্ষায় রয়েছেন আরো প্রভাবশালী কয়েক নেতা।
বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে বেশ আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের দল ত্যাগে বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে দলটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক। দলের নেতা-কর্মীদের ধরে রাখতে না পারায় প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে সাবেক মন্ত্রী/এমপি থেকে শুরু করে দলের প্রথম সারির নেতাদের।
বিগত কয়েক মাস ধরে ফরিদপুরের বেশ কয়েকজন নেতা বিএনপি ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। এদের মধ্যে দলের পদ-পদবিধারী নেতাও রয়েছেন। আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন ফরিদপুরের এক ডজন চেয়ারম্যান যারা বিএনপি সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কয়েকদিন আগে মধুখালী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি, জেলা উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান আজিজার রহমান মোল্যা আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। একই অনুষ্ঠানে যোগদেন স্থানীয় বিএনপির সহ-সভাপতি ইলিয়াস সিদ্দিকী, যুবদল নেতা সাব্বির হোসেন, জাকির হোসেন, ছাত্রদল নেতা আসাদুজ্জামান বাচ্চুসহ একাধিক নেতা। এছাড়া যোগদানের তালিকায় রয়েছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বেশকিছু নেতা।
ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র শেখ মাহাতাব আলী মেথু আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন কয়েকমাস আগে। একই সঙ্গে কয়েকজন কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান যোগদান করেন। ইতোমধ্যেই শহরে গুঞ্জন রয়েছে বিএনপির একাধিক নেতা আওয়ামী লীগে যোগদান করছেন। তবে বিষয়টি বেশ গোপন রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সদরপুর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ জাফর স্থানীয় এমপি নিক্সন চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আলফাডাংগা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মকিবুল হাসান পটু কয়েকদিন আগে যোগদেন আওয়ামী লীগে। একই সঙ্গে উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম আওয়ামী লীগে যোগদেন। ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েল বলেন,ক্ষমতাসীন দল থেকে যোগদানে বাধ্য করার চাপ ও নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতাই এর মূলকারণ। তিনি বলেন, জেলা বিএনপি সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক দলের কোন স্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় রাখেন না দীর্ঘ দিন ধরে। এছাড়াও দলের কর্মসূচিগুলোতে তারা কর্মীদের ডাকেন না। এই কারণেই এমনটা ঘটছে।
যোগদানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে জেলার নগরকান্দা উপজেলা। এ আসনের এমপি, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও তার ছেলে আয়মান আকবর বাবলু চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে বিএনপি-যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দল-ছাত্রদলের দু’ডজন নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন, পৌর বিএনপির সভাপতি, সাবেক মেয়র আলীমুজ্জামান টুলু মোল্যা, সিনিয়র সহ সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ জালালউদ্দিন নানটু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন জাকারিয়া, ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জালালউদ্দিন সরদার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি এনায়েত হোসেন কাঞ্চন, পৌর যুবদলের আহবায়ক মজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি হবিবুর রহমান হবিসহ বেশকিছু নেতা। যোগদানের তালিকায় রয়েছেন বিএনপির শীর্ষ কয়েক নেতাও। যে কোন সময় তারা আওয়ামী লীগে যোগদান করবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ফরিদপুর যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতাকে দায়ী করে বলেন, দলে কর্মসূচি গুলোতে শীষ নেতাদের উপস্থিতি না থাকায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা হতাশ। আর এই হতাশা থেকেই এমনটি ঘটছে।
বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, দলে যারা যোগ দিচ্ছেন তাদের স্বাগত জানাই। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, যারা যোগ দিচ্ছেন তারা সুবিধা নেবার জন্য যোগ দিচ্ছেন নাকি সত্যিকারেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে যোগ দিচ্ছেন।
বিএনপি নেতাদের যোগদানের বিষয়টি নিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া বলেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন মামলা দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানী করে দল ত্যাগে বাধ্য করছে। তিনি বলেন, এছাড়াও কিছু সুবিধাবাদী লোক আছে তারা লাভের আশায় বিএনপি ছেড়ে ক্ষমতাসীনদের দলে ভিড়ছে। আমাদের দলের সাংগঠনিক কোন ব্যর্থতা নেই বলে তিনি জানান।
Leave a Reply