প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছদ্মবেশে মানুষের প্রকৃত অবস্থা দেখার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলের নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ। প্রয়োজনে দিনের বেলায় বোরখা পরে প্রধানমন্ত্রীকে রাস্তায় বের হওয়ার কথা বলেছেন তিনি। বুধবার জাতীয় সংসদে ১০ম জাতীয় সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনি বক্তব্যে রওশন এরশাদ এ আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রওশন এরশাদ বলেন, ছদ্মবেশে বের হযে দেখেন মানুষের দূরবস্থা। কিভাবে তারা বাস করছে। আপনি যদি এটা করেন তাহলে সত্যিকারের বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে আরো সম্মানিত হবেন। তিনি বলেন, আপনার চারপাশে যারা আছেন তারা সত্যিকার তথ্য আপনাকে জানাবেন না। অন্যের কাছ থেকে শোনা আর নিজের চোখের দেখার মধ্যে পার্থক্য আছে। এসময় বিরোধী দলের নেতা উচ্চ পর্যায়ের শক্তিশালী একটি কমিটি গঠন করে মাদক ব্যবসা বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
প্রায় ২০ মিনিটের বক্তব্যে রওশন এরশাদ বলেন, নিম্ন মধ্যআয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত হওয়ায় তিন কন্যাকে ধন্যবাদ। তারা বিদেশের মাটিতে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
তিনি বলেন, এর আগে কখনও সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাব পাসে বিরোধী দলের উপস্থিতি ছিলো না। এই প্রথম বারের মতো আমরা সংসদে থেকে এ ধরণের কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছি। বিরোধী দল হিসেবে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে চাই। বিরোধী দলের ভুমিকা কি রকম হতে পারে তার উদাহরন তৈরি করে আমরা দেখাতে চায়।
যানজট প্রসঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, যানজট নিরসন করতে না পারায় জীবনি শক্তি রাস্তাতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই যানজটের কারণে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে পারেননি বলে জানান বিরোধী দলের নেতা। তিনি বলেন, প্রতিদিন রাস্তায় ১৫ লাখ গাড়ি ও ৫০ লাখ মানুষ এবং ৯ লাখ মোটর সাইকেল চলাচল করে। কিন্তু যানজটের কারণে অনেক কর্মক্ষমতা, কর্মঘন্টা ও বাণিজ্যিক ঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সময় নষ্ট হচ্ছে। এসবের সুরাহা করা প্রয়োজন।
রওশন এরশাদ বলেন, বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হয়। এর কারণে ঢাকায় বিশেষ করে মৌচাক মালিবাগ, এমনকি গুলশান ,বনানী, বারিধারাতেও জলাবদ্ধতা হচ্ছে। রাজধানীর ৫০টি খালের মধ্যে এখন আছে মাত্র ২২টি। এর মধ্যে বেশিরভাগ আবার নষ্ট ও দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগ মন্ত্রীকে এ সমস্যা নিরসনে দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
তিনি বলেন, ভূমিকম্পের বিষয়ে আমাদের কোনো প্রস্তুতি নেই। এটা যে কোনো সময় ঘটতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট একটি রিপোর্ট দিয়েছে যে, নেপালে যে ভূমিকম্প হয়েছে তার থেকে ৩২ গুন বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প হবে। ঢাকায় কয়েক লাখ মানুষ মারা যাবে বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসবের জন্য কি প্রস্তৃতি আছে?
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সাড়ে চার কোটি মানুষ এখনও দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছেন। এখনও ভিক্ষাবৃত্তি চলছে। সারা দেশে সাড়ে ১৪ হাজার বস্তি রয়েছে। ঢাকাতেই আছে ৪ হাজার ৬০৩টি। এখানে বাস করছেন ২৫ লাখ মানুষ। এসব জায়গায় মাদক ব্যবসা ও অসমাজাজিক কার্যকলাপ হয়। মাদকের কারণে তরুনরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এটা রুখতে না পারলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।
রওশন এরশাদ বলেন, দেশে কাজ কম থাকায় চুরি ডাকাতি, খুন বেড়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করুন। মানব পাচার যেমন করেই হোক বন্ধ করতে হবে। দেশে কর্মসংস্থান নেই বলেই তারা বিদেশে যাচ্ছে। তা নাহলে যাবে কেন। দালালদের খপ্পরে পড়ে বেশিরভাগ লোক নি:স্ব হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সৌদি আরবে এবার ২৫ হাজার হাজী হজ্ব করতে পারলো না। ওমরাহ ভিসা বন্ধ করে দিলো। শুধু এই মানবপাচারের কারণে।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী লেখাপড়ার ওপর ট্যাক্স ধরেছেন। এগুলো তো মৌলিক অধিকার। এসব না করে শেয়ার বাজার চাঙ্গা করতে হবে। এর মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থান হতে পারে। সংসদে মহিলাদের সংরক্ষিত আসন বাদ দিয়ে তাদের সরাসরি ভোটে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এসময় তিনি প্রত্যেককে সমপরিমান বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান। একইসঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে সরাসরি ভোটের জন্য তাদের মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান।
Leave a Reply