সিরিজের প্রথম ওয়ানডের আগের অবস্থা ছিল না কাল। অবিরাম বৃষ্টিতে পুরো মাঠ ঢাকা নয় যে অনুশীলন করতে পারবে না বাংলাদেশ। তবু দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে পূর্বনির্ধারিত সময়ে অনুশীলন শুরু করতে পারেনি স্বাগতিকরা। তারা যে তখন বিসিবি সভাপতির সঙ্গে জরুরি বৈঠকে ব্যস্ত। ঠিক সময়ে হয়নি ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলন। আর নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা পর যখন বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন নাসির হোসেন, তখনো ওই সভা নিয়েই একের পর এক প্রশ্ন। প্রত্যাশিতভাবেই সেগুলো ‘ডাক’ করে যান ওই অলরাউন্ডার।
কিন্তু হঠাৎ এভাবে পাগলাঘণ্টি বাজিয়ে দেওয়া কেন? না হয় টানা চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ! জয়-ক্যারাভানের অদম্য গতিতে ছুটে চলাটা তাতে কিছুটা বাধাগ্রস্ত সত্যি। তবে একটু অন্যভাবে দেখলে এটিকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের গ্রহণকাল বলা যাবে না কিছুতেই। ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে হারে সিরিজ জয় নিশ্চিত হওয়ার পর। অমন ম্যাচের গুরুত্ব তো এমনিতেই কম থাকে একটু। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টিতে হার। তাতে ব্যাটিং ব্যর্থতা রয়েছে সত্যি, তবে এই ফরম্যাটে যে খুব বড় আশা নিয়ে খেলতে নামেনি বাংলাদেশ-এটি কান পাতলেই শোনা যায়। বড় ব্যর্থতা বলতে কেবল প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের পরাজয়টিই। তাতেই কিনা হঠাৎ ‘গেল গেল’ ধ্বনি উঠে যায় বিসিবির অন্দরমহলে!
আর প্রথম ম্যাচে হারা মানে তো সিরিজ হেরে যাওয়া নয়। বাকি দুটি ম্যাচের অন্তত একটিতে জিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার সুযোগ হাতছাড়া হওয়াও নয় কোনোভাবে। আপাত-দুঃসময়েও কাল যেমন অভয়বাণী শুনিয়ে যান নাসির, ‘আমাদের সামর্থ্য আছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর। এটা সবচেয়ে বড় কথা। আমরা ব্যাটসম্যানরা জ্বলে উঠতে পারছি না। সেটি পারলে ওদের হারানো সম্ভব।’ এ ক্ষেত্রে উইকেট কোনো বাধা নয় বলে দাবি তাঁর, ‘ভারত বা পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের চেয়ে এই উইকেট একটু আলাদা। ওই সব উইকেটে গিয়েই শট খেলা যেত। এখানে একটু সময় নিতে হয়। আর যতটুকু জানি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচের উইকেটও প্রথম ওয়ানডের মতো থাকবে। আমাদের ব্যাটসম্যানদের তাই মানিয়ে নিতে হবে।’ ব্যাটিং সাফল্যের জন্য নির্দিষ্ট কারো ওপর নির্ভরতার দিন ফুরিয়েছে বলেও আত্মবিশ্বাসের সুরে বলে যান তিনি, ‘একসময় ছিল যখন সাকিব ভাই, মুশফিক ভাই, তামিম ভাই ভালো খেললে বাংলাদেশ জিতত। এখন আর ওই ব্যাপারটি নেই। অনেকেই আছে ম্যাচ জেতানোর। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমাদের কামব্যাক করা তাই সম্ভব। সবাই জানে কিভাবে সম্ভব। আমার মনে হয় না খুব বেশি পরিবর্তনের দরকার আছে। শুধু মানসিকভাবে একটু ঠিক হলেই হবে।
ওই মানসিক সমর্থনের জন্য চাইলে একটু পরিসংখ্যানের পাতায়ও চোখ বোলাতে পারে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচ জেতা মানে সিরিজ জয়ের পথে অনেকখানি এগিয়ে যাওয়া-বাংলাদেশ ক্রিকেটের ক্ষেত্রে এটি বড় সত্য। যে ১৬ বার দ্বিপক্ষীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতেছে, এর মধ্যে ১৪ বারই সিরিজ জয়ের শেষ হাসি। তার মানে এই নয় যে, প্রথম ম্যাচ হারার পর কখনোই ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সিরিজেই তো ঘটে অমনটি। সেবার প্রথম দুই ম্যাচ হেরেও শেষ পর্যন্ত সিরিজ জেতে ৩-২ ব্যবধানে। ২০০৯ সালে ওই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দুইবার ঘটে অমনটা। প্রথম ম্যাচ হেরেও জানুয়ারির সিরিজে ২-১ এবং অক্টোবর-নভেম্বরের সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে জয় বাংলাদেশের। ২০১০ সালে আয়ারল্যান্ডের কাছে প্রথম ম্যাচ হারের পর দ্বিতীয় খেলায় জিতে ১-১ সমতায় হয় মানরক্ষা। ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আবারও প্রথম ম্যাচ হেরে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়। আর ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে প্রথম ম্যাচ হারের পর দ্বিতীয়টি ভেসে যায় বৃষ্টিতে। তবে তৃতীয় খেলায় গৌরবময় জয়ে ঠিকই সিরিজ সমতায় শেষ করে বাংলাদেশ।
Leave a Reply