শোবিজের প্রধান একটি অংশ চলচ্চিত্র। অর্থাৎ চলচ্চিত্রই হচ্ছে সবচেয়ে বড় শোবিজ। এই শোবিজে নানা ঘটনা ঘটে। কোন ঘটনা কেউ জানে না, আবার অনেকেই জানে। জানা-অজানার মাঝখানে থাকাদের জন্য কিছু অজানা বিষয় তুলে ধরা হচ্ছেÑ
আমাদের চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। বিশাল এক স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষ আবদুল জব্বার খান অসীম সাহস নিয়ে নির্মাণ করেন ঢাকার প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। এটা ইতিহাস, এটা প্রায় সবারই জানা। কিন্তু এই ‘মুখ ও মুখোশ’ ছবিটি নির্মিত হয়েছিল আবদুল জব্বার খানের লেখা ‘ডাকাত’ নাটক অবলম্বনে- এটা অনেকেরই অজানা। আরেকটি বিষয় হচ্ছে এই ‘মুখ ও মুখোশ’-এর প্রিমিয়ার শো হয়েছিল পুরনো ঢাকার সদরঘাটের কাছে অবস্থিত রূপমহল প্রেক্ষাগৃহে। প্রিমিয়ার শোতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা একে ফজলুল হক। যে রূপমহল প্রেক্ষাগৃহটি দীর্ঘদিন ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিল, সেই রূপমহল প্রেক্ষাগৃহটি বন্ধ হয়ে গেছে ২০ বছর আগে। সেখানে এখন একটি বিপণিবিতান নির্মিত হয়েছে। সদরঘাটে রূপমহল নামে যে একটি প্রেক্ষাগৃহটি ছিল, সেটি বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানে না। সম্রাট শাজাহান প্রেমের নিদর্শন স্বরূপ স্ত্রী মমতাজের নামে আগ্রায় একটি তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন। তাজমহল পৃথিবীর ৭ম আশ্চর্যের একটি। পুরনো ঢাকার মৌলভীবাজারে তাজমহল নামের একটি প্রেক্ষাগৃহ ছিল। কিন্তু এখন সেখানে মসলা বিক্রি হয়। অর্থাৎ প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করে নির্মাণ করা হয়েছে মসলার মার্কেট। পুরনো ঢাকার নবাবপুরে মানসী নামে একটি প্রেক্ষাগৃহ আছে। টাঙ্গাইলের বলিয়াদি জমিদারদের এই প্রেক্ষাগৃহের নামটি দিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রেক্ষাগৃহের প্রতিষ্ঠাতা এবি সিদ্দিকী প্রেক্ষাগৃহের নামের জন্য গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে। রবি ঠাকুর তখন মানসী কবিতাটি লিখছিলেন। তিনি এই মানসী নামটি দিয়েছিলেন প্রেক্ষাগৃহের জন্য। এই মানসী প্রেক্ষাগৃহ ঘটে মজার ঘটনা। স্বাধীনতার পূর্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় মুলসমানরা মানসী নামের কারণে হিন্দুদের প্রেক্ষাগৃহ ভেবে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর অনেক দিন পর প্রেক্ষাগৃহটি নাম পরিবর্তন করে নিশাত নামে চালু হয়। কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নিশাতকে পাকিস্তানিদের প্রেক্ষাগৃহ ভেবে আবার আগুন ধরিয়ে দেয় স্বাধীনতাকামী মানুষরা। স্বাধীনতার পর প্রেক্ষাগৃহটি পুনরায় মানসী নামে চালু হয় এবং এখনও এই নামেই প্রেক্ষাগৃহটি চালু রয়েছে। প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে এমন অনেক অজানা ঘটনা রয়েছে যেমন বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টার প্রেক্ষাগৃহের নাম ছিল মায়া। বন্ধ হয়ে যাওয়া নাজ প্রেক্ষাগৃহে লুঙ্গি পরে প্রবেশ নিষেধ ছিল। বর্তমানে পুরনো চালু থাকা দুটি প্রেক্ষাগৃহের একটি আজাদ, এর পূর্বনাম ছিল মুকুল এবং চিত্রমহলের নাম ছিল নাগর মহল।
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ পশ্চিমা সরকারের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। জীবন থেকে নেয়ার পর জহির রায়হান একুশে ফেব্রুয়ারি নামে আরেকটি ছবি নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু ছবির কাজটি তিনি শুরু করতে পারেননি। শহীদ আসাদের নামে একটি ছবি নির্মাণের জন্য বরেণ্য চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে দিয়ে কুমিল্লার একটি জনসভায় মহরত করেছিলেন। কিন্তু আমজাদ হোসেন পরবর্তীকালে অনেক ছবি বানালেও শহীদ আসাদ নামে ছবিটি আর নির্মাণ করেননি। বাংলাদেশের প্রথম শিশু চলচ্চিত্র প্রেসিডেন্ট (সান অব পাকিস্তান) ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন এ দেশের প্রথম সিনেমা পত্রিকার সম্পাদক ফজলুল হক। এই প্রেসিডেন্ট ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আজকের বিখ্যাত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর। পাশাপাশি আরেকটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তারই ছোট বোন বিশিষ্ট রন্ধন শিল্পী কেকা ফেরদৌসী। ফরিদুর রেজা সাগরের পিতা ফজলুল হক রূপবান ছবিটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সালাউদ্দিন ছবিটি নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করলে ফজলুল হক রূপবান নির্মাণ থেকে সরে আসেন। ক্যাপ্টেন এহতেশামের আবিষ্কার নায়ক রহমান হোটেল শাহবাগ ইন্টারন্যাশনালের ফ্রটডেক্স ম্যানেজার ছিলেন। আরেক আবিষ্কার নায়ক নাদিম ছিলেন গায়ক, নাম ছিল নাজির বেগ। এহতেশামের আবিষ্কার শবনমের পুরো নাম নন্দিতা বসাক, ডাকনাম ঝর্ণা। শবনমের বাপ ছিলেন বিখ্যাত ফুটবলার এবং পরবর্তীকালে রেফারি ননী বসাক। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির নাম ‘মানুষের মন’। রাজ্জাক ববিতা ছিলেন এই ছবির নায়ক নায়িকা। শাবানার প্রযোজনা সংস্থা এসএস প্রডাকশনের নাম নিয়েও অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই জানেন প্রযোজনা সংস্থা শাবানা ও তার স্বামী সাদিকের নামের অদ্যাক্ষর দিয়ে। কিন্তু সঠিক বিষয় হচ্ছে। শাবানা এবং পরিচালক আজিজুর রহমানের স্ত্রী শামীম রহমান দুজনে মিলে মাটির ঘর নির্মাণের সময় গড়ে তোলেন এসএস (শাবানা-শামীম) প্রোডাকশন। পরবর্তীকালে শামীম রহমান সরে গেলেও নামটি এসএস প্রোডাকশনই থেকে যায়। জনপ্রিয় নায়িকা পূর্ণিমা প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন শিশুশিল্পী হিসেবে স্বপন চৌধুরীর ‘শত্রু ঘায়েল’ ছবিতে। কাজী হায়াৎ পরিচালিত আলোচিত ছবি ‘খোকন সোনার’ সেই ছোট্ট শিশুটির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আজকের জনপ্রিয় নায়ক কাজী মারুফ। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নায়িকা ববিতা প্রথম অভিনয় করেছিলেন জহির রায়হানের ‘সংসার’ ছবিতে কিশোরী চরিত্রে। পরে তিনি ববিতা হন। তারই ছোট বোন চম্পা প্রথম অভিনয় করেছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটক জহির রায়হানের ‘বরফ গলা নদী’তে। পরে আশির দশকে তিনি ‘তিনকন্যা’ ছবির মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এই ‘তিন কন্যা’ ছবির মাধ্যমেই প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ পান ভারতের জনপ্রিয় গায়ক কুমার শানু। তাকে এই সুযোগ করে দিয়েছিলেন দুই বিখ্যাত ব্যক্তি সঙ্গীত পরিচালক আলম খান ও পরিচালক শিবলি সাদিক। তিনকন্যা এক ছবি, চম্পা চান্দা আর ববি গানটি গেয়ে কুমার শানু বাংলাদেশের জাতীয চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে তিনি ভারতীয় জানার পর তার নাম বাদ দেয়া হয়। চলচ্চিত্রের কালজয়ী পুরুষ জহির রায়হান লেট দেয়ার বি লাইট নামে একটি ছবি শুরু করেছিলেন নায়িকা অলিভিয়াকে নিয়ে। পরে তিনি অলিভিয়াকে বাদ দিয়ে নায়িকা চরিত্রে ববিতাকে নেন। অবশ্য ছবিটি জহির রায়হান শেষ করতে পারেননি। তার আগেই নিখোঁজ হয়ে যান। এই অলিভিয়া বাংলা সিনেমার মহানায়ক উত্তম কুমারের নায়িকা হয়েছিলেন ‘বহ্নি শিখা’ ছবিতে। আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘সুন্দরী’ ছবিতে ববিতার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জসিম। যিনি পরবর্তীকালে অসংখ্য ছবিতে ববিতার নায়ক হয়েছিলেন। ৬৯টি ছবির পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালক পরিচালিত প্রথম ছবির নাম ছিল ‘লিডার’। কিন্তু প্রথম ছবিটি তিনি শেষ করতে পারেননি। আরেক পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান অনেকগুলো ছবির মহরত করেছিলেন কিন্তু শেষ করতে পারেননি। এর মধ্যে একটি ছবির নাম ‘চোরের রাজা’। কামাল পারভেজ পরিচালিত এই ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল ড্যাশিং হিরো সোহেল রানার। শ্রুতি রেকর্ডিং স্টুডিওতে ছবির গান মহরতে ‘চোরের রাজা’ নামটি নিয়ে মৃদু আপত্তি তুলেছিলেন সোহেল রানা। তিনি বলেছিলেন, চোরের মধ্যে বীরত্ব নেই, যেমন ডাকাতের মধ্যে আছে। মহরতেই নামটি পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবিটি হয়নি। আরেক ছবি মিস বাংলাদেশ। সুন্দরী নায়িকা দিতির জন্মদিনে এফডিসির ঝর্ণা স্পটে বিশাল আয়োজনে মহরত করেছিলেন পরিচালক সোহান ও প্রযোজক মো. ইকবাল। ছবির নায়ক ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। মহরতের পরপরই ইলিয়াস কাঞ্চন জানিয়েছেন তিনি নারীর নামে কোন ছবিতে অভিনয় করবেন না। পরে অবশ্য ইলিয়াস কাঞ্চন দিতিকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। মতিন রহমান পরিচালিত ‘ভাবীর সংসার’ নামের একটি ছবিতে শাবানা আলমগীরের সঙ্গে মৌসুমীর নায়ক হিসেবে প্রথমবারের মতো অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন মান্না। সাইনিং মানিও পেয়েছিলেন। কিন্তু মৌসুমীর আপত্তির কারণে মান্না ওই ছবি থেকে বাদ পড়েন। চলে আসেন ওমরসানি। ছবিটি নাম পরিবর্তন করে ‘স্নেহের বাঁধন’ নামে মুক্তি পেলেও ব্যবসায়িক সাফল্য পেতে ব্যর্থ হয়। মান্না প্রযোজিত প্রথম ছবি ‘লুটতরাজ’-এর প্রথমদিকে প্রযোজক ছিলেন মতিউর রহমান পানু ও পরিচালক কাজী হায়াৎ। দুজনেই প্রযোজনা করতে অপারগতা প্রকাশ করলে মান্না প্রযোজক হয়ে যান। এই ছবিতে প্রথমে নায়িকা ছিলেন অঞ্জু ও দিতি। পরে অঞ্জুকে বাদ দিয়ে মান্না মৌসুমীকে নেয়। লুটতরাজ সুপার হিট হয়ে গেলে মান্না প্রযোজক হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পেয়ে যান। নায়ক ফেরদৌসের প্রথম অভিনয় করার কথা ছিল প্রয়াত নৃত্য পরিচালক আমির হোসেন বাবু পরিচালিত প্রথম ছবি নাচ ময়ূরী নাচ ছবিতে। কিন্তু পরবর্তীকালে ছবিটি হয়নি। এই ফেরদৌস সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালবাসা’র মহরত থেকেই বাদ পড়েছিলেন শাবনূরের আপত্তির কারণে। শাবনূর তখন নতুন নায়কের সঙ্গে অভিনয় করবেন না। জানালে পরিচালক সোহানকে মহরত বাতিল করতে হয়। পরবর্তীকালে সোহান শাকিব খান এবং মৌসুমীর ছোটবোন ইরিনকে নিয়ে নির্মাণ করেছিলেন ‘অনন্ত ভালবাসা’। আর ফেরদৌস হয়ে উঠেছিলেন শাবনূর সবচেয়ে প্রিয় নায়ক, প্রিয় বন্ধু। বিয়েশাদি হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়েছিল। ছোট পর্দায় জনপ্রিয় নায়ক জাহিদ হাসান প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন আবদুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত ‘বলবান’ ছবিতে। নব্বই দশকের শুরুতে এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। নায়ক রাজরাজ্জাক পরিচালিত প্রথম ছবি ‘অনন্ত প্রেম’-এর শেষ দৃশ্য রাজ্জাক-ববিতার একটি চুম্বন দৃশ্য ছিল। গল্পের প্রয়োজনে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড দৃশ্যটি কর্তন না করে রেখে দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে রাজ্জাক নিজেই দৃশ্যটি কেটে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা প্রথম বাংলা গান করেন নজরুল ইসলাম পরিচালিত স্বরলিপি ছবিতে। ভারতের ‘দেয়া-নেয়া’ ছবির হুবহু নকল এই ছবির গানগুলো ছিল মৌলিক। সংগীত পরিচালক সুবল দাস অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তান ফেরত রুনা লায়লাকে দিয়ে প্রথম বাংলা গান করেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য রুনা এখনও গান রেকর্ডিংয়ের সময় উর্দুতে গানের কথা লিখে নেন। সুভাষ দত্ত পরিচালিত সুতরাং ছবিতে সুভাষ দত্ত ও কবরী অভিনীত একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন দুই ভাইবোন মোস্তাফা জামান আব্বাসী এবং ফেরদৌসী রহমান। রোমান্টিক কোন গানে ভাইবোনের একসঙ্গে গান গাওয়া ছিল প্রথম একটি যুগান্তকারী ঘটনা। বিখ্যাত আব্বাস উদ্দিন আহমেদের কন্যা ফেরদৌসী রহমান হচ্ছেন একমাত্র নারীসংগীত পরিচালক যিনি ‘মেঘের অনেক রং’ ছবিতে সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত মায়ের মর্যাদা ছবিতে মান্নার সঙ্গে রিয়াজের অভিনয় করার কথা ছিল। কিন্তু শে মুহূর্তে রিয়াজ আপত্তি জানালে সেখানে সুযোগ পেয়ে যান শাকিব খান। ওই সময়ে কেরিয়ারকে গতিশীল করতে দিলীপ বিশ্বাসের মতো একজন পরিচালকের ছবিতে কাজ করাটা শাকিব খানের কাছে জরুরি ছিল। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে শাকিব খান নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ডিপজল প্রযোজিত আলোচিত ছবি আম্মাজানের কাহিনী কাজী হায়াৎ লিখেছিলেন মান্নাকে সামনে রেখে। কিন্তু এক সময় মান্না ও কাজী হায়াৎ-এর মধ্যে মতো বিরোধ দেখা দিলে কাজী হায়াৎ মান্নাকে বাদ দিয়ে ছবিটি নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে তিনি যান ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে, এরপর হুমায়ূন ফরীদির কাছে। দুজনেই আপত্তি জানালে কাজী হায়াৎ রুবেলকে চুক্তিবদ্ধ করেন। কিন্তু ছবির শুটিং শুরুর আগের রাতে ডিপজলের মধ্যস্থতায় মান্না কাজী হায়াতের মধ্যে দূরত্বের অবসান ঘটে এবং মান্নাকে নিয়েই নির্মাণ করেন ‘আম্মাজান’ যা পরবর্তীকালে একটি যুগান্তকারী ছবি হিসেবে সর্বমহলে সমাদৃত হয়। এই ছবির কল্যাণে মান্না হয়ে যান অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনতো। ‘মনের মাঝে তুমি’ ছবির সাফল্যের পর প্রযোজক মতিউর রহমান পানু রিয়াজ ও পূর্ণিমাকে জুটি করে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন ‘ডাক্তার বাড়ি’ নামে একটি ছবি। কিন্তু রিয়াজ পূর্ণিমা দুজনেই শিডিউল নিয়ে ঘাপলা করলে প্রযোজক মতিউর রহমান পানু দুজনকেই বাদ দেন। নেন শাকিব খান ও জনাকে। ডাক্তার বাড়ি নির্মাণ করেন আজিজুর রহমান, ছবিটি সুপারহিট হয়। নিজেদের ভুলের দরুন একটা মাশুল দেন রিয়াজ-পূর্ণিমা দুজনেই। ভুলের মাশুল এই দুজনে আরেকবার দেন মাহমুদুল হক শামীম প্রযোজিত ও হাছিবুল ইসলাম মিজান পরিচালিত আমার স্বপ্ন তুমি ছবিতে। প্রযোজক পরিচালক দুজনেই পূর্ণিমা ফেরদৌস ও রিয়াজকে নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রিয়াজ পূর্ণিমার অনীহার কারণে এই ছবিতে চলে আসেন শাবনূর ও শাকিব খান। ‘আমার স্বপ্ন তুমি’ শাকিব খানের অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ‘লাইলী মজনু’ নামে একটি ছবি নিয়ে দুবার বড় একটা নাটকের জন্ম দেন শাবনূর ও ফেরদৌস। হঠাৎ দুজনে সিদ্ধান্ত নিলেন যৌথভাবে ‘লাইলি মজনু’ প্রযোজনা করবেন। সাংবাদিক ঢেকে ঘোষণাও দিয়েছিলেন। ঘোষণার পর শুভাকাক্সক্ষীরা তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন। কিন্তু ঘোষণার পর এই ছবির কাজও শুরু হয়নি, শাবনূর-ফেরদৌসের যৌথভাবে ছবি প্রযোজনাও করা হয়নি। এর অনেক বছর পর প্রযোজক নাজিম উদ্দিন চেয়ারম্যান বেশ ঘটা করে শাবনূর ও আমিন খানকে নিয়ে ‘লাইলী মজনু’ ছবির মহরত করেছিলেন হোটেল রাজমনি ঈশাখাঁতে। কিন্তু মহরতের পর এই ছবির কোন শুটিং হয়নি। পরবর্তীকালে প্রযোজক নাজিম উদ্দিন চেয়ারম্যানের আকস্মিক মৃত্যুতে ছবির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এই শাবনূরের আবিষ্কারক ক্যাপ্টেন এহতেশাম হলেও তাকে প্রথম নায়িকা করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন নূর হোসেন বলাই। মেগাস্টার উজ্জ্বলের প্রযোজনায় নূর হোসেন বলাই ‘রসের সাত বাইদানী’ নামে একটি ছবিতে সাত বাইদানির একজন বাইদানীর চরিত্রে তখনকার নূপুরকে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু হালকা পাতলা ছিপছিপে গড়নের কিশোরী নূপুরকে উজ্জ্বলের পছন্দ না হওয়ায় মেয়েটির আর নায়িকা হওয়া হয়নি। পরে ক্যাপ্টেন এহতেশাম নূপুরকে শাবনূর বানান এবং চলচ্চিত্রকে একজন অন্যতম সেরা নায়িকা উপহার দেন। তখনকার জনপ্রিয় নায়ক অপু বিশ্বাসের আবিষ্কারক নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সত্য ঘটনা হচ্ছে- অপু বিশ্বাসকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রথম সুযোগটা দেয় সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি.। বগুড়ার মেয়ে অবন্তি বিশ্বাস অপু বগুড়ার আমরা কজনা নৃত্যুশিল্পীর একজন সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এসেছিলেন নৃত্যের একটি উৎসবে। তারপর চ্যানেল আইতে তাদের একটি নাচের অনুষ্ঠান রেকর্ড করা হয়। অবন্তি বিশ্বাস অপু সিনেমায় অভিনয়ে আগ্রহী জেনে তাকে সুযোগ দেয়া হয় আমজাদ হোসেন পরিচালিত কালসকালে ছবিতে। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের এই ছবিতে শাবনূরের বান্ধবীর চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এই ছবিতে অভিনয়ের সময় তাকে সবদিক দিয়ে প্রচ- সহযোগিতা করেন বিশিষ্ট অভিনেতা আহসানুল হক মিনু। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের আরেক ছবি সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘ও আমার ছেলে’ ছবিতে পপির দ্বিতীয় নায়িকা হিসেবে সুযোগ পান অবন্তি বিশ্বাস অপু। তারপর শাবনূর আর পূর্ণিমার অনীহার কারণে ডিপজল প্রযোজিত এবং এফআই মানিক পরিচালিত কোটি টাকার কাবিন ছবিতে শাকিব খানের নায়িকা হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ পান এবং অপু বিশ্বাস নাম নিয়ে রাতারাতি সুপার স্টার বনে যান। দুবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত নায়িকা নিপুণ প্রথম দর্শকদের সামনে আসেন এফআই মানিক পরিচালিত পিতার আসন ছবিতে। কিন্তু তিনি প্রথমে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান এম এ আউয়াল পরিচালিত ‘আমার রতœগর্ভা মা’ ছবিতে রুবেলের বিপরীতে। কিন্তু তার প্রথম ছবিটি আজও আলোর মুখ দেখেনি। চলচ্চিত্র শিল্পে জানা-অজানা আরও অনেক বিষয় রয়েছে, যা ছাপার যোগ্য নয়। সেই সব অজানা বিষয়গুলো অজানাই রাখা হলো। যাতে করে ঈদের আনন্দের মাঝে বিষাদের কোন ছায়া না
পড়ে।
Leave a Reply