তিনবারের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়িকা পপিকে আগের মতো সিনেমায় দেখা যাচ্ছে না। ছোট পর্দাতেও আসেন মাঝেমধ্যে। মুক্তির জন্য প্রস্তুত বেশ কিছু ভাল মানের ছবি। কিন্তু মুক্তি পাচ্ছে না। কারণটা পপির নিজেরও অজানা। নিজের বর্তমান অবস্থান, কাজের গতি-পরিধি নিয়ে আজকের আলাপনে পপি বলেছেন অনেক কথা। বলেছেন ব্যক্তি জীবন নিয়েও। পপির অনেক কথা থেকে চুম্বক অংশটুকু সাক্ষাৎকার আকারে তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন
সিনেমায় বর্তমান কাজের কি অবস্থা?
নতুন ছবি ‘সোনাবন্ধু’র কাজ করছি। চুক্তিবদ্ধ হয়েছি নতুন একটি ছবিতে। শুরু হবে ‘মন খোঁজে বন্ধন’-এর শুটিং। শেষ পর্যায়ে আছে ‘শটকার্টে বড়লোক’, ‘বিয়ে হলো বাসর হলো না’র কাজ। মুক্তির মিছিলে রয়েছে ‘পৌষ মাসের পিরিতি’, ‘লীলামন্থন’, ‘দুই ভাইয়ের যুদ্ধ’ ছবিগুলো।
ছোট পর্দার একটি টেলিফিল্মে এবারের ঈদে দেখা গেল। কেমন সাড়া পেলেন?
ছোট পর্দায় ঈদ উৎসবে এক দুইটা কাজ করি। এবারও করেছি। ‘ভালবাসা দুজনে’ নামে একটি টেলিফিল্মে। টিভির দর্শক আলাদা বলেই ভাল সাড়া পেয়েছি।
ছোট পর্দায় নিয়মিত দেখা যাবে?
না। ছোট পর্দায় আমি কখনোই নিয়মিত কাজ করি না। ঈদের মতো বড় উৎসব হলে এক দুইটা করি। আমি একটা ধারা মেনটেইন করি। সিনেমার নায়িকা হিসেবে উৎসবমুখর দিনে একবার হলেও টিভিতে যাওয়া উচিত বলে মনে করে কাজটা করি। তবে নিয়মিত কাজ করার ইচ্ছে নাই।
বিজ্ঞাপন চিত্রের মডেল হিসেবেও ইদানীং খুব একটা দেখা যায় না?
স্বাভাবিক এটা আমার কাছে। কারণ আমি খুব কমই বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছি। কিন্তু ভাল ভাল পণ্যের মডেল হয়েছি। যেমন লাক্স, বার্জার পেইন্ট, মুসকান, জনিপ্রিন্ট শাড়ি। এখন যে অফার পাই, ব্যাটে বলে মিলে না দেখে করা হয় না। কারণ আমি সস্তা কোন কাজ করতে চাই না। ভালমানের পণ্য, ভাল স্ক্রিপ্ট, ভাল নির্মাতার বাইরে কাজ করি না বলেই বিজ্ঞাপনচিত্রে দেখা যায় না।
অভিনয়ের জন্য তিনবারের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পরও কি কোন অপূর্ণতা আছে?
অভিনেত্রী হিসেবে অপূর্ণতা তো আছেই। আমি আরও ভাল ভাল কাজ করতে চাই। আগে যে মাপের নির্মাতারা ছিলেন, যে ধরনের প্রোডাকশন হতো, এখন তো তেমন হয় না। আগে শাবানা আপা, ববিতা আপা, কবরী আপাকে কেন্দ্র করে ছবির গল্প তৈরি হতো। দেখা গেছে, শাবানা আপা ‘ভাত দে’ করছেন, ববিতা আপা ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, আবার কবরী আপা ‘সারেং বউ’। শিল্পী পরিচালক প্রযোজক সবার মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা ছিল। এখন সেই ধরনের প্রতিযোগিতা নাই, নির্মাতা, প্রযোজক নাই বলেই ভাল সিনেমাও হচ্ছে না। যখন কাজ শিখলাম তখনই ভাল কাজের অভাব। অপূর্ণতা তো থাকবেই।
কোন ধরনের চরিত্রে এখন কাজ করতে চান?
নারী প্রধান চরিত্রে। ‘বেগম রোকেয়া’, ‘দেবী চৌধুরানী’ কিংবা সাহিত্যনির্ভর চরিত্র- যাতে নারীর গুরুত্ব আছে। দুঃখ হয় এটা ভেবে যে, এখন আমাদের নিয়ে গল্প তৈরি হয় না। এখন সস্তা সেন্টিমেন্ট নিয়ে ছবি হয় বলেই ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।
সুদিনের আশা কি করেন?
অবশ্যই করি। আর করি বলেই তো সিনেমা ছেড়ে দেইনি। আমার বিশ্বাস সিনেমার সুদিন ফিরবে। আর আমি অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে আরও ভাবতে চাই। আরও ভাল কিছু করতে চাই।
নায়ক সংকটটাকে কিভাবে দেখেন?
নায়ক সংকটই তো বড় সংকট। মান্না ভাইয়ের মৃত্যুর পর যে সংকটটা তৈরি হলো সেটা আর পূরণ হলো না। একজন নায়ক সব নিজের মতো করে চালাচ্ছেন। আমি কখনোই নায়কনির্ভর নায়িকা ছিলাম না। তা ছাড়া, আমাদের যাদের আত্মসম্মানবোধ আছে তারা কখনোই কারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আমিও কারও নিয়ন্ত্রণ মেনে কাজ করি না, করবোও না।
বিয়েশাদির কোন ভাবনা?
আপাতত নয়। আমি কোন বিধিনিষেধের মধ্যে থাকতে চাই না। যতদিন কাজ করবো, ততদিন স্বাধীন থাকতে চাই। প্রেম-বিয়ে আর অভিনয়- এই তিনটাকে একসঙ্গে মেনটেইন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
Leave a Reply