ট্রেন্টব্রিজে তৃতীয়দিন সকালে মাত্র ১০.২ ওভারেই শেষ অস্ট্রেলিয়া। অ্যাশেজ কেড়ে নিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাশেজ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার ৫৯৯ দিন পর। দ্বিতীয়দিনেই শেষ হয়ে যেতে পারত চতুর্থ টেস্ট। সেটা যে তৃতীয়দিনে গড়ায়, অসিদের ভাগ্য! শেষ অসি ব্যাটসম্যান নাথান লায়ন আউট হতেই ইংল্যান্ড এক ইনিংস ও ৭৮ রানে চতুর্থ টেস্ট এবং এক টেস্ট বাকি থাকতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-১-এ জিতে নিল। কুকের তারুণ্যনির্ভর ইংল্যান্ডের কাছে পরাভূত, পর্যুদস্ত ক্লার্কের অভিজ্ঞ অস্ট্রেলিয়া।
স্টুয়ার্ট ব্রডের কীর্তিগড়া টেস্টে তুলির শেষ আঁচড় দিলেন মার্ক উড। লায়ন ছেড়ে দেয়া বল মনে করে সেটি টেনে আনলেন মিডল ও লেগ-স্টাম্পে। তার অনেক আগে, তৃতীয়দিনের খেলা শুরু করার সময়ই স্বাগতিকদের চেহারায় ফুটে ওঠে হাসি। সেই হাসি ছড়িয়ে পড়ে মাঠ থেকে ব্যালকনিতে।
অ্যাশেজ কাউকে আকাশে তুলে দেয়। কাউকে মাটিতে নামিয়ে আনে। কুক যদি হন প্রথম দলে, দ্বিতীয়টিতে ক্লার্ক। শেষেরজনের ক্যারিয়ারে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। অসি অধিনায়ক এটা উপলব্ধি করতে খুব বেশি সময় নেননি। ‘সময় ফুরিয়ে এসেছে আমার। এখনই সময় সরে দাঁড়ানোর’, বিধ্বস্ত সেনাপতি বলে দিনের আরেকটি সকরুণ হারের পর। উল্টোদিকে কুকের জীবনে এখন বসন্ত-বিলাস। তৃতীয় ইংল্যান্ড অধিনায়ক হিসেবে নিজেদের আঙিনায় দু’দুটি অ্যাশেজ জেতার গৌরব তাকে সুখী মানুষে পরিণত করেছে। ‘এরচেয়ে বেশি আমি আর খুশি হতে পারি না। অবিশ্বাস্য। আমি এই তরুণ দলটি নিয়ে গর্বিত’, উচ্ছ্বাস ঝরে পড়ে তার কণ্ঠে। পুরস্কার নিতে এসে দুই অধিনায়কের চোখই ভিজে যায়। একজনের চোখে আনন্দাশ্র“। আরেকজনের চোখ ছলছল বেদনায়।
সিরিজ এখন ৩-১ ইংল্যান্ডের পক্ষে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ ও সম্মান দুই-ই হারিয়ে পথ হারানো পথিক। অ্যাশেজ তাদের কাছে এখন ছাইভস্ম! রিক্ত-নিঃস্ব অসিরা তবু চাইবে ওভালে শেষ টেস্টে ক্লার্ককে যথাযথ বিদায় জানাতে। কুরুক্ষেত্রে পরাস্ত, পরাভূত সেনাপতি ব্যর্থতায় ন্যুব্জ হয়ে বিদায় নিচ্ছেন। রণাঙ্গন ছেড়ে যাওয়া দলপতির জন্য ঈষ্যৎ বেদনা-নিরাময় জয় হতে পারে উপযুক্ত পথ্য। ওভালে তারই সুলুক সন্ধানে নামবেন রজার্স, ওয়ার্নাররা।
এই টেস্টের সবচেয়ে বড় চরিত্র অতি অবশ্যই স্টুয়ার্ট ব্রড। ১৫ রানে আট উইকেট তাকে ইতিহাসের চৌকাঠে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আড়াই দিনেরও কম সময়ে পার্শ্বচরিত্র একাধিক। সেঞ্চুরিয়ান (১৩০) জো রুটের পর ডান-হাতি পেসার বেন স্টোকস। শেষ দৃশ্যে যিনি আবির্ভূত হলেন সুইংয়ের পসরা
সাজিয়ে। তার সেরা টেস্ট বোলিং ফিগার ২১-৮-৩৬-৬ অসি ব্যাটসম্যানদের টেকনিক ও টেম্পারমেন্টকে বিদ্রুপ করছে! শনিবার তৃতীয়দিন অস্ট্রেলিয়া
শুরু করে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪১/৭-এ। তখনও ৯০ রানে পিছিয়ে তারা। আগেরদিন চার উইকেট নিয়েছিলেন স্টোকস। তার আউটসুইঙ্গারে পরাস্ত হন তিনি অসি ব্যাটসম্যান। কাল নিজের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে মিচেল স্টার্ককে বড়শিতে গেঁথে ফেলেন স্টোকস। উডের ইয়র্কারে হ্যাজলউড বোল্ড হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার শেষ জুটি ক্রিজে। ভগস এই মাঠটা ভালো করে চেনেন নটিংহ্যামশায়ারে খেলার সুবাদে। তিন ঘণ্টায় পাওয়া ফিফটি (৫১*) তারই পুরস্কার কিনা কে জানে!
স্কোর কার্ড
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ৬০ (ক্লার্ক ১০, জনসন ১৩, অতিরিক্ত ১৪। ব্রড ৮/১৫)।
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ৩৯১/৯ ডিক্লেয়ার (কুক ৪৩, রুট ১০৩, বেয়ারস্টো ৭৪, মঈন আলী ৩৮। স্টার্ক ৬/১১১)।
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস
রান বল ৪ ৬
রজার্স ক রুট ব স্টোকস ৫২ ৮৩ ১০ ০
ওয়ার্নার ক ব্রড ব স্টোকস ৬৪ ৭৪ ৯ ২
স্মিথ ক স্টোকস ব ব্রড ৫ ৯ ১ ০
মার্শ ক রুট ব স্টোকস ২ ৬ ০ ০
ক্লার্ক ক বেল ব উড ১৩ ৩৭ ১ ০
ভগস নটআউট ৫১ ১১৮ ৭ ০
নেভিল এলবিডব্লু ব স্টোকস ১৭ ৫৭ ২ ০
জনসন ক কুক ব স্টোকস ৫ ১৬ ১ ০
স্টার্ক ক বেল ব স্টোকস ০ ১৭ ০ ০
হ্যাজলউড ব উড ০ ১০ ০ ০
লায়ন ব উড ৪ ১২ ১ ০
অতিরিক্ত ৪০
মোট (অলআউট ৭২.৪ ওভারে) ২৫৩
উইকেট পতন : ১/১১৩, ২/১৩০, ৩/১৩৬, ৪/১৩৬, ৫/১৭৪, ৬/২২৪, ৭/২৩৬, ৮/২৪২, ৯/২৪৩, ১০/২৫৩।
বোলিং : ব্রড ১৬-৫-৩৬-১, উড ১৭.৪-৩-৬৯-৩, ফিন ১২-৪-৪২-০, স্টোকস ২১-৮-৩৬-৬, মঈন আলী ৬-০-৩৪-০।
ফল : ইংল্যান্ড এক ইনিংস ও ৭৮ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : স্টুয়ার্ট ব্রড (ইংল্যান্ড)।
Leave a Reply