মহাসড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষার সময় গভর্নর সিল সংযোজন করা হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে, মহাসড়কে যানবাহনের গতিসীমা হবে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার। এ জন্য গাড়িতে ‘স্পিড গভর্নর’ নামের একটি যন্ত্র বসানো হবে। এই যন্ত্রে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকবে। গতিসীমা অতিক্রম করলেই গাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে। মোটরযান বিধিমালা মোতাবেক স্পিড গভর্নর সংযোজন, পরীক্ষা ও সিলমোহর দেওয়ার পদ্ধতি চালু করলে দুর্ঘটনা কমে যাবে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভায় তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে।
সভায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন বা বাইলেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কের টার্নিং পয়েন্টে বিভাজক নির্মাণ এবং চালকদের পাঁচ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৩০ মিনিট বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য আলাদা তদারক কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২২টি জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকরে আরো জোরদার ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরীতে ২০ লাখ অবৈধ রিকশা আছে। মেয়রদের প্রথমেই বিড়াল মারতে হবে। না হলে নির্বাচন বা বিভিন্ন অজুহাতে এগুলো করা হবে না। মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার হবে। রাস্তা দখলমুক্ত করা হবে, বিলবোর্ড তুলে নেওয়া হবে।
নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘আমাদের দেশের চালকরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়েও সাইন দেখে ভালোভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়ি চালাতে গেলে যে মেট্রিক পাস, বিএ পাস করতে হয় এ ধরনের ধারণা ঠিক নয়। আসলে আমাদের দেশে রোড সাইনের বোর্ড ছোট- এগুলো বড় করতে হবে, যাতে দৃশ্যমান হয়। ভুয়া লাইসেন্সধারীরা চিহ্নিত। দীর্ঘসূত্রতার জন্য অনেকে এ ধরনের লাইসেন্স নেয়।’
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, পরিবহন নেতা খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ, ওসমান আলী প্রমুখ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশেই গাড়ির গতিসীমা নির্ধারণে গভর্নর সিল সংযোজন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তা করা না হলে অপরাধীর তিন মাসের কারাদণ্ড বা এক হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। মোটরযান অধ্যাদেশের ১৫৮ ধারায় তা বলা আছে। তবে আইনে বাধ্যতামূলক হলেও এত দিন বিষয়টি সেভাবে মানা হয়নি।
বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক তালুকদার গতকাল সভার শেষ পর্যায়ে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে আগের গভর্নর সিল সংযোজনের প্রস্তাব রাখলে সভায় তা অনুমোদন করা হয়। সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক তালুকদার নিজের অভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ করে সভায় বলেন, ‘আমি আমাদের গাড়িচালকদের বাসের গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দিয়েছি। আগে এটি ছিল ১২০ কিলোমিটার। গতি নিয়ন্ত্রণে আনায় আমার কম্পানির গাড়িতে ৯৯ শতাংশ দুর্ঘটনা কমে গেছে।’
সভায় ঈদুল আজহার আগেই গাবতলীর ইউ লুপ চালু, আগারগাঁও, বনানী ও পঙ্গু হাসপাতালের সামনে পশুর হাট না বসানো, ভাঙ্গায় সেতুর গোড়ায় মাছের বাজার উচ্ছেদ, মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কের সব রাস্তা যান চলাচলের উপযোগী রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
Leave a Reply