বাংলাদেশে যে ক্রিকেটই মানুষকে দল-মতের ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে পারে, তার টাটকা উদাহরণ চোখের সামনেই আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান সেটিই দেখালেন। গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে নিজের বাসভবনে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরের অনিশ্চয়তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতেই উল্লেখ করলেন, ‘এমনকি বিএনপির পক্ষ থেকেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে যে দেশে কোনো জঙ্গি তৎপরতা নেই। এটা তো আমরা বাংলাদেশে চিন্তাই করতে পারি না। ক্রিকেটের মাধ্যমেই এমন একতা সম্ভব। সে জন্যই বলছি, এ দেশের মানুষ কখনোই অস্ট্রেলিয়া দলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার মতো কিছু ঘটতে দেবে না।’ ঢাকা ঘুরে যাওয়া ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) নিরাপত্তা প্রতিনিধিদলকে সর্বোচ্চ নিñিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। এরপরও ঢাকায় আততায়ীর গুলিতে এক ইতালিয়ানের নিহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সাধারণ নাগরিকদের এ দেশে চলাচলে সতর্কতা আরোপের নির্দেশ যোগ হয়ে হুট করেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে অনেকটা। আগের দিন যেখানে অস্ট্রেলিয়ার সফরের বিষয়ে প্রবল আশাবাদ শোনা গেছে, কাল সেখানে দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসনে অন্য রকম নীরবতা। আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও আগ্রহী হলেন না অনেকে। সন্ধ্যায় তাই সবাই বোর্ড সভাপতির শরণাপন্ন। কিন্তু সিএর তরফ থেকে কোনো জবাব আসার আগে তিনিও অপেক্ষায়। ততক্ষণে বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যম হয়ে অস্ট্রেলিয়ার শেষ পর্যন্ত সফর বাতিলের আশঙ্কার খবর চলে এসেছে তাঁর কানেও। তবে খবরটি আনুষ্ঠানিক নয় বলে ঢালাও কোনো মন্তব্যে যেতে চাইলেন না নাজমুল। অবশ্য এ কথাও বলে রাখতে ভুললেন না তিনি, ‘বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা যাঁরা দেখেন, তাঁদের সবার সঙ্গে মাত্র দেড় দিনের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে সিএর নিরাপত্তা প্রতিনিধিদলকে। প্রতিটি সংস্থার পক্ষ থেকেই নিশ্চয়তা দিয়ে বলা হয়েছে, কোনো গণ্ডগোল ঘটতে দেওয়া হবে না। তা যতই হুমকি থাকুক না কেন। সাধারণত যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তার চেয়েও অনেক বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যা চাও তা-ই দেওয়া হবে। আমরা যেটা দিচ্ছি, সেটা চার স্তরের নিরাপত্তা। এর চেয়ে বেশি আমাদের কিছু করার নেই। এরপরও যদি অস্ট্রেলিয়া না আসে, আমি অন্তত বিশ্বাস করব না যে ওরা নিরাপত্তার কারণেই আসছে না। ধরে নেব অন্য কোনো কারণ আছে।’
আন্তর্জাতিক কূটনীতির কঠিন কোনো কূটচালের ইঙ্গিতই কি নাজমুল দিলেন না? নিজে সংসদ সদস্য হলেও আপাতত ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোনো আলোচনায়ও নিজেকে জড়াতে চাইলেন না তিনি। তবে যে তথ্যের ভিত্তিতে সিএ সফর পিছিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে নিরাপত্তা উদ্বেগ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে দিল, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে বিসিবি সভাপতিরও, ‘ওরা যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সফর স্থগিত করার সিদ্ধান্তটি নিয়েছে, সেটাও ওরকম নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য নয়। আমরা এমনটিই জানতে পেরেছি।’ একই সঙ্গে সাধারণ পর্যটকদের জন্য সতর্কতা জারির ঘটনার সঙ্গে ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা গুলিয়ে ফেলার বিষয়টিও নাজমুলের মনে প্রশ্নের জম্ম দিয়েছে, ‘যে এলার্ট দিয়েছে, সেটা তো পর্যটকদের জন্য। তাঁদের সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে। ভালো কথা, এমন এলার্ট অনেক দেশেই দেওয়া হয়। কিন্তু ক্রিকেট দল এলে ক্রিকেটাররা তো আর একা একা ঘুরে বেড়াবে না। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়া তো তাদের পর্যটকদের দেশেও ফিরে যেতে বলেনি। সে রকম কিছু বলা হলে না হয় বুঝতাম যে বড় কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে। সেটিও তো নয়। শুধু বলা হয়েছে একটু সাবধানে থাকতে।’ সেই সঙ্গে বিসিবি প্রধান এও যোগ করেছেন, ‘হুমকি সব দেশেই আছে। যুক্তরাষ্ট্রে নেই? ওখানে তো আরো বেশি। ইউরোপের দেশগুলোতে নেই? সব দেশেই হুমকি আছে। যেকোনো জায়গায়ই হামলা হতে পারে। তবে বাংলাদেশে গত ১০ বছরে এমন কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি, যার কারণে একটি ক্রিকেট দলের সফরই বাতিল হয়ে যেতে পারে। সন্ত্রাসবাদকে নিশ্চিহ্ন করতে না পারলেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারার জন্য আমাদের সরকার বহির্বিশ্বে প্রশংসিতও হয়েছে। সুতরাং অনেক দেশের তুলনায় আমরা এ ক্ষেত্রে বেশ এগিয়েও আছি।’ যদিও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেও সফরের নিশ্চয়তা পায়নি বিসিবি। তাই আপাতত ইতিবাচক কিছুর আশায় অপেক্ষা নাজমুলের, ‘ওদের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ মনোযোগই দেওয়া হয়েছে। তাই ওদের না আসার কোনো কারণ নেই। আবার আসবেই না, এখন পর্যন্ত এটাও ওরা আমাদের বলেনি। কাজেই আমরা অপেক্ষা করছি। ওদের নিরাপত্তা প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আজ (গতকাল) দেশে পৌঁছানোর পর দুই দিন সময় লাগতে পারে বলেছে। ওদের উত্তর জানার পরই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
Leave a Reply