টিভি নাটকের জনপ্রিয় নাম চঞ্চল চৌধুরী। কমেডি, রোমান্টিক সব ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য দর্শকমহলে তুমুল আলোচিত তিনি। নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও রয়েছে তার সুখ্যাতি। বর্তমান ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আজকের ‘আলাপন’-এ কথা বলেছেন চঞ্চল। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মারুফ কিবরিয়া
এখন কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
ঈদের ছুটি কাটিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে নাটকের শুটিং শুরু করেছি। প্রচার চলতি নাটকগুলোর কাজে সময় দিচ্ছি এখন। নতুন কোন ধারাবাহিকে কাজ আপাতত করছি না।
সম্প্রতি ‘আয়নাবাজি’ ছবির শুটিং শেষ করেছেন। এ অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
এটা দারুণ এক অভিজ্ঞতা। শুরুতে বলি চলচ্চিত্রটির কথা। অসাধারণ একটি গল্প। খুব ভাল লেগেছে। যা আগেও বলেছি। আর শুটিং অভিজ্ঞতা? সেটা ছিল অসাধারণ। আমি চলচ্চিত্রে তো এর আগেও কাজ করেছি। এতটা ভাল টিম আর পাইনি। অমিতাভ রেজা অনেক গুণী একজন নির্মাতা। এটা সবারই জানা। তার সঙ্গে কাজ করে অনেক ভাল লেগেছে। খুব কো-অপারেটিভ একজন মানুষ তিনি। পাশাপাশি প্রধান চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান থেকে শুরু করে আয়নাবাজি’র পুরো টিম দারুণ সহযোগিতা করেছেন। আর তারা প্রত্যেকেই পেশাদার। আমি এটা দেখেই মুগ্ধ হয়েছি। সত্যিই, আমার দেখা সবচেয়ে ভাল একটি টিম এটি। গত মাসেই ছবির কাজ শেষ করেছি। সবমিলিয়ে আবারও বলবো, এমন একটি ইউনিটের সঙ্গে কাজ করাটা আমি অনেক উপভোগ করেছি।
এ ছবি নিয়ে প্রত্যাশা কতটুকু?
আমি তো এর আগেও চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। প্রত্যেকটি ছবির প্রতি আমার প্রত্যাশা ভিন্নরকম ছিল। ‘আয়নাবাজি’ নিয়ে শুরু থেকেই আমার মধ্যে অন্যরকম এক উচ্ছ্বাস কাজ করেছে। ছবির গল্প, কাজ সবই খুব খুব ভাল হয়েছে। তাই এ ছবিটি নিয়ে আমার প্রত্যাশা অনেক। বাকিটা দর্শকের কাছে।
দীর্ঘদিন ধরে নাটকে কাজ করছেন। এখনকার নাটক নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে নাটকে। কয়েক বছর আগেও নাটকের মান অনেক ভাল ছিল। দর্শক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যেত ভাল। কিন্তু এখন খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। খারাপ সময় যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। সত্যি বলতে নাটকের মান কমে গেছে।
ঠিক কি কারণে মনে হচ্ছে যে নাটকের মান কমে গেছে?
দেখুন এ কথাগুলো তো অনেক দিন ধরেই সবাই বলে আসছেন। আমি আমার জায়গা থেকে যদি বলি তাহলে বলব, নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে যে বাজেট থাকে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বাজেট কমার কারণে কাজটা খারাপ হয়। আর সেটাই স্বাভাবিক। তার মধ্যে একটি নাটক প্রচারকালীন বিজ্ঞাপন এত বেশি প্রচার হয় যে, দর্শক বিরক্ত হয়ে যান। আর এর ফলে তারা বিদেশী চ্যানেল তথা ভারতীয় সিরিয়ালের ওপর আকৃষ্ট হচ্ছেন। মূলত এসব সমস্যার কারণে টিভি নাটক এখন অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চলচ্চিত্র শিল্পে যেমন দিন দিন চরম দুরবস্থা তৈরি হয়েছে তেমনটা নাটকেও হয়ে গেছে প্রায়।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ কি বলে মনে করেন?
এখানে খুব বেশি বলার কিছু নেই। যেটা করতে হবে তা হলো- সবাই মিলে কাজ করতে হবে। আর যার যার প্রফেশনাল জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি যার কাজ যেটা তাকে সেটা করতে দিতে হবে। মূলত নাটকের বাজেটের পরিমাণ কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। বাজেট ভাল হলে ভাল গল্প আসবে, নির্মাণশৈলী ভাল হবে। আর শিল্পীরাও স্বস্তিতে কাজ করতে পারবেন। একটি নাটকের জন্য শিল্পীরা যে পারিশ্রমিক পান সেটা অনেক কম। বলতে পারেন আমরা শিল্পীরা অনেকটা সেক্রিফাইস করে কাজ করছি। আরেকটা ব্যাপার হলো টিভি নাটকে এখন যাচ্ছে তাই ব্যাপার ঘটছে। যেমন কিছু নির্মাতা শখের বশে নির্মাণে আসছেন। আবার কেউ হুট করে অভিনয়ে আসছেন তারকাখ্যাতি অর্জনের জন্য। তাদের কেউই পেশাদারিত্বের সঙ্গে মিডিয়ায় টিকে থাকার জন্য আসছেন না। এসব সমস্যার সমাধান করা গেলে টিভি নাটকে সুদিন ফিরে আসবে বলে আমি মনে করি।
ব্যক্তিগত জীবন কেমন কাটছে?
অনেক ভাল। আমার ছেলের বয়স সাত বছর। ওকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। আর আমার স্ত্রী ডাক্তারি পেশায় নিয়জিত। সবমিলিয়ে ব্যক্তিজীবনে আমি অনেক সুখী। সারাটা জীবন যেমন এভাবেই কাটাতে পারি সেজন্য সবাই দোয়া করবেন।
Leave a Reply