আসন্ন এশিয়া কাপ আর ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির প্রস্তুতির জন্য ঘটা করে মাঠে নামানো হয়েছে বিপিএল। যদিও আপাতদৃষ্টিতে আশার আলোর চেয়ে নিরাশার অন্ধকারই বেশি ভারী মনে হচ্ছে। টেকনিক্যালি দেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম তবু একটা ফিফটি করেছেন, তবে এ ফরম্যাটে যাঁদের ওপর বড় ভরসা দলের সেই লিটন কুমার, সাব্বির রহমানের অবস্থা করুণ। সৌম্য সরকারও বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছেন না বিপিএলে। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির জাতীয় অধিনায়ক মাশরাফি অবশ্য খুব একটা চিন্তিত নন, ‘টুর্নামেন্টটা ওদের ভালো যাচ্ছে না। তবে আমার বিশ্বাস জাতীয় দলের অভ্যস্ত পরিবেশে ফিরলে আবার আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে সবাই। সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, জাতীয় দল আর বিপিএল দুটি ভিন্ন ক্ষেত্র। বিপিএলে ব্যর্থ হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আত্মবিশ্বাস তো আর হারিয়ে যাবে না।’
মাশরাফির এ আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চেই দেখা যাবে। তবে তাঁর নিজের এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের শিরোপা জয়ের পথে একের পর এক বাধার দেয়াল কিন্তু উঠছে। অধিনায়ক নিজে ফিট নন, স্রেফ অনুপ্রেরণাদায়ী হিসেবে ফ্র্যাঞ্চাইজির অনুরোধে খেলে যাচ্ছেন। বিগ ব্যাশ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেলে কোয়ালিফায়ার খেলেই বাংলাদেশ ছাড়তে হবে অ্যান্দ্রে রাসেলকে। আটটা ইনজেকশন নিয়ে ফেলায় গতকালের ম্যাচে শোয়েব মালিককে খেলায়নি কুমিল্লা। পাকিস্তানি অলরাউন্ডারের জন্য অনুমোদিত সর্বোচ্চ দশটি বেদনানাশক ইনজেকশনের দুটি নকআউট পর্বের বাকি ম্যাচগুলোর জন্য তুলে রাখা হয়েছে। নুয়ান কুলাসেকারা আর অলক কাপালি সিলেটের বিপক্ষে খেলেছেন চোট নিয়েও। ইনজুরির তালিকা পড়তে পড়তে মাশরাফি নিজেও হাসেন, ‘আমাদের ফিজিও এ টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করছেন!’
অন্যরা দূরে থাক, একটা দল নিজেরাও ভাবেনি যে এত দূর যাওয়া যাবে। সেই ভিক্টোরিয়ানস কালকের জয়টি সেলিব্রেট করেছে পুল পর্বের সেরা হওয়ার মর্যাদা দিয়ে। অন্যদিকে খেলোয়াড় বাছাইয়ের পর অন্যতম ফেভারিট মনে করা হচ্ছিল সিলেট সুপারস্টারসকে। কিন্তু টুর্নামেন্ট যত এগিয়েছে, ততই দুর্দশার কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে দলটির। শেষ ম্যাচেও অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ। জস কব ও জুনায়েদ সিদ্দীকের উদ্বোধনী জুটি ভাঙতেই স্রোতের জলে ভেসে গেল সিলেট সুপারস্টারস। ঘর পোড়ার পর সিলেটে যোগ দেওয়া শহীদ আফ্রিদি বিপিএলের গত মৌসুমে খেলেছিলেন চ্যাম্পিয়ন দলে। এবার নিচের থেকে দ্বিতীয় ‘সেরা’ দলে! ভাগ্যের ওপিঠ দেখা আফ্রিদির ব্যাখ্যা, ‘পুরো টুর্নামেন্টে আমরা কার্যকর একটা কম্বিনেশন তৈরি করতে পারিনি। এটাই ব্যর্থতার কারণ।’
অথচ ভিক্টোরিয়ানসকে হারাতে পারলে রাতে অনুষ্ঠিত ঢাকা ডিনামাইটস-বরিশাল বুলস ম্যাচের ফল পক্ষে গেলে চার দলের খাতায় নাম লেখাতেও পারত সিলেট সুপারস্টারস। কিন্তু ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দলটির ক্রিকেটে সে মরিয়া ভাবটাই অনুপস্থিত। কেন? বিপিএলের ম্যাচকে ঘিরে এমন প্রশ্ন করলে কর্তাব্যক্তিরাই চমকে ওঠেন, ‘তার মানে কি ম্যাচটা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে?’ বিপিএল মৌসুম এলে মাঠে এবং মাঠের বাইরের সবাই একটা ব্যাপার ভুলে যান যে, খারাপ খেলা দলকে এ জাতীয় প্রশ্ন শুনতে হয়। সিলেট কাল আরো খারাপ খেলেছে বলেই প্রশ্নটা উঠছে। প্রমাণের আগে সব সন্দেহই একান্ত ব্যক্তিগত, যা বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টকে ঘিরে ছিল, আছে এবং থাকবেও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস : ২০ ওভারে ১৫০/৪ (ইমরুল ২৭, শেহজাদ ৪২, অলক ৩২*, জাইদি ৩১; শহীদ ১/১৮)। সিলেট সুপারস্টারস : ১৩.৫ ওভারে ৭৯/১০ (কব ২১, জুনায়েদ ১০; শুভাগত ৩/৮, জাইদি ২/৪, রাসেল ২/৯, আবু হায়দার ১/১৯)। ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ৭১ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : আহমেদ শেহজাদ।
Leave a Reply