বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলায় কথা বলে সবাই। দুই বাংলার মধ্যে তাই মৈত্রীর বন্ধন। বাংলাদেশ মাস্টার্স অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতায় তা দেখা গেল দু’দেশের সাবেক অ্যাথলেটদের মধ্যে। শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে দুই বাংলার সাবেক কৃতী অ্যাথলেটদের দু’দিনের প্রতিযোগিতা।দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল। মধ্য গগনের সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। পৌষের পড়ন্ত বিকেলে দেখা মিলল এপার-ওপার বাংলার সাবেক অ্যাথলেটদের। কেউ খেলা ছেড়েছেন অনেক আগে। কেউ এখনও অ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছেন নিজেকে কোচ বা সংগঠক হিসেবে। অনেকদিন পর আবার তারা প্রতিযোগিতায় নামলেন। দৌড়ালেন।
প্রথমবার বাংলাদেশে হচ্ছে এ প্রতিযোগিতা। এতে অংশ নিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় অর্ধশতাধিক সাবেক অ্যাথলেট এসেছেন ঢাকায়। স্বাগতিক বাংলাদেশের রয়েছেন প্রায় আড়াইশ’। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের লাল ট্র্যাক। এমন মিলনমেলায় এসে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মহিলা অ্যাথলেট নিভা দেয়াশী। ষাটোর্ধ্ব নিভা কথা বলার সময় কেঁদে ফেললেন, ‘বোঝাতে পারব না আমার অনুভূতিটা। জীবনের অনেক সময় পার করে এসেছি। এর আগে কখনও ঢাকায় আসিনি। অনেক শুনেছি ঢাকার কথা, বাংলাদেশের কথা। টেলিভিশনে দেখেছি এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা। কাছ থেকে সবাইকে দেখতে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। বাংলাদেশে এসেছি। ঢাকায় আছি। এ আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না। ২১ বছরের ক্যারিয়ারে সাফল্য পেয়েছি অনেক। কিন্তু আজকে (গতকাল) মাস্টার্স অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সাফল্য সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।’
পশ্চিমবঙ্গের রেলওয়ে থেকে অবসর নেয়া এই সাবেক ডিসকাস থ্রো অ্যাথলেট বলেন, ‘১৯৬৯ সালে একবার কলকাতার যুগান্তর পত্রিকায় আমার ছবি বেরিয়েছিল। তখন কী যে আনন্দ পেয়েছিলাম, তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমার বাসস্থান হাওড়ার সবাইকে আমি দেখিয়েছি সেই ছবি।’ নিভা দেয়াশীর সঙ্গে এসেছেন তন্দ্রা বসু। তিনি বলেন, ‘সেই সময়টা ছিল স্বপ্নের মতো। খেলেছি একসঙ্গে। আবার অবসরের পর এই মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্সে ঢাকায়ও এসেছি একসঙ্গে। এখানে এসে অনেক পরিচিত মুখ দেখছি। যাদের সঙ্গে একসময় খেলেছি।’ পশ্চিমবঙ্গের দুই ডিসকাস থ্রো অ্যাথলেটের সঙ্গে দেখা গেল বাংলাদেশের ডিসকাস থ্রো’র সাবেক রানী জ্যোৎস্না আফরোজকেও। ১৯৯৩ ঢাকা এসএ গেমসে ব্রোঞ্জপদক জিতেছিলেন তিনি। জ্যোৎস্না বলেন, ‘একসময় দেশের অ্যাথলেটিক্স অঙ্গন দাবড়িয়ে বেড়িয়েছি। অ্যাথলেটিক্সকে নিজের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছিলাম। যেখানেই খেলা হতো, সেখানেই গিয়েছি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য পেয়েছি অনেক। কিন্তু মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স সব সাফল্যকে ম্লান করে দিল। দীর্ঘদিন পর হলেও সমসাময়িক অ্যাথলেটদের দেখতে পেলাম। যারা এখনও এ খেলাটির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। এতে মানসিক যে প্রশান্তি পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। খুবই ভালো লাগছে, আবার অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে নামতে পেরে।
Leave a Reply