স্পিন অলরাউন্ডার আরাফাত সানি ও তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদের বোলিং অ্যাকশন সন্দেহজনক। আইসিসির এই সিদ্ধান্তের খবরটি বজ্রপাতের মতোই।
কিন্তু ভেঙে পড়ার বদলে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা ডাইরেক্ট অ্যাকশনের পথ বেছে নিয়েছেন। তারাও বিভিন্ন বোলারের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ছবিতে দেখানোর চেষ্টা করছেন আইসিসির ১৫ ডিগ্রি অ্যাংগেল আসলে কী, কার হাত কতটা অ্যাংগেল মেনে বল করে?
সানি ও তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে আইসিসি সিদ্ধান্ত জানালেও বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অভিযোগের তীর দাগছেন ক্রিকেটের তিন মোড়লের অন্যতম ভারতের দিকে। আইসিসিকে অনেকে ব্যঙ্গ করে ‘ইন্ডিয়ান চিটিং কাউন্সিল’ বলেও মন্তব্য করেছেন। এই এক ইস্যুতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন এখন রীতিমত উত্তপ্ত।
তাৎক্ষণিকভাবে আইসিসির এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের শ্রীলংকান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তিনি আইসিসির কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমি আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলিনি। তবে তাদের বিষয়টা ভাবনার তো বটেই। তারা আমার বোলারদের নিয়ে সংশয় জানিয়েছে; আমার সংশয় আছে তাদের (আইসিসি) ভূমিকা নিয়েও।’
বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটাররা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করছেন না। ভেতরে ভেতরে তারা যে ফুঁসছেন, তা কথা বলেই বোঝা গেছে। তবে বাংলাদেশের সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা ফেসবুকে আইসিসি ও ভারতকে ধুয়ে দিচ্ছেন।
আরাফাত সানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে নমনীয়তা দেখালেও তাসকিনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তারা মেনে নিতে প্রস্তুত নন। তাদের প্রশ্ন একটাই- তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ভারতের স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও নবাগত পেসার জসপ্রিত বুমরাহর অ্যাকশন নিয়ে কেন প্রশ্ন নয়?
ফেসবুকে অনেকেই তাসকিন, অশ্বিন ও বুমরাহর বোলিং অ্যাকশনের ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানে তারা দেখাতে চেয়েছেন- কার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা উচিৎ।
ছবিগুলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, তাসকিন আহমেদের বোলিং স্ট্রাইকের সন্দেহ হওয়ার মতো কোনো চিহ্ন নেই।
কিন্তু অশ্বিন ও বুমরাহর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে অনেক প্রশ্ন করা যায়। ভারতীয় এই দুই বোলের কনুইয়ের বাঁক অনেক বেশি। সেই তুলনায় তাসকিনের কনুইতে বাঁক নেই বললেই চলে।
নাসিম রূপক নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী পোস্ট দিয়েছেন, ক্রিকেট কোনো খেলা না, এটা একটা ব্যবসা। আর ব্যবসাটা তারা একাই করবে। আশেপাশের কাউকে ক্রিকেট শক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে দেয়া হবে না।তারেক মোর্তজা তার ফেসবুকে লিখেছেন, এক এক করে সব খেয়ে নেবার পর এবার আমাদের ক্রিকেট ঘিরে তাদের ষডযন্ত্র । এটাও খেয়ে নিতে চায় ইন্ডিয়া ।তাসকিন ও সানিকে নিয়ে খেলছে । এ খেলার জবাব দেবার বদলে বঙ্গীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান ষড়যন্ত্রের অংশ হচ্ছে । আসলে বঙ্গে মীর জাফরি রক্ত এখনও টিকে আছে । এটা সহজে যাবে না । আফসোস!
আবদুল্লাহ আল মামুন পোস্ট দিয়েছেন, তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ভারতের স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও নবাগত পেসার জসপ্রিত বুমরাহর অ্যাকশন নিয়ে কেন প্রশ্ন নয়?
জাহেদ আরমান নামের আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, কোথায় ইন্ডিয়ান চিটিং কাউন্সিল (আইসিসি)? এই সংস্থা শুধুমাত্র ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য গঠিত হয়েছে।
এরপর তিনি তাসকিন, বুমরাহ ও অশ্বিনের ছবি দিয়ে তাতে বোলিং অ্যাকশন মার্কিং করে শেম আইসিসিওয়াল্ডটি২০ ও শেমঅনআইসিসি হ্যাশ ট্যাগ দিয়ে লিখেছেন, কে প্রকৃত চাকার এবং কোনটি সোজা লাইন?
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেরদৌস আলম লিখেছেন, ‘হাথুরুসিংহে একজন ভিনদেশী হয়েও বাংলাদেশের জন্য যে স্টানবাজি করল, এক কথায় বাজিমাৎ! দুঃখ হয় আমাদের বিসিবির কোনো কর্মকর্তা এখনও একটা কথা না বলতে দেখে। এরা কি আসলেই মেরুদণ্ডী প্রাণি? ভয় হয় এ পরীক্ষাটা করতে আবার তারা না ইন্ডিয়া যায়!’
আমিনুল ইসলাম ‘আমাদের তাসকিন!’ শিরোনামে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আমি এই রিপোর্ট যখন পড়ছিলাম বার বার এশিয়া কাপের ফাইনালের কথা মনে পড়ছিল। ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইনআপ খাবি খাচ্ছিল তাসকিনের একেকটা আগুনের গোলাতে। অন্য বোলাররা যখন রান দিচ্ছিল, তাসকিনকে ওরা তখনও মারতে পারেনি। ঠিক এর পরের ম্যাচেই তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে আইসিসির সন্দেহ! বলি, তাসকিন তো এক বছরের উপরে হল বাংলাদেশের হয়ে খেলছে! এতদিন কেন সন্দেহ হল না? আর এমনও তো না তাসকিন তার বোলিং এর ধরন পরিবর্তন করেছে।
এরপরই তিনি লিখেছেন, বিষয় আসলে আর কিছু না, বাংলাদেশ পরের রাউন্ডে যেই গ্রুপে খেলবে সেই গ্রুপে ভারত আছে। আমাদের মুস্তাফিজ তখন ফেরত আসবে। মুস্তাফিজ আর তাসকিন যদি বল করে, ভারতের হেরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি! এর আগেও বিশ্বকাপে ভারত একবার বাংলাদেশের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল। সেইবার ধোনিসহ অনেক খেলোয়াড়ের বাসায় ঢিল ছুড়েছিল ভারতীয়রা। এইবার যদি আবার বাংলাদেশের কাছে হেরে বসে নিজ দেশে, তাহলে আর রক্ষে নেই। এই ভয়ে ভারতীয়রা তাসকিনসহ পুরো বাংলাদেশ দলের মনোবল আগে থেকে ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করছে।
তাসকিন, পুরো বাংলাদেশ তোমার সঙ্গে আছে। আমি নিশ্চিত এই পরীক্ষায় তুমি ভালোভাবেই পাশ করবে। ওরা তোমার মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। মাশরাফি নিশ্চয় তোমাকে আগলে রাখবে। ওরা জানে না, আমরা যুদ্ধ করে রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়া জাতি। আমরা জানি, দিন শেষে জয় আমাদেরই হবে, এভাবেই শেষ করেছেন আমিনুল ইসলাম।
মোহাম্মদ নূরুল করিম তার পোস্টে লিখেছেন, সৌম্য সরকার , সাব্বির রহমানের ব্যাটিং অ্যাকশন অবৈধ! সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং-বোলিং দুটিই সন্দেহজনক! মাশরাফির অধিনায়কত্ব অবৈধ! এই খবরগুলো আসতে কত দেরি?
Leave a Reply