দারুণ সময় পার করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মাশরাফি মুর্তজার নেতৃত্বে আসলে একের পর এক সাফল্য। আর মাশরাফি যাদের ওপর নির্ভর এ সাফল্য পাচ্ছেন, তাদের অন্যতম পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।
এখন পর্যন্ত বাম হাতি এই পেসারকে কোনো ব্যাটসম্যানই ঠিকমত পড়তে পারছেন না। তার কাটারে বোকা বনে উইকেট বিলিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যান।
সাতক্ষীরার এই বিস্ময় পেসারের সাফল্যে যুক্ত হল নতুন পালক। তিনি এবার বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন-ক্রিকইনফোর বর্ষসেরা অভিষিক্ত ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন।
এই ওয়েবসাইটটি ব্যবহারকারী ও জুরি বোর্ডের সদস্যদের ভোটে মুস্তাফিজ সেরা হয়েছেন। সোমবার এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে মুস্তাফিজ অভিষেকে সেরা হওয়ার দৌড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা, শ্রীলংকার দুষমন্ত চামিরা ও ইংল্যান্ডের মার্ক উডকে পেছনে ফেলেছেন।
ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে এক ক্যালেন্ডারে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে পারফর্মেন্সের ওপর ইএসপিএন-ক্রিকইনফো এই পুরস্কার দিয়ে থাকে। সাবেক ক্রিকেটার, কমেন্টেটরস এবং ওয়েবসাইটটির সিনিয়র লেখকরা জুরি বোর্ডের দায়িত্বে থাকেন।
এবার জুরি বোর্ডে ছিলেন গত বছরের বিজয়ী ক্রিকেটার, দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ডেইল স্টেইন, শ্রীলংকার পেসার লাসিথ মালিঙ্গা, অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিশেল জনসন, পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদি, শ্রীলংকার সাবেক অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারারমত তারকারা।
নবম বছরের মত ইএসপিএন-ক্রিকইনফো এই পুরস্কার নির্বাচন করে আসছে। এবারের জুরি বোর্ডে ছিলেন সাবেক ক্রিকেটার ইয়ান চ্যাপেল, মাহেলা জয়াবর্ধনে, জেফ ডুজন, কোর্টলি ওয়ালস, জন রাইট, মার্ক বাউচার ও মার্ক নিকোলস।
২০১৫ সালে অভিষেক হয় মুস্তাফিজুর রহমানের। এরপর এক ক্যালেন্ডার বছরে তিনি দুটি টেস্ট খেলে ১৪ দশমিক ৫০ গড়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। অভিষেকের পর ৯ ওয়ানডেতে ১২ দশমিক ৩৪ গড়ে পেয়েছেন ২৬ উইকেট। আর ৫টি টি ২০- তে ১৮ দশমিক ৬৬ গড়ে তুলে নিয়েছেন ৬ উইকেট।
প্রথম দুই ওয়ানডেতে মুস্তাফিজ ভারতের রোহিত শর্মা, সুরেশ রায়না, রবীন্দ্র জাদেজা, অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ও আজিঙ্কা রাহানেকে ফিরিয়ে ১১ উইকেট তুলে নেন। এর মধ্যে অভিষেকে নেন ৫, আর পরের ম্যাচে ৬ উইকেট।
মূলত তার কাটারে ভর করে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মত সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। সব মিলে তিন ফরমেটে মুস্তাফিজ ১৩ দশমিক ৬৩ গড়ে এ বছর ৩৬টি উইকেট পেয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুস্তাফিজের অভিষেক হয় গত বছরের এপ্রিলে, পাকিস্তানের বিপক্ষে টি ২০ দিয়ে। সেদিন আফ্রিদিদের তার বলে খাবি খেতে দেখা গেছে। বাংলাদেশও পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয় তুলে নেয়। জুলাইতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক হয় এই বাম হাতির।
২০১৫ সালে যে সব বোলার ৩০টির অধিক উইকেট নিয়েছেন, তাদের মধ্যে মুস্তাফিজের স্ট্রাইক রেট (১৯.৫) সবচেয়ে ভালো। যদিও তিনি মাত্র ১৬টি ম্যাচ খেলেছেন।
এছাড়া ইএসপিএন-ক্রিকইনফোর বর্ষসেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন। সেরার জন্য শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়েলিংটনে তার অপরাজিত ২৪২ রান বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
টেস্টে বর্ষসেরা বোলার নির্বাচিত হয়েছেন ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রড। টেন্ট্র ব্রিজে ১৫ রানে তার নেয়া ৮ উইকেটে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাসেজ জয় করে। বর্ষসেরার ক্ষেত্রে ব্রডের এই বোলিং বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের আরও দু’জন বর্ষসেরা হয়েছেন। এদের মধ্যে বর্ষসেরা অধিনায়ক হয়েছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩ রানে ৭ উইকেট নিয়ে বর্ষসেরা ওয়ানডে বোলার নির্বাচিত হয়েছেন পেসার টিম সাউদি।
ওয়ানডেতে বর্ষসেরা ব্যাটম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৪৪ বলে তার ১৪৯ রানের অতিমানবীয় ইনিংস এই সেরা নির্বাচনে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এ বছরই তিনি মাত্র ১৬ বলে দ্রততম অর্ধশতক, ৩১ বলে দ্রুততম শতক করেছেন।
এছাড়া সেরা টি ২০ ব্যাটসম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ভারতের রোহিত শর্মা। আর বোলার নির্বাচিত হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার ডেভিড ওয়াইসি।
ইএসপিন-ক্রিকইনফোর প্রধান সম্পাদক সম্বিত বল পুরস্কারের বিষয়ে বলেন, ‘ক্রিকেট দলীয় খেলা, এখানে জয়-পরাজয়কে বড় করে দেখা হয়। কিন্তু, স্মৃতিতে থাকে একটি ভালো ইনিংস কিংবা ভালো স্পেল। এখানে মাত্র ৬ জন বিজয়ী হয়েছেন, কিন্তু এই পুরস্কারের জন্য যারা মনোনীত তারা সবাই এর অংশীদার।’
Leave a Reply