অনেকেই শিশুকে নিয়ে ভ্রমণে যেতে ভয় পান। নানা বিপদ-আপদের আশঙ্কা কিংবা বাড়তি ঝামেলার কারণে শিশুকে নিয়ে ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়াকেই ভালো বলে মনে করেন তারা। যদিও শিশুকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ হতে পারে অনেক বেশি মানসিক চাপমুক্ত ও মজার অভিজ্ঞতা। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মেনে চললে শিশুকে নিয়ে ভ্রমণ হতে পারে অনেক সহজ। এ লেখায় তুলে ধরা হলো তেমন কিছু বিষয়। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে।
১. প্রয়োজনীয় বিষয়
শিশু যত বড় হবে ততই তার প্রয়োজনীয় জিনিসের সংখ্যা কমে আসবে। আর এ কারণে আপনার শিশু যদি খুব ছোট হয় তাহলে তার জন্য যেসব জিনিস প্রয়োজন হবে সে কিছুটা বড় হলে সেসব জিনিস প্রয়োজন হবে না। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সঠিকভাবে শিশুকে নিয়ে ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন। শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, প্রসাধনী, ওষুধ, বই ও খেলনা নিতে ভুলবেন না। এগুলো আগেই ব্যাগে তুলে রাখুন। তবে বাড়তি জিনিস ভ্রমণের সময় বোঝা হয়ে উঠতে পারে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে হালকা ও ছোট ছোট জিনিস সঙ্গে রাখুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাড়িতেই রেখে যান।
২. তাদের নিয়ে পরিকল্পনা করুন
কোন স্থানে ভ্রমণ করতে যাবেন, কী খাবেন এসব বিষয়ে শিশুর মতামত জিজ্ঞাসা করুন। এছাড়া যেখানে ভ্রমণে যাবেন সেখানে শিশুর জন্য দর্শনীয় জাদুঘর, পার্ক ইত্যাদিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করুন। তাদের আগ্রহকে মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। তারা যেন ভ্রমণ থেকে শিখতে পারে সেজন্য সচেষ্ট থাকুন।
৩. ভ্রমণকে করে তুলুন আনন্দময়
খেলাধুলা শিশুদের অত্যন্ত প্রিয়। তাই ভ্রমণে গিয়েও খেলাধুলার আগ্রহ বজায় রাখুন। এজন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আগে থেকেই নিয়ে নিন। শিশুর জন্য বল, ব্যাট কিংবা অন্যান্য খেলনা নিয়ে নিন। এগুলো ছাড়া নিজেও শিশুকে গল্প বলুন। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে নিন। শিশুর সঙ্গে থাকা বড়দের সবাইকেই এজন্য কিছুটা প্রস্তুতি নিতে হবে। মজার গল্প, গান ইত্যাদি শিশুকে দারুণ আনন্দ দেবে।
৪. বিভিন্ন মিডিয়ার সমাহার
শিশুরা যেন ভ্রমণে কোনোভাবে বিরক্তিবোধ না করে সেজন্য তাদের প্রিয় বই, সঙ্গীত, টিভি প্রোগ্রাম কিংবা মুভি নিয়ে নিন মোবাইল ফোন বা ট্যাবে। এছাড়া শিশুর জন্য মজার খাবার ও পানীয় নিতেও ভুলবেন না।
৫. প্রত্যেকের পৃথক চাহিদা
ভ্রমণে প্রত্যেক শিশুর জন্য আলাদাভাবে নজর রাখা প্রয়োজন। এজন্য তাদের বয়স অনুযায়ী খেলনা ও অন্যান্য উপকরণ রাখা প্রয়োজন। এছাড়া শুধু ছোটরাই নয়, বড়রাও ভ্রমণ করছে এ বিষয়টি মনে রাখতে হবে। এজন্য পরিকল্পনায় সবার জন্যই কিছু ব্যবস্থা রাখুন।
৬. তাদেরও সুযোগ দিন
শিশুর বয়স অনুযায়ী ভ্রমণের সময় কিছুটা সুযোগ দিন। যেমন ১২ বছর বয়সী শিশু যদি সাঁতার পারে তাহলে সাঁতার কাটতে পারে। আবার ১৬ বছর বয়সী শিশু নিজেই কিছুদূর ঘুরে দেখতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের কিছুটা সুযোগ ভ্রমণ থেকে শিক্ষা নিতে সহায়ক হবে।
৭. ঝামেলা মোকাবেলা করতে দিন
ভ্রমণে কিছু ঝামেলা হবে এটা যেমন সত্য তেমন এ ঝামেলাগুলো মোকাবেলা করতে গিয়ে অনেক বিষয় শেখা যায়, এটাও বাস্তবতা। আর এ বাস্তবতা থেকে শিশুরাও যেন শিখতে পারে, সেজন্য মনোযোগী হোন। বিভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে চলা, বহু ধরনের মানুষের সঙ্গে মেশা ইত্যাদি বিষয় শিশুদেরও শেখান।
৮. দূরত্ব কমান
বয়োঃসন্ধিকালে শিশু-কিশোরেরা বাবা-মায়ের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব রাখতেই পছন্দ করে। যদিও ভ্রমণের সময় তাদের এ দূরত্ব দূর করার সুযোগ তৈরি হয়। এক্ষেত্রে শিশুর সঙ্গে মজা করা, খেলা ও এ ধরনের হাসি-আনন্দের মাধ্যমে এ দূরত্ব কমানোর সুযোগ তৈরি হয়।
৯. গ্রহণ করুন
আপনার শিশু যদি ভ্রমণে নানা বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে তাহলে ধৈর্য হারাবেন না। তার এ বিষয়গুলোকে ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবেলা করুন এবং ভ্রমণের সুবিধা-অসুবিধার বিষয় মেনে নিতে সময় দিন। বিষয়টিকে সহজভাবে নিন।
১০. উৎসাহ দিন
শিশু যেন ভ্রমণের মজার বিষয়গুলো গ্রহণ করতে পারে সেজন্য উৎসাহ দিন। পারিবারিক ভ্রমণ শিশুর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে শিশু যে বিষয়গুলো শিখবে, তা তার সারা জীবনেও যেন কাজে লাগে সেজন্য মনোযোগী হোন। ভ্রমণে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি ভালো টিমওয়ার্ক যেন হয় সেজন্য নানা প্রশংসাসূচক বাক্য ব্যবহার করুন।
Leave a Reply