তাদের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। একে অন্যকে কখনও ছাড় দিয়ে কথা বলেন না। তীর্যক বাক্যে দিয়েগো ম্যারাডোনাই এগিয়ে। তবে আগ বাড়িয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করলেও উত্তর দিতে মোটে দেরি করেন না পেলে। কিন্তু মনে হচ্ছে সে তিক্ত সম্পর্কের বরফ গলতে যাচ্ছে। সম্প্রতি একে অপরকে বন্ধু বলে সম্বোধন করলেন তারা। বিষয়টি বিস্ময়কর মনে হলেও সত্য। ফুটবল ইতিহাসে সেরা দুই ফুটবলার তারা। আর এই সেরা হওয়া নিয়েই তাদের মধ্যে গ্যাঞ্জাম। ইতিহাসের সেরা ফুটবলার কে- তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। এটা নিয়ে একবার অনলাইনে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়। সেখানে জিতে যান আর্জেন্টিাইন কিংবদন্তি ম্যারাডোনা। কিন্তু বিশ্ব ফুটবল নিয়ংন্ত্রণকারী সংস্থা ফিফা সেটা মানতে নারাজ। তারা মনে করেন, ম্যারাডোনার তুলনায় পেলে আগের ফুটবলার হওয়ায় বর্তমান প্রজন্মের ভোটাররা পেলেকে তেমন মূল্যায়ন করতে পারেনি। সেরা ফুটবলার নির্বাচনে ভোট দেয়া অধিকাংশই পেলের খেলা দেখেননি বলে মনে করে ফিফা। শুধু ম্যারাডোনার খেলা দেখে তাকেই ভোট দিয়েছে। ফিফা এবার মোট ভোট ও বিচারকদের ভোটে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করে। সেখানে জিতে যান পেলে। বিষয়টি নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়। বাধ্য হয়ে ফিফা ম্যাগাজিন তাদের দু’জনকে যৌথভাবে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে নির্বাচন করেন। বিষয়টি নিয়ে পেলেকে অনেকবার খোঁচা দিয়েছেন ম্যারাডোনা। পেলে ফিফাকে প্রভাবিত করেএমন অবস্থার সৃষ্টি করেন বলে তার অভিযোগ। তা না হলে ম্যারাডোনা-ই সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় বলে দাবি তার। বিষয়টি নিয়ে ম্যারডোনে ‘মানসিক রোগী’ও বলেছেন পেলে। কিন্তু এই দুইজনের অবস্থা যেন এখন অনেক স্বাভাবিক। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের আগে ফ্রান্সের প্যারিসে এক প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করে ইউয়েফা ও সুইজারল্যান্ডের একটি ঘড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। সে প্রীতি ম্যাচে খেলেন সাবেক ‘বুড়ো’ খেলোয়াড়রা। খেলোয়াড়দের তালিকায় ছিলেন পেলে, ম্যারাডোনা, বেবেতা, ক্লারেন্স সিডর্ফ, ফারনানদো হিয়েরা ও হারনান ক্রেসপোর মতো ফুটবলাররা। ৩০ মিনিটের খেলায় মাঠে নামতে পারেননি পেলে। অস্ত্রপচার করায় মাঠে নামার মতো শরীরের অবস্থা ছিল না ৭৫ বছর বয়সী এ তারকার। ডাগআউটে বসে কোচের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তবে মাঠে বেশ খানিক্ষণ খেলেন ৫৫ বছর বয়সী ম্যারাডোনা। ম্যাচের আগে ও পরে পেলে ও ম্যারাডোনার মধ্যের আন্তরিকতা ছিল চোখে পড়ার মতো। একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। বন্ধু বলে সম্বোধন করেন একে অন্যকে। ম্যাচের আগে ম্যারাডোনা বলেন, ‘পেলেকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আমরা সবাই জানি- তিনি কী। সবসময় কী হয়ে থাকবেন সেটাও জানি। তার মতো আরও আইকন খেলোয়াড় আমাদের দরকার।’ অন্যদিকে ম্যারাডোনাকে বন্ধু বলে সম্বোধন করে পেলে বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুদ্বপূর্ণ বিষয় হলো- শান্তির বার্তা পৌঁছে দেয়া। এমন একটা সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমার বন্ধু ম্যারাডোনাকে ধন্যবাদ। আর এখানে যেসব খেলোয়াড়রা উপস্থিত হয়েছেন তারও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।’
Leave a Reply