শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :::
ডেইলি চিরন্তন অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য সিলেটসহ দেশ বিদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আগ্রহীরা ইমেইলে যোগাযোগ করুন
শিরোনাম ::
শিশু মুনতাহাকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করা হয়,গ্রেপ্তার ৪ রেকর্ড গড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ট্রাম্প ট্রাম্পকে সমর্থন জানালেন জো রোগান আবু সাঈদ হত্যা: বেরোবির ২ শিক্ষকসহ ৯ জন বহিষ্কার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নতুন চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা মজুমদার কোন শিক্ষায় বড় করছেন মেয়েকে, জানালেন ঐশ্বরিয়া বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্যাডেট ফোরামের ৬ষ্ট প্রতিষ্টা বার্ষিকী উদজাপন ‘মাজার ভাঙচুর করে সুন্নি জনতাকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না’ জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টার কঠোর বার্তা পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় বাংলাদেশের মেসির মাঠে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন মায়ামি কোচ বন্যায় আরো মৃত্যু, সবচেয়ে বেশি কুমিল্লায় প্রাথমিকের ‘শপথ বাক্য’ থেকে বাদ গেল বঙ্গবন্ধুর অংশ অন্তর্বর্তী সরকারে কে কোন দপ্তর পেলেন নোবেল বিজয়ী থেকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য উপদেষ্টা যারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার সিদ্ধান্ত ৪২ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ আশঙ্কা ছিল এ ধরনের একটা আঘাত আসবে : প্রধানমন্ত্রী
নথি গায়েব ও বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে ডিক্রি পরিবর্তন

নথি গায়েব ও বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে ডিক্রি পরিবর্তন

court-room-judge-verdict-scales-of-justice1_15906_1465673728বিচারকের স্বাক্ষর জাল ও ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে দুটি দেওয়ানি মামলার ডিক্রি পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা জেলা জজ আদালতে। এক্ষেত্রে মামলার মূল নথি গায়েব করা হয়েছে।
ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামানের নির্দেশে গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বেড়িয়ে এসেছে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য। আদালতের রেকর্ড রুমের অব্যবস্থাপনা ও অসৎ কর্মচারীদের সহযোগিতায় এ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের জালিয়াতি রোধে রেকর্ডপত্র ফটোকপির অনুমতি না দেয়া, রেকর্ড রুমে উমেদারদের কাজ করতে না দেয়া এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করাসহ আট দফা সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। অন্যথায় বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে।
সূত্র জানায়, জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামানের কাছে ১৩ এপ্রিল রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার তেজতুরী বাজার চকলেন এলাকার (সাং-৪৪/এফ/৪/এ) মো. শহীদুল্লাহ একটি নালিশি অভিযোগ করেন। তিনি দেওয়ানি ০৬/২০১৬ নম্বর মামলার একজন বিবাদী। তার অভিযোগ, এ মামলার (দেওয়ানি ০৬/২০১৬) বাদীপক্ষ সুফিয়া বেগম, আসাদুজ্জামান (মানিক) ও শহীদুল্লাহ আবদুল মজিদ। তারা জেলা জজ আদালতের কতিপয় কর্মচারীর যোগসাজশে দুটি মামলার (দেওয়ানি ৪৫৫/১৯৮০ ও ৫৫০/১৯৮৫, বাদী আমেনা খাতুন) আরজি ও যাবতীয় কাগজপত্র মূল নথি থেকে সরিয়ে ভুয়া কাগজপত্র উপস্থাপন করে রায় ডিক্রি পেয়েছেন। উল্লেখ্য, দেওয়ানি ০৬/২০১৬ নম্বর মামলার বাদীপক্ষ আমেনা খাতুনের ওয়ারিশ।
আরও জানা গেছে, ১৯৮৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর উলন মৌজায় ১০ শতাংশ সম্পত্তি নিয়ে করা মামলার (দেওয়ানি ৪৫৫/১৯৮০) রায় ডিক্রি পান আলহাজ মো. আবদুল হাফিজ। ওই ডিক্রিবলে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আবদুল হাফিজের ওয়ারিশদের কাছ থেকে অভিযোগকারী মো. শহীদুল্লাহসহ তিনজন ওই সম্পত্তি ক্রয় (দলিল নম্বর ৬৭০৫) করেন। কিন্তু আলহাজ মো. আবদুল হাফিজের নামের সঙ্গে আরও নাম যুক্ত করে আরজি পরিবর্তনের মাধ্যমে ডিক্রি হাসিল করার অভিযোগ করা হয় মামলার (দেওয়ানি ০৬/২০১৬) বাদীপক্ষের  বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে বাদীপক্ষ ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে। মো. শহীদুল্লাহর এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ এপ্রিল একজন যুগ্ম জেলা জজ ও একজন সিনিয়র সহকারী জজের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় পৌনে দুই মাস তদন্ত শেষে কমিটি মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তবে তদন্তে জালিয়াতির বিষয় প্রমাণ হলেও ঘটনাটি কোন সময়ে সংঘটিত হয়েছে এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা বের করতে অভিযোগটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে একজন অতিরিক্ত জেলা জজকে দায়িত্ব দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেওয়ানি ৪৫৫/১৯৮০ নম্বর মামলার আরজি, দেওয়ানি ৫৫০/১৯৮৫ নম্বর মামলার আরজি, ৩৫ নম্বর আদেশ এবং ডিক্রি সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে নিষ্পত্তির পর সংযুক্ত করে সৃষ্টি করা হয়েছে, যা রেকর্ড রুমের অব্যবস্থাপনা ও অসৎ কর্মচারীদের সহযোগিতায় হয়েছে বলে প্রমাণ হয়। তবে কোন সময়ে ওই জালিয়াতি হয়েছে, তা তদন্তকালে বের করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনার সঙ্গে ১ম সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তাও জড়িত। কেননা স্যুট রেজিস্ট্রার এবং ফাইলিং রেজিস্ট্রারও একইভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে, যা ওই আদালতেই ছিল। এছাড়া যেহেতু ৬/২০১৬ নম্বর মামলার বাদীপক্ষ আদালতে দেওয়ানি ৪৫৫/১৯৮০ ও ৫৫০/১৯৮৫ নম্বর মামলার রায় ডিক্রির জাবেদা নকল উপস্থাপন করেছেন। সেহেতু কোনোভাবেই তারা নথি জালিয়াতির দায় এড়াতে পারবেন না।’
যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঢাকা জেলা জজ আদালতের রেকর্ড রুম এবং ১ম সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তায় প্রবেশপথে কোনো বাধা নেই। সবাই নির্বিঘ্নে সেখানে প্রবেশ করছে। রেকর্ড রুম পর্যবেক্ষণে নেই সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা। এসব স্থানে আদালতের কর্মচারীদের পাশাপাশি উমেদারদের কাজ করতে দেখা গেছে। এছাড়া আদালত চত্বরেরই রয়েছে ফটোকপি করার অসংখ্যা দোকান। অনুমতি দেয়া না হলেও সেখানে বিভিন্ন মামলার মূল নথি আনা-নেয়া করে ফটোকপি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা জজ আদালতের রেকর্ডকিপার মিল্টন সরকার যুগান্তরকে বলেন, রকর্ডরুমের স্টাফরা (আদালতের কর্মচারী) ভালো। তবে ভালোর তো আর শেষ নেই। আবার কখন কার মন পাল্টে যায়, তা তো বলা যায় না। যত সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হোক না কেন ব্যক্তি (কর্মচারী) সৎ না হলে কোনো লাভ নেই। এ রেকর্ড রুমে কোনো উমেদার কাজ করে না বলে দাবি করেন তিনি।
জানতে চাইলে ১ম সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তাদার তাহমিনা আক্তার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার জানামতে, এ আদালতের সেরেস্তায় কোনো কর্মচারী জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নয়। এছাড়া এ সেরেস্তায় কোনো উমেদার কাজ করে না।’
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘মামলার নথিপত্র আদালত থেকে হারিয়ে গেলে বা উধাও হয়ে গেলে বিচারব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। কাজেই আস্থা যেন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় না পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তদন্তে যাদের চিহ্নিত করা গেছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এতে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের কাছে একটা মেসেজ যাবে যে, অপরাধ করলে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। জড়িতদের যথাযথ শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে এ ধরনের জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব।’
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আবু আবদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ‘আদালতের রেকর্ড রুমে সবার অহরহ প্রবেশ ও রেকর্ডপত্র ফটোকপির মতো ঘটনা ঘটতে থাকলে এ ধরনের জালিয়াতির শংকা থেকেই যাবে। রেকর্ড রুমে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া ঠিক নয়। রেকর্ড কোনোভাবেই আদালতের বাইরে আনা যাবে না- এটা অন্যায়। অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা আরও বের হয়ে আসতে পারে।’
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেওয়ানি ৫৫০/১৯৮৫ নম্বর মামলায় আইনজীবী গোলাম আরশেদের নাম থাকলেও স্বাক্ষরটি তার নয় বলে তিনি জবানবন্দি দেন। এ মামলার ৩৫ নম্বর আদেশে তিন ধরনের হাতের লেখা বিদ্যমান, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ মামলার আদেশের দিন বিচারকের স্বাক্ষরের সঙ্গে একই বিচারকের একদিন আগের অন্য মামলার আদেশে স্বাক্ষরের সঙ্গে মিল নেই। জাল নথিতে জবানবন্দি থাকলেও মূল নথিতে ছিল না। অপরদিকে দেওয়ানি ৪৫৫/১৯৮০ নম্বর মামলার নথিতে কোনো ডিক্রি পাওয়া যায়নি। ১ম শ্রেণীর নথি হওয়া সত্ত্বেও শুধু অর্ডারশিট এবং আরজি ছাড়া অন্য কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। ১৯৮০ সালের ১৯ জুন মামলার প্রতিবেদনে যে সেরেস্তাদার স্বাক্ষর প্রদান করেন তার পরের দিনের অন্য দেওয়ানি মামলায় সেরেস্তাদারের স্বাক্ষর সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং দুটি নথির হাতের লেখাও আলাদা। অর্থাৎ দুটি নথি স্বাক্ষরেরও কোনো মিল নেই। এছাড়া বিচারকের আগের ও পরের স্বাক্ষরের সঙ্গে মিল নেই। তদন্তকালে ৫৫০/১৯৮৫ নম্বর দেওয়ানি মামলার ফাইলিং রেজিস্ট্রার পাওয়া গেলেও ৪৫৫/১৯৮০ নম্বর মামলার ফাইলিং রেজিস্ট্রার খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সংবাদটি ভালো লাগলে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

November 2024
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  



© All rights reserved © dailychironton.com
Design BY Web Nest BD
ThemesBazar-Jowfhowo