জঙ্গি দমন ও সন্ত্রাসবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের দ্বিতীয় দিন ঢাকাসহ অন্তত ৪৮ জেলায় প্রায় দুই হাজার লোককে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত তাদের আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুরু করা এই অভিযানের প্রথম দিন আটক করা হয়েছিল এক হাজারের বেশি।
তবে পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ১৫৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশের দাবি অনুযায়ী, ১২ জেলায় ধরা পড়েছে জামা’আতুল মুজাজিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ৩৭ সদস্য। এ ছাড়া এই অভিযানে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ১৬৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা নাশকতার মামলা ও নাশকতা সৃষ্টির সন্দেহভাজন এবং মাদক ও অন্য মামলার আসামি।
গত রবিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত জঙ্গি কায়দায় হামলায় নিহত হয়েছে চারজন। চট্টগ্রামে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু, নাটোরে খ্রিস্টান ব্যবসায়ী, সুনীল গোমেজ, ঝিনাইদহে পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী ও পাবনায় আশ্রমের সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পাণ্ডে খুন হন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এ সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, সন্দেহভাজন জঙ্গিদের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের তালিকা ধরে এই অভিযান চালানো হচ্ছে।
এ অবস্থায় গত সোমবার রাত থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ১১ জন।
তাদের মধ্যে পাঁচজনই জেএমবি সদস্য এবং তারা বিভিন্ন হামলায় জড়িত ছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ।
বিস্তারিত আমাদের আঞ্চলিক অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে—
১২ জেলা থেকে ৩৭ জেএমবি সদস্য আটক : জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার ১২ জেলা থেকে ৩৭ জেএমবি ও জেএমজেবি সদস্য আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে রাজশাহী থেকে ১৩ জেএমবি সদস্যকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর মধ্যে পবা থেকে মোজাম্মেল হক (৪৫), চারঘাট থেকে আবদুল ওরফে লালন (৩২) নামে দুই জেএমবি সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া বাঘা থেকে চার ও বাগমারা পাঁচজন জেএমবি সদস্যকে আটক করা হয়।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই এলাকা থেকে এক জেএমবিকে আটক করা হয়। শেরপুরে জেএমবি সদস্য সন্দেহে তিনজনসহ আটক করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর থেকে অস্ত্র ও গানপাউডারসহ তিন জেএমবি সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর থেকে এক জেএমবি সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তার নাম মফিজ উদ্দিন (৩২)। সিরাজগঞ্জ থেকে একজন, বগুড়া থেকে ১১ জন, নড়াইল থেকে একজন, দিনাজপুর থেকে দুইজন, গাইবান্ধা থেকে একজন, কুড়িগ্রাম থেকে দুইজন ও ঢাকা থেকে তিন জেএমবি সদস্যকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
১৯ জেলায় জামায়ত-বিএনপির ১৬৯ জন আটক : চট্টগ্রাম থেকে জামায়াত-শিবিরের সাতজনকে আটক করা হয়েছে। ময়মনসিংহ রামপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আনিসুর রহমানসহ শিবির সন্দেহে ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি জেনারেল মজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নীলফামারী থেকে জামায়াত-শিবিরের ১৩ কর্মীকে আটক করা হযেছে। সুনামগঞ্জ থেকে চার শিবির নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।
সিরাজগঞ্জ থেকে ১১ বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। হবিগঞ্জ জেলার জামায়াতের সাবেক আমির অ্যাডভোকেট আবদুস সহিদকে আটক করেছে পুলিশ। কুষ্টিয়ায় পুলিশের যৌথ অভিযানে ১৫ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী আটক হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউপি জামায়াতের আমির আবদুল বারী, আমবাড়িয়া ইউপি জামায়াতের সভাপতি আবদুর রব, একই ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সায়েম, অর্থ সম্পাদক আবদুর রহমান ও মিরপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াত সদস্য ছানোয়ার হোসেন।
মানিকগঞ্জে জামায়াত ও বিএনপির সাত নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। নেত্রকোনা থেকে ১৫ জন বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে বিশেষ অভিযানে নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমেদ (৫০) এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা জামায়াতের সাবেক আমির আব্দুল বাকিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বগুড়ায় বন্ধু ফান্ড বাইতুলমাল নামের নতুন একটি সংগঠনের সমন্বয়কারীসহ ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ২১টি জিহাদি বই ও চারটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। রংপুরের পীরগাছা থেকে এক জামায়াত কর্মীকে আটক করা হয়েছে। চাঁদপুর থেকে জামায়াত-শিবিরের ২০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা জামায়াতের আমির মাজেদুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। যশোরে অভিযান চালিয়ে ১১ জামায়াত-শিবির নেতাকে আটক করা হয়েছে। সিলেটে জামায়াত-শিবিরের ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। বরিশালে জামায়াত-শিবিরের ৩২ জনকে আটক করা হয়েছে। খুলনার ডুমুরিয়ার ওয়ার্ড জামায়াতের নেতা নেজার সরদার ও শওকত আলীসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
জামালপুর শহর জামায়াতের আমির জিয়াউল কবির ও সেক্রেটারি সুলতান মাহমুদকে আটক করেছে পুলিশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন নাশকতা মামলার আসামি ২১ জন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজধানীসহ ৩৫ জেলায় আটক আরো ১৭৯২ জন : জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে দ্বিতীয় দিন নিয়মিত মামলা, মাদক কারবারি ও নাশকতা চেষ্টার সন্দেহভাজন হিসেবে গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ১৭৯২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৬৭ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা মাদক কারবারি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৭৬ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় ২৭৬ জন ও নগরে ১০০ জন রয়েছে। এ সময় দুটি রাইফেল, দুটি এলজি ও আট রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। আটকরা জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামিও রয়েছে।
সিলেটে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে। বরিশালে বিভিন্ন মামলায় ৩২ জনকে আটক করা হয়। খুলনার থেকে আটক করা হয়েছে ১৯৪ জনকে। রাজশাহী থেকে আটক হয় ১৫০ জন। এর মধ্যে ৯ থানায় আটক রয়েছে ১০১ জন। আটকৃতদের মধ্যে অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিও রয়েছে। রংপুর থেকে ১১৭ জনকে আটক করা হয়েছে।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে অভিযানে জামালপুর থেকে ৩৯ জনকে আটক হয়। পিরোজপুর উপজেলায় আটক হয় ২৪ জন। টাঙ্গাইল থেকে আটক করা হয়েছে ৫৬ জনকে। শেরপুরে থেকে একজনকে আটক করা হয়। গাজীপুর থেকে ৭৯ জনকে আটক করা হয়। নীলফারীতে ২৪ ও সুনামগঞ্জ থেকে ২৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নিয়মিত মামলার ৫২ আসামিকে আটক করা হয়েছে। হবিগঞ্জে বিভিন্ন মামলার ২৮ আসামিকে আটক করা হয়। কুষ্টিয়ায় বিভিন্ন মামলায় ৪৬ আসামিকে আটক করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জে আটক হয়েছে ৩৩ জন। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও সোনারগাঁ থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। রাজবাড়ীর পাঁচ থানা থেকে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে পাংশায় অস্ত্রসহ দক্ষিণাঞ্চলের চরমপন্থী সংগঠন মোয়াজ্জেম বাহিনীর একজন সক্রিয় সদস্য রফিক মল্লিককে আটক করা হয়েছে।
মাদারীপুর থেকে ৩৬ জন, গাইবান্ধা থেকে ২৪ জন, রাজবাড়ী থেকে চারজনকে আটক করা হয়েছে। নাটোরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। সাতক্ষীরায় ৩৫, মেহেরপুরে ২০ ও লক্ষ্মীপুর থেকে ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে সাজাপ্রাপ্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলার রামাইল থেকে দুই ডাকাতকে আটক করা হয়। বাঞ্ছারামপুর থেকে ৭১ জনকে আটক করা হয়েছে। যশোরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৯০ জনকে আটক করা হয়। মণিরামপুরে নিয়মিত মামলার ১২ আসামিকে আটক করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ থেকে ২১, চুয়াডাঙ্গা থেকে ৯, ফরিদপুর থেকে ৬১ ও দিনাজপুর থেকে ৬৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
Leave a Reply