দেশে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন বা তিন হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানের এ মজুদ দিয়ে প্রায় আট মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
এর আগে গত এপ্রিলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২৯ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সমকালকে বলেন, সময়োপযোগী বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ ব্যবস্থাপনার কারণে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যের দাম কম থাকায় পরিমাণের দিক দিয়ে আমদানি বাড়লেও বৈদেশিক মুদ্রার তুলনামূলক ব্যয় কম হচ্ছে। পাশাপাশি এবার রফতানিতেও ভালো প্রবৃদ্ধি আছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নতুন এ মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরি নিয়ে বিশ্বব্যাপী হইচইয়ের মধ্যে এর আগে গত ২৫ এপ্রিল ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। তার আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
এক বছর আগে গত বছরের জুন শেষে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত এক বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ৫ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়েছে। রিজার্ভের দিক দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়। প্রথম অবস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ ৩২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, সরবরাহ অনুযায়ী বাজারে ডলারের চাহিদা না থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনছে। চলতি অর্থবছরে মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩২০ কোটি ডলার কেনা হয়েছে। আগের অর্থবছরের পুরো সময়ে কেনা হয় ৩৪০ কোটি ডলার। মূলত আমদানি ব্যয় কম থাকায় বাজারে উদ্বৃত্ত হওয়া ডলার কিনতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এছাড়া বেসরকারি খাতের অনেক উদ্যোক্তা বিদেশি ঋণ নিয়ে আমদানি ব্যয় মেটাচ্ছেন। সব মিলিয়ে সামনের দিনে আরও ডলার কিনতে হতে পারে। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বাড়বে।
গত ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির পর বিষয়টি নিয়ে সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিইউয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনা সারা বিশ্বের ব্যাংক খাতকে নাড়া দিয়েছে। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলংকায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত আসলেও ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফেরত আসেনি। রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ ফেরত না আসা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতে এটিকে ‘অন্য সম্পদ’ হিসেবে দেখানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
Leave a Reply