মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও এসএম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কমিটি এক বছর পূর্তি হলো গতকাল মঙ্গলবার। গত বছর ২৬ জুলাই সারাদেশের ছাত্রলীগ নেতাদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এই দুইজন নির্বাচিত হন। এক বছর পূর্তি উপলক্ষে কেমন ছিল গত এক বছরে সোহাগ-জাকিরের নেতৃত্ব। অর্জন ও ব্যর্থতার বিশ্লেষণ চলছে কেন্দ্রীয়সহ জেলা-উপজেলাসহ সকল ইউনিটির ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন সাবেক ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারাও।
গত এক বছরে সোহাগ-জাকির কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২৬টি সাংগঠনিক ইউনিটিতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশ ইউনিটও রয়েছে। এছাড়া অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত ছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কর্মসূচি শেষে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে হাত দেন দুই শীর্ষ নেতৃত্ব। দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে পরিশ্রমী, যোগ্য, মেধাবী, ছাত্রত্ব আছে এমন কর্মীদেরকে স্থান দেওয়া হয়। তবে পদ বঞ্চিতদের অভিযোগ ছিল কমিটিতে অযোগ্যদেরও স্থান দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, সোহাগ-জাকির দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ৪০দিনব্যাপী সিরিজ কর্মসূচি হাতে নেয়। মাসব্যাপী শোক দিবসের আলোচনা সভা ও বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে নানা প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় শোকাবহ আগস্ট। এছাড়াও ২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলা দিবস, শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপন, জেলহত্যা দিবস, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, জাতীয় শহীদ দিবস, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করে।
অন্যদিকে, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, খেলাধুলার মতো জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিও পালিত হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিতরণ এবং ছিন্নমূল শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ শিক্ষার্থে আগত নবীন ছাত্র-ছাত্রী বন্ধুদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হয়।
এছাড়াও সারাদেশে ছাত্রলীগের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে গত ১২ ও ১৩ জুন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে ‘বর্ধিত সভা ও কর্মশালা’র আয়োজন করা হয়। সারাদেশ থেকে আগত বিভিন্ন ইউনিটের ছাত্রনেতারা অংশগ্রহণ করে। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ এবং শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে জঙ্গি হামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় নতুন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি উন্মুক্ত করার বিষয়টি সামনে নিয়েছে এসেছে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানায় ছাত্রলীগ। এতে সাড়া দেন স্থানীয় ছাত্রলীগ। সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাও যে ছিল না, তাও নয়। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও যে কম ছিল, তাও নয়। যা কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডকে বিব্রতও করেছে।
বর্তমান নেতৃত্ব দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কতগুলো সাংগঠনিক ইউনিটে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে সংগঠনের দফতর সম্পাদক দেলোয়ার শাহাজাদা বলেন, বর্তমান নেতৃত্ব দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বেশ কিছু ও বিদেশ ইউনিট ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে অন্যতম খাগড়াড়ি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঠাকুরগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, রংপুর মহানগর, নওগাঁ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর, বাঙলা কলেজ, ঢাকা চিকিত্সা বিজ্ঞান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এবং আন্তর্জাতিক ইউনিটসমূহের মধ্যে সিঙ্গাপুর, জার্মানি, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া শাখার কমিটি করা হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সবগুলো ইউনিটের কমিটি করা হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন বলেন, ”বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শুধুমাত্র ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগঠন নয়। ছাত্রলীগ এদেশের সকল মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম। এটা প্রমাণিত। এরই মধ্যে দেখতে দেখতে কেটে গেছে দায়িত্ব পাওয়ার একটি বছর। বিগত একটি বছর থেকে শিক্ষা নিয়েছি অনেক। চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে, দেশব্যাপী ছাত্র রাজনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করতে। এসব কাজে কতটুকু সফল হয়েছি, সেটি বিবেচনার দায়িত্ব সারাদেশের ছাত্রসমাজের ও নেতাকর্মীদের।”
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ”বর্তমান ছাত্রলীগ অধিক সচেতন, কোথাও কোন স্থানে ছাত্রলীগের কোন কর্মী অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে পড়ল তা কঠোর হস্তে দমন করা হচ্ছে। কোন অপরাধীর স্থান বর্তমানে ছাত্রলীগে নেই। আমাদের লক্ষ্য শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসাবে পাশে থাকা। বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা করা। সেই লক্ষ্যেই মুজিব আদর্শকে বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতেই প্রতিটা সাংগঠনিক ইউনিটে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। যেখানে কমিটি নেই, সেখানে দ্রুত কমিটি করা হবে, যেখানে আংশিক আছে তা পূর্ণাঙ্গ করা হবে।”
Leave a Reply