সম্প্রতি জঙ্গিদলগুলোতে শিক্ষিত তরুণদের যুক্ত হওয়া নিয়ে তোলপাড় চলছে সারাদেশে। আতঙ্কে আছেন অভিভাবকগন। নিজের সন্তানও এমন নয় তো? আপনার সন্তানও কোন নিরীহ মানুষের প্রাণ নিচ্ছে না তো? এসব ঘটনায় মা-বাবার সন্তানপালনের ধরন নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে৷ বয়ঃসন্ধির মুহূর্তে সন্তানের কোন কোন বিষয়ের উপর খেয়াল রাখতে হবে, কোন ক্ষেত্রে জোর করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই খেয়াল রাখতে হবে কিছু মূল বিষয়৷
লক্ষণ দেখে সতর্ক হোন:
সন্তানের ব্যবহারের মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখা দিচ্ছে কি না খেয়াল করুন. কোন কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন :
আড়ালে চ্যাট করা, ফোনে দীর্ঘক্ষণ ও ঘনঘন কথা বলা, সারাদিন বারবার অনলাইন থাকা, বাড়িতে নিজেকে গুটিয়ে রাখা অথচ ফোনে আড্ডা দেওয়া, অজানা বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করা, বাড়ির খাবার ফেলে প্রায়ই বাইরে পার্টি-পিকনিক করার মতো লক্ষণ ব্যবহারে দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে.
নানা উছিলায় টাকা চাওয়া, বন্ধুর অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে তার বাড়িতে যাতায়াত-আড্ডা, পড়াশোনায় হঠাৎ অমনোযোগী ও রেজাল্ট খারাপ হওয়া, বাড়ির সবার সঙ্গে বদমেজাজ, দুর্ব্যবহার ও চিৎকার-চেঁচামেচি করা৷ সবকিছু অমান্য করার ঝোঁক, অনুভূতিপ্রবণ মনটা হঠাৎ যেন বিগড়ে যাওয়া, রাত করে ঘুমাতে যাওয়া আর সকালে দেরি করে ওঠা৷
পড়াশোনা, কেরিয়ার বাদ দিয়ে ঝোঁক বেশি বিসদৃশ সাজগোজে, এলোমেলো ভাবনা ও লাইফস্টাইল৷ স্কুলে কোনও সমস্যা থাকলেও বাড়িতে চুপচাপ থাকতে পারে৷ শেয়ার করতে বলুন৷
নজরদারি রাখতে কী করবেন:
বাচ্চাকে যেমন সব সময় চোখে চোখে রাখতে হয়, টিনএজার সন্তানের ক্ষেত্রে তেমন করার দরকার নেই৷ তবে জানতে চান কার সঙ্গে বাইরে যাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে, সেখানে আর কে কে থাকবে ইত্যাদি৷
যেসব বন্ধুর সঙ্গে সন্তান মিশছে তাদের চিনে রাখুন৷ কয়েকজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন৷ প্রয়োজনে মাঝে মাঝে আপনার বাড়িতেই আড্ডা দিতে বলুন৷ আপনিও ওদের সঙ্গে কথা বলে বুঝে নিন মতিগতি৷
জন্মদিন বা কোনও পার্টি যার বাড়িতে হচ্ছে, তার অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে নিন৷ পার্টিতে কে কী খাচ্ছে তা যেন সেই বাড়ির অভিভাবক নজরে রাখেন৷ অ্যালকোহল, বিয়ার পানের অনুমতি দেবেন না৷
বাড়িতে এমন জায়গায় কম্পিউটার, ইণ্টারনেটের ব্যবস্থা রাখুন যাতে আপনি মাঝে মাঝেই স্ক্রিন দেখতে পান৷ দিনে আধ ঘণ্টার বেশি চ্যাট করতে দেবেন না৷ কার সঙ্গে চ্যাট করছে তা দেখে রাখুন৷ অপরিচিত কারও সঙ্গে চ্যাট করতে বারণ করুন৷
মোবাইলে ইণ্টারনেট পরিষেবা থাকলে নজরে রাখুন৷ আপনি কাছে গেলেই যদি মোবাইল লুকিয়ে ফেলে বা আড়ালে মোবাইল ব্যবহার করে তাহলে জানতে চান সে কী করছিল৷ প্রয়োজনে নিজে চেক করে নিন৷ ফোনের বিল, ইণ্টারনেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখুন৷
বেশি মোবাইল ব্যবহার করলে ফোনটা নিয়ে নিন৷ আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে এমন একটি কাজ করার টার্গেট দিন যেটা করলে ফোন ফেরত পাবে৷ এতে ফোনের নেশা কমবে৷
অনেকের বাবা-মা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে জানেন না কিংবা ইণ্টারনেটের খারাপ দিক নিয়েও সচেতন নন৷ এই বয়সে নিষিদ্ধ জগতের প্রতি কৌতূহলের বশে অনেক টিনএজারই পর্নোগ্রাফিক সাইট, অশ্লীল ছবি দেখে ফেলে৷ আগেকার দিনেও ছেলেরা এমন কাজ লুকিয়ে করত৷ কিন্তু এখন ইণ্টারনেটের দৌলতে এগুলো এত সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে যে, বিষয়টি মারাত্মক রূপ নিচ্ছে৷ তাই স্মার্টফোনের ব্যবহার নিজে না শিখে ছোট ছেলেমেয়েদের হাতে কখনওই তুলে দেওয়া উচিত নয়৷
কী করবেন না:
নজরদারি মানেই কিন্তু সন্তানকে অবিশ্বাস নয়৷ প্রতি মুহূর্তে তাকে বুঝিয়ে দিন, আপনি তার ভাল চাইছেন৷ তাকে নিজের মতো বড় হওয়ার সুযোগও দিচেছন৷ অতিরিক্ত নজরদারি করলে, সন্দেহ করলে সন্তান বাবা-মাকে আরও বেশি করে সবকিছু গোপন করবে৷ সন্তানের সঙ্গে একটু একটু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন৷ তার মতামতকে গুরুত্ব দিন৷
মা-বাবার সহজপাঠ:
ছোট থেকেই সন্তানকে মূল্যবোধ শেখাতে হবে৷ একজন নীতিবান, আদর্শ ব্যক্তিকে অনুসরণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন৷
যে কোনও জিনিসের ভাল-মন্দ নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন৷
সন্তানের মতিগতি বুঝতে চাইলে তার সঙ্গে নিয়মিত মানসিক যোগাযোগ থাকাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ৷ ছোট থেকে শাসনে রাখার পর একটু বড় হলে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে চাইলে তা বাস্তবায়িত হবে না৷ এতে ছেলেমেয়েরা মোটেই সব কিছু শেয়ার করে না৷ অতিরিক্ত শাসন বা সন্তানের প্রতি কম নজর দেওয়া কোনওটাই বাবা-মায়ের করা উচিত নয়৷
রোজ একসঙ্গে দু’বেলা খাওয়া-দাওয়া করুন৷ জিজ্ঞেস করে নিন, সারাদিন সে আজ কী করল? সন্তানের কথা মন দিয়ে শুনুন৷ সেই সময় সে কোনও ভুল বা অন্যায় কথা বললে বকবেন না৷ পরে বুঝিয়ে বলুন৷ তা না হলে পরদিন থেকে কথা গোপন করতে চাইবে৷
বিদেশে সন্তান কোন ওয়েবসাইট ব্যবহার করবে সরকারি পরিষেবার সাহায্যে তার উপর অভিভাবকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে৷ বিভিন্ন্ অ্যাপস, সফটওয়্যারের মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন ভার্চুয়াল জগতে ছেলেমেয়েরা কী করছে৷ এখানে এখনও তেমন পরিষেবা চালু হয়নি৷ কিন্তু গত চার-পাঁচ বছরে ইণ্টারনেট ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আমাদের এখানে সরকারি স্তরেও এমন কিছু উপায় বের করা উচিত৷ তবে এখানেও আপনি ইচ্ছামতো ওয়েবসাইট ‘লক’ করে রাখতে পারেন৷ সেই ব্যবস্থার জন্য খোঁজ নিন৷
ছেলে-মেয়ে ফেসবুক করলে আপনিও তার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকুন৷ বাড়িতে মদ্যপান নয়৷ কখনও করলেও সন্তানের সামনে পান করবেন না৷
Leave a Reply