একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই মামলায় অপর সাত আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৭৬৮ পৃষ্ঠার রায় পড়া শেষে এই রায় ঘোষণা করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনা হত্যা, অপহরণ ও ধর্ষণসহ পাঁচটি অভিযোগের সবক’টি প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
রায় ঘোষণাকালে এই মামলায় কারাগারে আটক দুই আসামি সাবেক এমপি সাখাওয়াত হোসেন ও মো. বিল্লাল হোসেনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ১৪ জুলাই ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ এ মামলাটি মঙ্গলবার কার্যতালিকায় এলে বিচারক আজ রায় ঘোষণার দিন ঠিক করে দেন।
এই মামলায় আট আসামি হলেন : সাবেক এমপি সাখাওয়াত হোসেন, মো. বিল্লাল হোসেন বিশ্বাস, মো. ইব্রাহিম হোসাইন, শেখ মো. মজিবুর রহমান, এমএ আজিজ সরদার, আবদুল আজিজ সরদার, কাজী ওহিদুল ইসলাম ও মো. আবদুল খালেক। আসামিদের মধ্যে সাখাওয়াত ও বিল্লাল কারাগারে রয়েছেন। বাকি ছয়জনকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলে। এ মামলায় অভিযুক্ত আরেক আসামি মো. লুৎফর মোড়ল কারাবন্দি থাকা অবস্থায় মারা যান।
একাত্তরে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচ অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
পাঁচ অভিযোগ : অভিযোগ ১. যশোরের কেশবপুর উপজেলার বোগা গ্রামে এক নারীকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন এবং ধর্ষণ। ২. একই উপজেলার চিংড়া গ্রামের চাঁদতুল্য গাজী ও তার ছেলে আতিয়ারকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যা। ৩. কেশবপুরের চিংড়া গ্রামের মো. নুরুদ্দিন মোড়লকে অপহরণ, আটক ও নির্যাতন। ৪. কেশবপুরের হিজলডাঙার আ. মালেক সরদারকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও খুন। ৫. কেশবপুরের মহাদেবপুর গ্রামের মিরন শেখকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন এবং ওই গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যশোরে একাধিক মামলা হলে সেগুলো ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাখাওয়াতসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অভিযোগের তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্তদল।
প্রসিকিউশনের আবেদনে ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে ২৯ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃংখলা বাহিনী।
গত বছর ১৮ জুন তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়। এরপর ২৬ জুন অভিযোগ আমলে নেয়ার বিষয়ে শুনানি হয়। ১২ জনের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে ‘অভিযোগের উপাদান’ না পাওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আদালত নয়জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন।
এরপর ২৪ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের ওপর পক্ষে-বিপক্ষে শুনানি শেষে গত বছর ২৩ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। চলতি বছর ৩১ জানুয়ারি প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর পর মোট ১৭ জন সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিলেন না।
Leave a Reply