গুলশান হামলার অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ ও ‘নব্য জেএমবি’ নেতা মারজানের পরিচয় পেয়েছে পুলিশ। তার পুরো নাম নুরুল ইসলাম মারজান (২৩)। বাবার নাম নিজাম উদ্দিন, মা সালমা খাতুন। গ্রামের বাড়ি পাবনা সদরের হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া পাইটকাবাড়িতে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
আজ সোমবার পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) আলমগীর কবীর এসব তথ্য জানিয়ে বলেন তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ভয়ংকর জঙ্গি মারজান আট মাস আগে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ।
পুলিশ জানিয়েছে, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার সঙ্গে জড়িত এবং হামলাকারী জঙ্গিদের সঙ্গে মারজানের যোগাযোগ ছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে। হলি আর্টিজানে হামলার পর রাত একটায় ইন্টারনেট-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত ভেতর থেকে জঙ্গিরা হত্যাযজ্ঞের ছবি তুলে তা মারজানসহ কয়েকজনকে পাঠিয়েছিল। ওই রাতে এসব ছবি আইএসের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক- এ প্রকাশ করা হয়। এছাড়া আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, সেসব তথ্যে মনে হয়েছে, মারজান গুলশান হামলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।
এখন পর্যন্ত গুলশানের হামলায় নিহত জঙ্গিরা ছাড়া পরিকল্পনাকারী বা সমন্বয়কারী হিসেবে দুজনের নাম প্রকাশ করেছে পুলিশ। তারা হলেন- মারজান ও তামিম চৌধুরী। যাদের ‘নব্য জেএমবির’ নেতা বলছে পুলিশ। মারজানের সঙ্গে তামিম চৌধুরী ও অন্য জঙ্গি নেতাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বা রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
মারজানের বিষয়ে তথ্য চেয়ে গত শুক্রবার পুলিশের তথ্য পাওয়ার বিশেষ অ্যাপ ‘হ্যালো সিটি’তে তার ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানেও তাকে গুলশান হামলার ‘অপারেশন কমান্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মারজানের পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে তিনি পাবনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে আলিম পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে ভর্তি হন। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী জানান, মারজান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিনা, এখনও এই বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন। খতিয়ে দেখে বিস্তারিত জানানো যাবে।
জানা গেছে, পাবনার সদর থানা পুলিশের একটি দল ইতোমধ্যে পাবনা সদরের হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামে মারজানের বাড়িতে গিয়ে তার প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত করেছে। তারা জানতে পেরেছেন, আট মাস আগে স্ত্রীসহ ঘর থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি মারজান।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোম ডিস্পোজালের প্রধান ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, মারজানের বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। তার বিষয়ে তথ্য চেয়ে সিটিটিসি ছবি প্রকাশ করার পর অনেকেই পুলিশকে তার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল মান্নান জানান, সিটিটিসির একটি টিম পাবনায় মারজানের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।
Leave a Reply