।
সোমবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের শোক দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলা ও গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রত্যয়ের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পালাতক খুনিদের দেশ ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর ও চিহ্নিত বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়।
দিনব্যাপী কুরআন তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, কালো ব্যাজ ধারণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের মধ্য দিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ বিনম্র চিত্তে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
শোক দিবস উপলক্ষে সোমবার ভোরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিট কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
জাতীয় শোক দিবসে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে শোক দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে।
সকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরাসহ সর্বস্তরের মানুষ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময়ে তিন বাহিনীর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিজড়িত ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালোরাতে ওই ভবনের যে সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়ে ছিল, সেখানে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। পরে তিনি ওই ভবনের একটি কক্ষে বসে কিছু সময় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন। এ সময়ে শেখ রেহানা ও প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ত্যাগ করার পরপরই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়ক থেকে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে যান। যেখানে ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে নিহত তার মা, ভাই, পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয়দের দাফন করা হয়। তিনি সকাল সাড়ে ৭টায় তার পরিবারের সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়া যান। সেখানে বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। এছাড়াও এ সময়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজরুল আহসান বুলবুল, প্রেসক্লাবের সাধারণ কামরুল ইসলাম চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের কোষাধক্ষ্য কার্তিক চ্যাটার্জি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস অফ্রাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে নেতৃবৃন্দ জাতীয় প্রেসক্লাবে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এদিকে জাতীয় শোক দিবসের দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুঃস্থ ও গরীব মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর থানা ও ওয়ার্ড ইউনিটগুলো। সব ক’টি থানা-ওর্য়াড জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করে।
দিবসটি উপলক্ষে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় এবং মন্দির, প্যাগোডা, গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
Leave a Reply