বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর আকস্মিক মৃত্যু চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের গতিপথে কোনো পরিবর্তন ঘটায়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছে শোক ও আন্দোলনের কর্মসূচি একসঙ্গে চলবে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে এমন একটি আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল যে, কোকোর মৃত্যুর কারণে আন্দোলন কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আসলেও আসতে পারে। কিন্তু সে রকম ঘটেনি। শোকের আবহ নিয়েই চলছে আন্দোলন। টানা অবরোধসহ বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলের আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবার রাতেই বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। দেশব্যাপী টানা অবরোধের মধ্যেই আজ খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে শেষ বিদায় জানানো হবে। শোক এবং কর্মসূচি চলবে একই সঙ্গে। কোকোর মৃত্যুর পরও আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে কোনো কিছুতেই পিছু হটবে না বিএনপি। এর আগে বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের মধ্যেও কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হয়। আগামী মাস থেকে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও ছাড় দেয়ার কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই তাদের। দলটির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ যুগান্তরকে জানান, আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে শোক পালনের পাশাপাশি ২০ দলের আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শোক কাটিয়ে আগের মতো মনোবল নিয়েই গণতান্ত্রিক এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন। তার নেতৃত্বে দলের সিনিয়র থেকে সব পর্যায়ের নেতারা আন্দোলনে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
বিএনপি নেতাদের মতে, আন্দোলন যে পর্যায়ে এসেছে সেখান থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যু নিঃসন্দেহে নেতাকর্মীদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছে। খালেদা জিয়া নিজেও শোকে বিহ্বল। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প দেখছে না তারা। কর্মসূচি স্থগিত করা হলে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। পরে নতুন করে কর্মসূচি চালিয়ে নেয়া কঠিন হবে। সবদিক বিবেচনা করে তাই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্র জানায়, কোকোর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে এখনও শোকে স্তব্ধ হয়ে আছেন খালেদা জিয়া। আজ কোকোর লাশ মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরছে। শেষবারের মতো তাকে শ্রদ্ধা জানানো হবে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে হয়তো কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন খালেদা জিয়া। এরপর দল ও জোটের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে আন্দোলন কীভাবে আরও বেগবান ও শক্তিশালী করা যায় সে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক জানান, কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে সহিংসতায় সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছেন। কয়েকজনকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কোকোর মৃত্যুর পর কর্মসূচি স্থগিত করা হলে দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর চাপ আরও বেড়ে যাওয়ার আশংকা ছিল। পেট্রলবোমায় সাধারণ মানুষের নৃশংস মৃত্যুর পর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়ার জোর দাবি ওঠে। কিন্তু তাদের সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হয়। এখন খালেদা জিয়ার ছেলের মৃত্যুর পর কর্মসূচি স্থগিত করা হলে আরও সমালোচনায় পড়ার আশংকা ছিল। অনেকেই হয়তো বলত, এবার নিজের ছেলের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, শনিবার দুপুরে আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যু সংবাদ শোনার পর দলের চেয়ারপারসনসহ সব স্তরের নেতাকর্মীরা শোকে স্তব্ধ হয়ে যান। গ্রেফতারের আশংকা মাথায় নিয়েই অনেক নেতা খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে তার গুলশান কার্যালয়ে ছুটে যান। কোকোর মৃত্যুর এই শোক সাময়িক প্রভাব ফেলে কর্মসূচিতেও। গত কয়েকদিনে দেশব্যাপী টানা অবরোধ ও ৩৬ ঘণ্টার হরতাল তাই ছিল অনেকটা ঢিলেঢালা। রাজপথে নেতাকর্মী এমনকি তেমন পিকেটিং চোখে পড়েনি। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আজকালও কর্মসূচি শান্তিপূর্র্ণভাবেই পালিত হতে পারে।
সূত্র জানায়, কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি কোকোর মৃত্যুতে আগামীকাল পর্যন্ত দেশব্যাপী শোক দিবস পালন করা হবে। দেশের সব দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবে। গুলশানে চেয়ারপারসনের অফিস ও নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, অব্যাহত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে তারা প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। আরাফাত রহমানের অকাল মৃত্যুর পর নেতাকর্মীরাও শোকে স্তব্ধ। এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে বিজয় নিশ্চিত করতে সবাই বদ্ধপরিকর। কোনো কিছুতেই তারা পিছু হটবে না।
Leave a Reply