‘প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ছিল রিশার। মেয়ের স্বপ্ন পূরণে আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। ভর্তি করেছিলাম, নামী শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে। ও সবসময় বলতো, ”যত কষ্টই হোক আমি প্রকৌশলী হবো।” ওর বাবাও স্বপ্ন দেখছিলেন, মেয়ে একদিন প্রকৌশলী হয়ে দেশ-বিদেশে নাম করবে। কিন্তু মুহূর্তের একটা ঝড় সব যেন সব শেষ করে দিল। মেয়েটাই যখন নেই, আর কী নিয়ে বেঁচে থাকবো।’
বখাটের ছুরিকাঘাতে নিহত রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার রিশার মা তানিয়া হোসেন রোববার এসব কথা বলে বিলাপ করছিলেন।
রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিশার মৃত্যু হয়। গত বুধবার দুপুরে পরীক্ষা শেষে স্কুলের সামনের ফুট ওভারব্রীজ দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় এক দুর্বৃত্ত তার পেট ও হাতে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্কুলের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। তারা এ হত্যার প্রতিবাদে ও অপরাধীকে গ্রেফতারের দাবিতে শতাধিক বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা কাকরাইল মোড় অবরোধ করে। পরে দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।
রিশার পরিবার বলছে, ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটের বৈশাখী টেইলার্স নামে একটি দোকান থেকে সালোয়ার-কামিজ বানাতেন রিশার মা তানিয়া। যোগাযোগের জন্য দোকানের কর্মচারীরা মোবাইল ফোনের নম্বর রেখেছিল। ওই নম্বরে দোকানের কর্মচারী ওবায়েদ রিশাকে উত্যক্ত করতো।
রিশার মা বিষয়টি জানতে পেরে ওই নম্বরটি বন্ধ করে দেন। এই ঘটনার পর সেই বখাটে ওয়াবেদ স্কুলের সামনে রিশাকে উত্ত্যক্ত করতো। ওবায়েদই হত্যার এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তাদের রিশার পরিবারের সন্দেহ।
এ ঘটনায় গত বুধবার ওবায়েদকে আসামি করে রমনা থানায় মামলা করা হয়।
রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে রিশার লাশ উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে নেওয়া হলে সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সহপাঠী ও শিক্ষকরা রিশার হত্যাকারীর বিচার দাবি করেন।
এ সময় তার মা তানিয়া হোসেন বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এমন হবে জানলে মেয়েকে স্কুলভ্যানে করে পাঠাতাম না। আমি নিজে তাকে নিয়ে আসতাম। আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচবো।’
হাসপাতালে রিশার বাবা রমজান হোসেন বলেন, এমন মৃত্যু যেন কারো না হয়। মেয়ের মুত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। স্কুলের সামনে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে তিনি অনুরোধ করেন।
Leave a Reply