রাজধানীর উইলস লিটন ফ্লাওয়ার স্কুলের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যাকারী হয়তো গ্রেফতার হবে। বিচার হবে কিংবা নাও হতে পারে। কিন্তু আমরা কি আমাদের রিশাকে ফিরে পাবো?
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সমাজ, রাষ্ট্রের ব্যর্থতাকে কাঠগড়ায় তুলে বৃষ্টিতে কান্নাভেজা গলায় এমন শত প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন রিশার স্কুল সহপাঠী, শিক্ষার্থী- অভিভাবক-শিক্ষকবৃন্দ।
সোমবার প্রতিষ্ঠানটিতে শোকসভার আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। সকাল থেকেই শত শত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দ শোকসভার পাশাপাশি রিশার খুনির ফাঁসির দাবি নিয়ে স্কুলের ভেতর ও সামনের রাস্তায় জড়ো হতে থাকে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘রিশার হত্যাকারীকে যেকোনো মূল্যে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমি রিশা হত্যাকারীর ফাঁসি দাবি করছি। খুনিকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে ফাঁসি দেয়া হোক’।
প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল আবুল হোসেন বলেন, আমরা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছি। শোকের সঙ্গে ক্রোধ্ও জ্বলছে। রিশার মতো একজন ফুটফুটে শিশুকে হত্যা করা হলো। এটা কোন সমাজ, কোন সমাজে আমরা বাস করি।
বৃষ্টিতে ভিজে শত শত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দ স্কুলের সামনের কাকরাইল রাস্তায় অবস্থান নেন। প্রিয় সহপাঠী রিশার হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে ফাঁসি দেয়ার দাবি জানায় শ্লোগানে শ্লোগানে। বৃষ্টির পানিতে চোখের জল মিশে হয়ে পড়ে হচ্ছিল।
স্কুলটির ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী বিথী ইসলামকে বুকে জড়িয়ে ধরে মা সোনিয়া ইসলাম শ্লোগান দিচ্ছিলেন আর কাঁদছিলেন। মায়ের বুকে মাথা রেখে বিথীও কাঁদছিল।
সোনিয়া ইসলাম জানান, ‘বিশ্বাস করুন কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে, রিশার জন্য আমার মেয়ে শুধুই কাঁদছে। আজ আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। রাজপথে নেমেছি আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবি নিয়ে। রিশার খুনিকে গ্রেফতার করে ফাঁসি দেয়া হোক।
রিশার সঙ্গে একই ক্লাশে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মুনিয়া, মিথী ও এলমা রাস্তায় বসে একে অপরের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদছেন। আন্দোলন কী খুদে এসব শিশুরাও হয়তো তা জানেনা, কিন্তু সহপাঠি হারানোর ব্যথা তারা বোঝে।
মুনিয়া জানাল, ‘খুনিটাকে ফাঁসি দিলেও কী রিশাকে আমরা আর ফিরে পাবো।
আন্দোলন আর শোক সভায় যখন শিক্ষার্থী, অভিভাবক আর শিক্ষকবৃন্দ শোকে কাঁদছিলেন তখন কেউ কাউকে শান্তনা দিতে পারছিলেন না। শোকের সঙ্গে ক্রোধ জ্বলছিল তাদের বুকে।
এমন অবস্থা নিয়ে যখন রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন চলছিল তখন সাধারণ পথচারীরাও এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
বেলা দেড়টার দিকে রমনা বিভাগের পুলিশের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান ঘটনাস্থলে আসেন। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রিশার হত্যাকারীকে গ্রেফতার করার প্রতিশ্রুতি দিলে শিক্ষার্থীরা তাদের অবরোধ তোলে নেন।
গত বুধবার রিশাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার মারা যায় সে।
মৃত্যুর আগে রিশা বলে গেছে, ওবায়দুল নামে এক দর্জি তাকে উত্ত্যক্ত করত, প্রায় সময় পিছু নিত। ওই ওবায়দুলই তাকে ছুরি মেরেছে। রিশা পুলিশকেও এমন জবানবন্দি দিয়েছে।
Leave a Reply