সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে দুই মাস আগে ধার হাওলাত করে ছেলেকে স্বপ্নের দেশ মালেয়শিয়ায় পাঠিয়েছেন। মালেয়শিয়া থেকে বাড়িতে খবর আসে ছেলে জেলে, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হলে আরো টাকা দিতে হবে- এমন খবর শুনে ক্ষোভে দুঃখে বিষপানে আত্মহত্যা করল পিতা কবির হোসেন। আজ মঙ্গলবার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।
নিহত কবির হোসেন (৫০) চেঙ্গাকান্দি গ্রামের মৃত আবদুল মালেক মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দিনমজুর কবির হোসেনের ছেলে নাজমুল হাছান সংসারের অভাব অনটন দূর করার জন্য বিদেশ যাওয়ার জন্য তার বাবাকে বলে। কিন্তু অভাবের সংসার এত টাকা কোথায় থেকে পাবে। পরে আত্মীয় স্বজন ও ভিটা-মাটি কিক্রয় করে প্রায় দুই লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দেন পিতা কবির হোসেন। দুই মাস আগে একই উপজেলার দালাল গিয়াস উদ্দিন কাজের ভিসার কথা বলে টুরিষ্ট ভিসায় নাজমুল হাছানকে মালেয়শিয়ায় পাঠায়। তার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন দিন পরই মালেয়শিয়া পুলিশ নাজমুল হাসানকে ধরে জেলে পাঠায়। এত কষ্ঠ করে ধার-হাওলাত করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না করতেই নাজমুলের জেলে থাকার খবর শুনে ক্ষোভে দু:খে আজ মঙ্গলবার সকালে বিষপানে আত্মহত্যা করে কবির হোসেন।
নিহতের স্ত্রী রিনা বেগমের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, বাবারে পুলারে কইছিলাম বাবা আমাগো বিদেশ যাওয়ার দরকার নাই দেশে রাজমিস্ত্রি কইরা যা পাই তাই আমাগো চলবে। পুলা আমাগো কথা শুনে নাই, অনেক বড়লোক হইবো। দালাল আমার পুলারে দুই বছরের কাজ দিবে কইয়া দুই মাস পরই জেলা গেল। পুলার শোকে আর ঋণের শোকে দিশাহারা হইয়া আমার স্বামী বিষ খাইয়া আত্মহত্যা করছে। এখন আমাগো সংসারের হাল কে ধরবে আল্লাহ।
এ ব্যাপারে তিতাস থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ শহিদ উদ্দিন বলেন, সরেজমিনে গিয়ে দেখি পরিবারটি খুবই গরীব এবং দিনমজুর। শেষ সম্ভল বাড়িটি বিক্রি করে আর অনেক টাকা ঋণ করে ছেলে বিদেশ পাঠিয়েছিল। কিন্তু ছেলে জেলে যাওয়ার খবর পেয়ে ক্ষোভে দুঃখে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে কবির হোসেন। লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লায় পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply