প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দেশের স্বার্থান্বেষী মহল যারা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের বদলে পুরস্কৃত করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছে তারাই এ দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের শিকড় ।
‘জঙ্গিদের বাঁচিয়ে রাখলে তাদের শিকড়ের খোঁজ পাওয়া যেতো’ বলে খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের জন্য মায়াকান্না খালেদা জিয়ার কোথা থেকে আসে সেটাও আমার প্রশ্ন। এ দেশে জঙ্গীবাদ সৃষ্টির মূল শিকড় হচ্ছে খালেদা জিয়া। ’
তিনি বলেন, ‘শিকড়ের সন্ধানতো আর করা লাগে না, শিকড় নিজেই যখন কথা বলে ওঠে। তখন ওইদিকেই পাওয়া যাবে। ওইদিকেই পাওয়া গেছে। শিকড়টা কি ওইদিক থেকে (খালেদা জিয়ার) আসে কি-না সেইটা এখন তদন্ত করে দেখতে হবে।’
‘খালেদা জিয়া যাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তাদের ফাঁসিও হয়েছে। কাজেই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যাদের ফাঁসি হয়েছে তাদের যে মন্ত্রী বানিয়েছে তার শাস্তি কি হবে সেটাও দেশবাসীকে ভাবতে হবে। আজকে দেশের মানুষের মধ্যে এই সচেতনতাই সৃষ্টি করতে হবে ওই জিয়া এবং খালেদা জিয়া, যারা যুদ্ধাপরাধী এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজাপ্রাপ্তদের মন্ত্রী বানিয়েছে তাদের বিচার প্রকাশ্যে জনগণের সামনেই হতে হবে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর কৃষিদি ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ (উত্তর-দক্ষিণ) আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে স্মরণসভায় এ কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, যুগ্মৃসাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ এমপি, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন এবং মহানগর আওয়ামী লীগের দুই অংশের দুই সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও শাহে আলম মুরাদ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে দেশের মানুষের মধ্যে এই সচেতনতাই সৃষ্টি করতে হবে ওই জিয়া এবং খালেদা জিয়া যারা যুদ্ধাপরাধী এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজাপ্রাপ্তদের মন্ত্রী বানিয়েছে তাদের বিচার প্রকাশ্যে জনগণের সামনেই হতে হবে। কাজেই সেভাবেই আমাদের জনমত সৃষ্টি করতে হবে। আর সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, যখনই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিদের খুঁজে বের করে এবং সেই জঙ্গিরা যখন নিহত হয় তখন তাদের জন্য মায়াকান্না খালেদা জিয়ার কোথা থেকে আসে সেটাও আমার প্রশ্ন। তাদের কেনো মারা হলো, তাদের কেনো বাঁচিয়ে রাখা হলো নাÑ এসব কথা কোথা থেকে আসে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের মদদ দিতে পারে, পুরস্কৃত করতে পারে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের জাতীয় পতাকা দিয়ে মন্ত্রী বানাতে পারে, যারা খুনীদের ভোট চুরি করে সংসদে বসিয়ে বিরোধীদলের নেতা বানাতে পারে, যারা সব ধরনের সন্ত্রাসের সাথে জড়িত, তারাই জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত এটাতো আর দেখারও প্রয়োজন নেই। এটাতো সাধারণ মানুষ খালি চোখেই দেখতে পাচ্ছে। কাজেই এদেরও রেহাই নেই। এদেরও বিচার ইনশাল্লাহ জনগণ বাংলার মাটিতে করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আমরা সেই প্রতিজ্ঞাই নেবো, জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করবো এবং বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধামুক্ত এবং দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। এ কথা বঙ্গবন্ধুও সব সময় বলতেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধ চলার সময় বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানে বন্দী অবস্থায় কোর্টে তোলা হলেই বঙ্গবন্ধু বলতেন, যে কথা আইযুব খান তার ডায়েরিতে লিখে গেছেন ‘যখন তাঁকে (বঙ্গবন্ধুকে) কোর্টে নিয়ে আসা হতো তখন কোর্টে ঢুকেই বঙ্গবন্ধু বলতেনÑ জয় বাংলাদেশ।’
কত বুকের পাটা ছিল, কতখানি আত্মবিশ্বাস ছিল বঙ্গবন্ধুর, উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এও বলতেন, ‘আপনারা আমার কি বিচার করবেন, আপনারা আপনাদের কাজ করে যান আমিও আমার কাজ করেই যাবো। বাংলার স্বাধীনতা আনবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন বন্দী অবস্থায় পাকিস্তানে ছিলেন তখন তাঁকে ফাঁসি দিতো পারেনি। কিন্তু ইয়াহিয়ার ফাঁসির আদেশ ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকচক্র বাস্তবায়ন করলো। তারা আসলে বাংলাদেশের স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করে না। আর জনগণের সমর্থন ছিলো বলেই আমরা ক্ষমতায় এসেছি। দেশকে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার করেছি এবং যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করে যাচ্ছি। একজন করে যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে আর একটু একটু করে শাপমোচন হচ্ছে বাংলাদেশের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
Leave a Reply