ক্রিকেটে জার্সির প্রচলন খুব বেশি দিনের নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জার্সি নম্বর ব্যবহারের রীতি চালুই হয়েছে নব্বই দশকের শেষ দিকে। বড় কোনো টুর্নামেন্টে জার্সি নম্বর ব্যবহারের প্রথম উদাহরণ ১৯৯৯ বিশ্বকাপ।
ফুটবলারদের জার্সি নম্বর বুঝিয়ে দেয়, কে কোন পজিশনের খেলোয়াড়। ক্রিকেটে অবশ্য এমন কিছু বোঝার উপায় নেই। এখানে জার্সি নম্বরের অন্য তাৎপর্য, যা একসময় নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়ের সমার্থক হয়ে যায়। বাংলাদেশে ‘২’ নম্বর জার্সি বললেই যেমন চোখে ভেসে ওঠেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। আর সাকিব আল হাসান তো নিজের নামের ব্র্যান্ডটি দাঁড় করিয়েছেন ‘৭৫’ নামেই।
নিশ্চয়ই এমন প্রশ্ন বুদ্বুদ করেছে মনে, মাশরাফি-সাকিবদের জার্সি নম্বরের রহস্যটা কী? কেউ নম্বর নিয়েছেন নিজের পছন্দে। আবার বিসিবি থেকে দেওয়া নম্বরটাই ভালোবেসে ফেলেছেন কেউ কেউ। মাশরাফি শুরুতে পেয়েছিলেন ‘২০’ নম্বর। পরে ফেলে দিয়েছেন শেষের শূন্যটা। এখন ‘২’ শুধু সংখ্যাই নয়; অনেকের কাছে তা ভীষণ প্রেরণাদায়ী।
মাশরাফিকে দেখেই তাসকিন আহমেদ নিয়েছেন ‘৩’ আর আল আমিন ‘৪’। ‘আমার জন্মতারিখ ৩ এপ্রিল। এটির সঙ্গে মিলিয়েই জার্সি নম্বর ৩। আরও একটি কারণ আছে, মাশরাফি ভাইকে আমি “গুরু” মানি। গুরুর পরেই তো শিষ্য থাকে! এ কারণে ২-এর পর আসবে ৩’—যুক্তিটা বেশ দিয়েছেন তাসকিন। আল আমিনের যুক্তিটাও কম সরেস নয়, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতাম ১৯ পরে। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর দেখি, এই নম্বর আরেকজনের আছে। মাশরাফি ভাই আমার আদর্শ। তাঁর ২ নম্বর আমার ভীষণ প্রিয়। ২ আর ২ গুণ করলে কী হয়? বোঝা গেল আমারটা কেন ৪?’
সাকিবের বিখ্যাত হয়ে যাওয়া ‘৭৫’ নম্বরের অবশ্য তেমন রহস্য নেই। এক সাক্ষাৎকারে বাঁহাতি অলরাউন্ডার বলেছেন, ‘যখন জার্সিটা দেওয়া হয়, তেমন কোনো বিশেষ কারণ ছিল না। কিন্তু এখন তো এটা স্পেশাল। বোর্ড থেকে দিয়েছিল। এখন চাইলে পরিবর্তন করা যায়, কিন্তু করি না।’ তামিম শুরুতে ‘২৯’ পরতেন। পরে সেটি বদলে নেন ‘২৮’। বদলের কারণ বললেন বাঁহাতি ওপেনার, ‘সব সময়ই ২৮ নিতে চাইতাম। যখন জাতীয় দলে ঢুকি, তখন এই নম্বরটা আরেকজনের ছিল। অনেক বছর তাই আমার জার্সি ২৯ ছিল। পরে জিজ্ঞেস করি, ২৮ পাওয়া যাবে কি না। তখন পেয়ে যাই।’
মুশফিকুর রহিমের আবার ‘৯’-এর প্রতি ভীষণ দুর্বলতা। তাঁর আদর্শ ব্রায়ান লারা এই নম্বরটাই ব্যবহার করতেন। কিন্তু ‘৯’ না হয়ে কেন মুশফিকের জার্সি হলো ‘১৫’? বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের উত্তর, ‘বোর্ড থেকে ১৫ দিয়েছে, সেটাই রেখে দিয়েছি। লারার “৯” আমার ভীষণ পছন্দ ছিল। কিন্তু তখন ওটা আশরাফুল ভাই পরতেন। আমি অবশ্য কিছুদিনের জন্য ৯ নম্বর পরেছি। পরে আবার ১৫ নম্বরে ফিরে গেছি।’
মুশফিকের কাছে ‘১৫’ যেমনই হোক, ইমরুল কায়েস-শুভাগত হোমের খুব ইচ্ছে ছিল নম্বরটা পাওয়ার। ‘জাতীয় দলে আসার আগে প্রিয় নম্বর ছিল ১৫। কিন্তু মুশফিকের সেটি থাকায় উল্টে “৫১” নিয়েছি’—বলছিলেন শুভাগত। ইমরুল আগে ‘৬২’ ব্যবহার করতেন। পরে যে ‘৪৫’ নিয়েছেন সেটির পেছনে আছে ১৫-এর প্রভাব, ‘গত নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে ৪৫ ব্যবহার করছি। সিরিজটা আমার দারুণ গেছে। মনে হয়েছে ৫ আমার জন্য সৌভাগ্যের নম্বর। যদি পেতাম ১৫-ই নিতাম। কিন্তু ওটা তো মুশফিকের। ৫ সংখ্যাটার প্রতি ভালো লাগা থেকেই ৪৫ নিয়েছি। ৫ তো থাকল।’
পছন্দের জার্সি পাননি মাহমুদউল্লাহও। প্রিয় খেলোয়াড় অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের ‘৩৯’ তাঁর বেশি ভালো লাগত। কিন্তু পরে ‘৩০’-এর সঙ্গে কীভাবে যেন মাহমুদউল্লাহর বন্ধনটা দৃঢ় হয়ে গেল, ‘আমি চাইনি, জানিও না, ৩০ নম্বর পেলাম। এই জার্সিতে অনেক সাফল্য পেয়েছি। নম্বরটা তাই ভীষণ ভালো লেগে গেছে।’
বিকেএসপিতে পড়ার সময় সৌম্য সরকারের রোল নম্বর ছিল ৪৫৯। প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভালোবাসা থেকেই বাঁহাতি ওপেনারের জার্সি নম্বর ৫৯। অবশ্য এ জন্য তাঁকে ‘৪’ ফেলে দিতে হয়েছে। নিজেকে ‘নম্বর ওয়ান’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই কি ‘১’ নিয়েছেন সাব্বির রহমান? একগাল হাসলেন বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান, ‘নাম্বার ওয়ান হতে হবে, এমন ভাবনায় ‘১’ নেওয়া নয়। তবে এখন ভাবনায় ঢুকে গেছে, ভবিষ্যতে এক নম্বরই হতে হবে। এটা আমার সৌভাগ্যের জার্সি। এর আগে ৯৯ ও ৬৫ নম্বর পরেছি। তবে ১ নম্বরই বেশি মানিয়ে গেছে।’
নাসির হোসেন মানেই মজার কিছু। তাঁর জার্সি নম্বরেও সেটির প্রতিফলন—৬৯! নাসির জার্সিরহস্য উন্মোচন করলেন এভাবে, ‘৬৯ দেখতে সুন্দর লাগে। তবে আমার পছন্দ ছিল “০০”। হার্শেল গিবস পরত দেখে আমি আর এটা নিইনি। ৬৯ মনে হয় না কেউ পরেছে। আমার অন্তত চোখে পড়েনি।’ বাংলাদেশ দলের ৬৬তম টেস্ট খেলোয়াড় এনামুল হক। সব সংস্করণেই তাঁর জার্সি নম্বর তাই ৬৬।
মুস্তাফিজুর রহমানের ‘৯০’, আরাফাত সানির ‘৬’, মুমিনুল হকের ‘৬৮’, রুবেল হোসেনের ‘৩৪’ নম্বরের অবশ্য বিশেষ কোনো গল্প নেই। বিসিবি থেকে দেওয়া সংখ্যাটাই আপন করে নিয়েছেন তাঁরা।
Leave a Reply