ডেইলি চিরন্তন:যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের তুলনায় যাদের ডায়াবেটিস তাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায় বেশি। এমন দেখা যায় পূর্ণবয়স্ক তিন জন ডায়াবেটিকের মধ্যে দুই জনের থাকে উচ্চ রক্তচাপ। ডায়াবেটিস থাকলে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকিও দ্বিগুণ। চিকিত্সা না হলে উচ্চ রক্তচাপ থেকে হতে পারে হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোক। বস্তুত: যে ব্যক্তির ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ দুটোই আছে, ডায়াবেটিস নেই এমন লোকের তুলনায়, হূদরোগ হবার সম্ভাবনা প্রায় চারগুণ।
পূর্নবয়স্ক ডায়াবেটিক রোগীর ৭৩% শতাংশের রক্তচাপ ১৩০/৮০ এর বেশি এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য ব্যবহার করেন ওষুধ। ডায়াবেটিক রোগীদের উচ্চ রক্তচাপের এমন ঝুঁকি থাকার জন্য, আমেরিকান ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থ সাধারণ লোকের লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে নিচে রেখেছেন রক্তচাপের লক্ষ্যমাত্রা। ১৩০/৮০ মিলি মিটার পারদ চাপের নিবে। আবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব লাইফ স্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে যেমন খাদ্যবিধি, ব্যায়াম ও ওষুধ সেবন করে।
নিজের প্রতি খেয়াল রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক, চোখের সমস্যা ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
নিয়মিত রক্তচাপ চেক্ করা এবং রক্তচাপের লক্ষ্য মাত্রায় পৌঁছানো ডায়াবেটিসের সম্পর্কে প্রতিরোধ ও বিলম্বিত করতে পারে। রক্তনালীর মধ্যদিয়ে রক্ত প্রবাহের যে বল তাই হলো রক্তচাপ। ডাক্তাররা যখন রক্তচাপ চেক্ করেন তারা দুটো সংখ্যা রেকর্ড করেন; যেমন-১৩০/৮০ মিলিমিটার পারদচাপ। দুটো সংখ্যাই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম সংখ্যাটি হলো; হূদপিন্ড যখন স্পন্দিত হয় এবং রক্তনালীর মধ্য দিয়ে বেগে রক্তকে প্রবাহিত করে সে সময় যে চাপ হয় একে বলে সিসেটালিক রক্তচাপ। দ্বিতীয় সংখ্যাটি হলো- দুটো হূদস্পন্দনের অন্তবর্তীকালে রক্তনালীগুলো যখন শিথিল, তখন যে চাপ হয় একে বলে ডায়াসটোলিক চাপ। এই সময় হূদপ্রকোষ্টগুলো রক্ত দ্বারা পরিপূর্ণ হয়।
রক্ত যখন রক্তনালীর মধ্যে দিয়ে খুব বেগে প্রবাহিত হয় তখন হয় উচ্চ রক্তচাপ। রক্তচাপ যখন উচুতে তখন হূদযন্ত্রকে কঠোর শ্রম করতে হয়; ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও যায় বেড়ে। উচ্চ রক্তচাপ এমন সমস্যা যা চিকিত্সা ছাড়া সামাল দেয়া কঠিন।
ডায়াবেটিস থাকলে রক্তচাপের লক্ষ্য মাত্রা কত
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক, চোখ ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই যাদের ডায়াবেটিস তাদের রক্তচাপের লক্ষ্যমাত্রা সাধারণ লোকের চেয়ে নিচে। আমেরিকান ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন এবং ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব হেলথ্ ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রক্তচাপের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ১৩০/৮০ মিলি মিটার পারদ মানের নিচে। রক্তচাপ মান ১৩০/৮০ এর নিচে রাখলে ডায়াবেটিস সমস্যার ঝুঁকিও হ্রাস পায়।
কি করে জানবো যে উচ্চ রক্তচাপ আছে
উচ্চ রক্তচাপ অনেক সময় নি:শব্দ সমস্যা। ডাক্তার রক্তচাপ চেক্ না করলে তা জানাও যায় না। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের পরামর্শ; প্রতিবার ডাক্তারের ভিজিটের সময় রক্তচাপ মেপে দেখা উচিত বা বছরে অন্তত: ৩-৪ বার মাপানো উচিত। কারো কারো রক্তচাপ বেশ উচুতে উঠলে কিছু উপসর্গ হতে পারে। যেমন- মাধা ধরা, মাথা ঝিম ঝিম করা, ঝাপসা দেখা।
উচ্চ রক্তচাপ কি প্রতিরোধ করা যায়
আমেরিকান ডায়াবেটিস এসোসিয়েশনের পরামর্শ হলো- নুন খাওয়া কমানো, মানসিক চাপ কমানোর কাজ কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, মদ্যপান কমানো (আমার পরামর্শ; বর্জন করা), ধূমপান করে থাকলে বন্ধ করা এবং অন্যের ধূমপানের ধোয়া থেকে দূরে থাকা এবং রক্তচাপ মনিটর করা।
কিভাবে হয় চিকিত্সা
লাইফস্টাইলে পরিবর্তন এবং ওষুধ দুটোই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ব্যক্তিভেদে চিকিত্সা হয় ভিন্ন ভিন্ন। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা নিজের জন্য যথাযথ চিকিত্সা প্ল্যান ঠিক করে নিতে হবে।
লাইফস্টাইলে পরিবর্তন
লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হয়, নিয়ন্ত্রণে আসে রক্তের গ্লুকোজ ও রক্তের লিপিড কোলেস্টেরল মান।
বিবেচিত খাদ্য পছন্দ
* প্রতিবেলা আহারে একটুকরো ফল মধ্যাহ্ন আহারে বা রাতের বেলার আহারে কিছু সবজি খাওয়া।
* কম চর্বি বা চর্বিহীন দুগ্ধজাত দ্রব্য গ্রহণ (যেমন লো-ফ্যাট পনির ও সর তোলা দুধ।
* গোটাশস্য গ্রহণ, যেমন- গমের রুটি, লাল চালের ঢেকিছাড়া চালের ভাত।
* বাদাম ও পিনাট বাটার
* কচি মাংস, মোরগের মাংস, মাছ। খাসি, গরুর মাংস বর্জন করা ভালো। খেতে হলেও কদাচিত্।
* কম তেলে রান্না, ভাপে সিদ্ধ, সেঁকা, রোস্ট করা, আগুনে ঝলসানো, গ্রীল করা মাংস।
* কন নুন যোগ করে রান্না, পাতে নুন না খাওয়া।
* প্রস্তুত খাদ্যের ফুড লেবেল চেককরা এবং প্রতি সার্ডিং-এ ৪০০ মিলিগ্রামের নুনের কম গ্রহণ।
* শরীরে বেশ ওজন থাকলে ওজন কমানো বা ওজন বৃদ্ধি রোধ করা।
* ক্যালোরি ও চর্বি গ্রহণ কমানো।
* আরও বেশি সক্রিয় জীবন যাপন।
* শারীরিকভাবে আরো সক্রিয় হওয়া
ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নিতে হবে কোন শরীর চর্চাটি যথাযথ ও নিরাপদ হবে। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন অর্ধ ঘন্টা এরোবিক ব্যায়াম যেমন- দ্রুত হাটা ভালো ব্যায়াম। একেবারে শরীরচর্চা না করে থাকলে প্রতিদিন ৫ মিনিট করে বাড়িয়ে ৩০ মিনিটে পৌছাতে হবে। মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে সতর্কতার সঙ্গে তা করতে হবে। পশ্চিমাদেশে মদ্যপান সামাজিক আচার তবে খুব কম পান করা উচিত। আমাদের মদ্যপান করা উচিত নয়। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা পুরোপুরি বর্জন করা উচিত স্বাস্থ্যের জন্য হলেও।
প্রয়োজনে ওষুধ
নানা রকমের ওষুধ রয়েছে। প্রত্যেকের জন্য একই রকম রক্তচাপের ওষুধ লাগবে তা নয়, অনেকের লাগে একাধিক ধরণের ওষুধ। রক্তচাপের মান, অন্যান্য সহযুক্ত উপাদান, ওষুধের মূল্য নানা বিবেচনায় ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দিতে হয় ডাক্তারকে।
এসিই ইনহিবিটারস (এনজাইম ইনবিহিটারস)
এনজিওটেনসিনোজেন কনভারটিং এই ওষুধ রক্তনালীকে শিথিল করার মাধ্যমে কমায় রক্তচাপ। শরীরে এনজিওটেনসিন নামে হরমোন উত্পাদন রোধ করে এবং রক্তনালী সংকুচিত করার এই হরমোনের ক্রিয়া রোধ করে কাজ করে এই ওষুধ। এই ওষুধ সে সঙ্গে কিডনিরও সুরক্ষা করে এবং হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে।
এ.আর.বি (এনাজিওটেনসিন রিসেপটার ব্লকার
এই ওষুধগুলোও রক্তনালীকে উম্মুক্ত করে এবং শিথিল করে, এভাবে হ্রাস করে রক্তচাপ। কিডনিও সুরক্ষা করে।
বিটা ব্লকারস
হূদপিন্ডকে ধীরে সুন্দিত করার মাধ্যমে এবং কমজোরে সন্দিত করার মাধ্যমে এই ওষুধগুলো কমিয়ে আনে রক্তচাপ ও শিথিল করে হূদযন্ত্র। বিটাব্লকারস, হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোকও প্রতিরোধ করে।
ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারস
ক্যালসিয়ামকে রক্তনালী ও হূদযন্ত্র থেকে বাহির করে দিয়ে শিথিল করে রক্তনালীদের। এভাবে কমে রক্তচাপ।
ডাইইউরেটিকস্
মূত্রবর্ধক ওষুধ, অনেক সময় বলা হয় ওয়াটার পিল। মূত্রের মাধ্যমে শরীরের বাড়তি পানি ও সোডিয়াম বের করে দেয়। এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ নির্বাচন প্রয়োজন হয়।
Leave a Reply