নূরুদ্দীন রাসেল, সুলতান সুমন ::সিলেটের ছেলে সি বি জামান। ১৯৪১ সালের ১৪ আগষ্ট বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। পিতা ইমদাদুর রহমান চৌধুরী। মাতা মোছা: শরিফা খাতুন চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই প্রথম। শৈশব আর কৈশোর কেটেছে সিলেটের সোবহানীঘাট এলাকায়। প্রাইমারী পাস করেন দূর্গা কুমার পাঠশালা থেকে এবং ১৯৬৩ সনে সিলেট এমসি কলেজ থেকে সাফল্যের সাথে বিএ পাস করেন। ৫৩ বছর বয়সে উর্দু ভাষার উপর শিক্ষা নিয়ে সাফল্যের সাথে পাস করেন। নবম শ্রেণীতে অধ্যয়ণরত থাকাকালিন সময়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। বাবা-মার অনেক বারণ থাকার পরও চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করেন অনায়াসে। এর ফলশ্রুতি হিসেবে তাঁর পরিচালনায় ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করেন পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি “ঝড়ের পাখি”। ছবিটি ব্যাপক ব্যবসা সফল হওয়ায় আর তাকে পিছু ফিরে থাকাতে হয়নি। নির্মাণ করতে থাকেন নানা ছবি । এর মধ্যে ১৯৮২ সালে নির্মাণ করেন “উজান ভাটি ” ও ছোটদেরকে নিয়ে তৈরি করেন “পুরস্কার”ছবি। ছবি দুটি ব্যবসা সফল ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং দুটিই জাতীয় পুরস্কারে পুর¯ৃ‹ত হয়।এরপর নির্মাণ করেন “শুভ রাত্রী”এই ছবিতে তিনি বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি একে একে নির্মাণ করেন “ হাসি,লালগোলাপ,কুসুমকলি সহ নানা ধরণের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তৈরি করেন একেক জন অভিনেতা/অভিনেত্রী। তার হাত ধরে চলচ্চিত্র অঙ্গনে পা রাখেন সুজন ,নবিনা সহ আরো অনেক অভিনয় শিল্পী।
এছাড়া প্রমোদকার গোষ্টির চারটি চলচ্চিত্র নির্মাণে যৌথ পরিচালক হিসেবে কাজ করেন ছবিগুলো হলো ত্রি রতœ , সুজন সখি,দিন যায় কথা থাকে ,হিসাব নিকাশ সহ আরো অনেক ছবি।
বর্তমানে যদিও তিনি বয়সের ভারে নুজ্ব্য তবুও তিনি থেমে থাকেননি চলচ্ছিত্র অভিনয়ে । নানা চলচ্চিত্রে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে তার প্রতিভা এখনও উজ্জল । সি বি জামান একজন সফল চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব । তার পরিচালনায় রুপালী পর্দায় সফল ও উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো এখনও বর্তমান চলচ্চিত্রের কি নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে । বর্তমান প্রজন্ম তাদের সেই রুপালী পর্দার ছবিগুলোকে অনুসরণ করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে দেখা যাচ্ছে ।
সি বি জামান অনেক দুখের সাথে বলেন ,আজ দেশিয় চলচ্চিত্র প্রায় ধ্বংসের ধার প্রান্তে । আর এর মূল কারণ হলো বিদেশি চলচ্চিত্রের অবাধ বিচরণ । তাই এসকল কিছু থেকে উত্তরণের জন্য দর্শক,শিল্প কলাকৌশলী সহ সংস্কৃতিমনাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে । কারণ এক সময় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ছিল দর্শক জনপ্রিয় ।
অভিনেতাদের সম্পর্কে বলেন ,বর্তমানে আমাদের অভিনেতা/অভিনেত্রীরা দেশিয় চলচ্চিত্রে অভিনয়ে এগিয়ে এলে চলচ্চিত্র অঙ্গন ফিরে পাবে তার সেই হারানো অতীত ।
এদিকে , উজান ভাটির সেই গান “বিদেশ গিয়া বন্ধু তুমি আমায় ভুইলো না,চিঠি দিও পত্র দিও জানাইও ঠিকানা রে….আজো দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়। পরবর্তীতে নির্মিত এই গানটি রঙ্গিন উজান ভাটি ছবিতেও গুরুত্বের সাথে ব্যবহার করা হয়। এতেই বুঝা যায় সিলেটের সন্তান সি বি জামান একজন জীবন্ত কিংবদন্তি ব্যাক্তিত্ব। তিনি সিলেটের আরেক রতœ। সি বি জামান পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছেন। সংস্কৃত অঙ্গনে তার পদচারণা উজ্জল হোক এটাই প্রত্যাশা। গত ২ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র করপোরেশন (এফডিসি) ঢাকায় গেলে সিলেটের এই কিংবদন্তির সাথে দেখা হয় এবং তার দেয়া সাক্ষাতকারটি নেয়া হয় ।
Leave a Reply