ডেইলি চিরন্তন:‘যে সমাজে শৃঙ্খলা আছে, ঐক্যের বিধান আছে, সকলের স্বতন্ত্র স্থানও অধিকার
আছে সেই সমাজেই পরকে আপন করিয়া লওয়া সহজ’ -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বজনদের
জীবনটাই হলো সেই রকম এক জীবন। যেখানে থাকবে আনন্দ থাকবে সুপ্ত প্রতিভা
বিকশিত করার এক অন্যিন্দ প্লাটফর্ম তারা কেবল শ্রেনিকর্যক্রমে সীমাবদ্ধ
নয় নবপ্রেরণায় এগিয়ে যেতে চায়। কথায় আছে শীত মানে ভ্রমন, আর ভ্রমন মানে
আনন্দ। স্বজনদের সেতুবন্ধন যদি হয় শিক্ষা সফর তাহলে তো কথাই নেই গান
আড্ডা প্রান খুলে হাসি আর মজা তো হবেই। বিজয়ের মাস শুরু হয়েছে।হেমন্তের
শেষ হতেই শীত শুরু আবগহণ শুরু হয়েছে ইংরেজি বর্ষশেষের শেষ সপ্তাহ বাড়ন্ত
শীতের শুরুতে শীত যখন আগমনী বার্তা তখন কুয়াশার পড়শ ছুঁই ছুঁই। বিজয়ের
মাসে আনন্দ আয়োজনের জয়গান এই যখন বাস্তবতা তখন প্রতিবারের ন্যায় এবার ও
সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজের উদ্যোগে শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়
সিলেটের অদূরে শ্রীমঙ্গলের মাধবপুর লেক । বেশ কয়েকদিন
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঐক্যমতে শিক্ষা সফরের আহ্বায়ক এর দায়িত্বটি নিলেন
কলেজের জনপ্রিয় প্রভাষক রেক্টও মো. শামসুর রহমান । তার অনুপ্রেরণায় ও
বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের সহযোগিতায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে
যাবে শুনে আগ্রহটা একটু বেশিই বেড়ে গেল। শুরু হলো চাঁদা উঠোনোর তারিখ।
নির্ধারণ করা হয় সময় শ্রীমঙ্গলের মাধবপুর লেক এই স্থানের নাম শুনে সবাই
সময়ের পূর্বে চাঁদা দিতে প্রস্তুত।
*শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে সময় নির্ধারণ করা হল গত শুক্রবার ৩রা
ডিসেম্বর সকাল ৭ টা শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্যে কলেজের শিক্ষার্ধীরা শুভ
যাত্রায় রওয়ানা হবে। আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা জানিয়ে দেন, পরদিন অবশ্যই
উপস্থিত থাকতে হবে নতুবা ..? অবাক কান্ড! মাত্র একদিনের কর্মপ্রেরণায়
পরদিন সবাই ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত কলেজের
ক্যাম্পাসে সবাই হাজির। যে সকাল ১০ টার আগে ঘুম থেকে উঠেনি ঐদিন সবাই যেন
প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত ছিল। কে যাবে কার পূর্বে ক্যাম্পাসে আসবে
বলে। মনোবাসনা একটাই। তারুণ্যের সেতুবন্ধনে গার্লস ক্যম্পাসের বনভোজন।
নতুনের আহ্বানে সুর বাজে চলোনা ঘুড়ে আসি অজানাতে যেখানে সাগর এসে হারিয়ে
গেছে..শ্রেনি কক্ষের পাশাপাশি নবীনের মাঝে এই সৃজনশীল অনুপ্রেরণায় নিয়ে
এল সৌন্দর্য্যরে অনন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা। হিমেল শীতের সমীরনে সকালবেলা
ক্যাম্পাস সকালের দিকে দিকে উড়ো স্নিগ্ধ রোদের পরিবেশ আলোর বিকিরিন উকি
দিচ্ছে।
*সময় তখন সকাল ৮টা। শিক্ষার্থীরা অপেক্ষায় আছে। কখন আসবেন কলেজের
চেয়ারম্যান শিক্ষাবিদ মো.মুহির রহমান অধ্যক্ষ পূণেন্দু কুমার রায় রেক্টও
শামসুর রহমান । কথা শেষ হতে না হতেই চলে এলেন সিনিয়ির প্রভাষক খন্দকার
মেহেদী হাসান গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রভাষক নজরুল ইসলাম মবরুর
আহমদ সাজু, মোর্শেদা বেগম, জোবায়ের আহমদ ফারজানা এলাহি রোমিনাসহ
শিক্ষকবৃন্দ। তাদেরকে দেখে শিক্ষার্থীরা অমৃত পাখির মধুর কলকাকলিতে
আনন্দিত হয়ে একধাপ এগিয়ে যাবার প্রত্যেয়ে ব্যাকুল। ঘড়িতে সময় সাড়ে আটটা।
সবাইকে জানিয়ে দেয়া হলো বাসে উঠার জন্য। বনভোজনের নাম শুনে আগ্রহীদের
সংখ্যা ৯০ থেকে ১২৪ জনে এসে দাঁড়ায়। তাই গাড়ী নির্ধারণ করা হলো দুইটা।
সবাই যখন গাড়িতে নিজ নিজ স্থানে বসে পড়ল তখন শিক্ষকদের অনুমতিক্রমে
ক্যম্পাস থেকে শুভ যাত্রা শুরু শর্মিলা বর্মণ,সাদাফ,সাদিয়া ,রিয়া নৌশিন,
মন্নি মাহি’র প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় তারুণ্যের জয়গান ভেসে উঠে। কবির
বাণী-‘দুর্গম গিরি কাস্তার মরু দুস্তর পারাবার..লঙ্গিত হবে রাত্রি নিশিতে
যাত্রীরা হুশিয়ার.. প্রকৃতির কোলে শীতের পড়শ কমে উড়ন্ত রোদের ছাপ ধীরে
ধীরে বাড়তে থাকে। হালকা গরমে বনভোজনের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে উভয় গাড়ির মাঝে।
একে একে সবাই সঙ্গীতশিল্পী। সবার কণ্ঠে মধুর সুরে তারুণ্যের হাড় কাঁপানো
গান। এদিকেকলেজ ক্যাম্পাসের মিরের ময়দানে বাসস্ট্যান্ড তথা গেরেজের সামনে
ভোর ৬টায় সবার জড়ো হওয়ার কথা থাকলেও সবাই নিযেকে সাজিয়ে, গুছিয়ে আসতে
সকাল ৭টা বেজে যায়। পরে হুড়মুড় করে ক্যাম্পাস থেকে বাসে উঠার সাথে সাথেই
শুরু হয় আনন্দ ভ্রমণ। গাড়ির ভিতরে চলে নিযেদের গ্রুপ ছবি তোলার হিড়িক যা
ছিল চোঁখে পড়ার মতো। ক্যাম্পাসের ছাত্র ও চাকুরি জীবনে যারা বেসম্ভব
সিঙ্গার হিসেবে খ্যাত তারাও “আমিও পারি” বলে নিজেকে জাহির করতে জোর গলায়
বেসুরে সুরে জুড়ে দেয় জনপ্রিয় সব গান। যা বাসের ভেতর এক অন্যরকম পরিবেসের
সৃষ্টি করে। এতে তাল মেলায় অন্য সহপাঠিরাও। আর তাইতো চিৎকার চেঁচামেচি
করতে গিয়ে অনেকে তাদের নিজস্ব সুন্দর সুরটিও সাময়িকের জন্য খুঁইয়েছেন।
গান-বাজনা করে কয়েক ঘন্টা সবাইকে বিনোদনেও ভাসিয়েছে অন্যজগতের কোকিল
হিসেবে মনি,নিশাত,নিলিমা ,ইনাছ,
*বুশরা,জুই.শশি,ফাহিয়া,ইভা,ফারজা
করতে সকলেই যেন তখন সম্ভাবনাময় সঙ্গীতশিল্পী। মাতিয়ে তুলেন শিক্ষা সফরের
ইতিহাসের বন্ধন। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই গাড়ির পেছন থেকে অনুরোধ শিক্ষকরা
গান গাইবেন। তাদের মধুর কণ্ঠে জেগে উঠে স্বজনদের মৈত্রির বন্ধন। তখন
পত্রপল¬বে শিক্ষা সফরের গাড়িকে এক অনির্বাচনীয় শোভায় সুরে ভেসে উঠে
তারুণ্যের মন। উপস্থিত সম্ভাবনময়ী শিল্পীদের সুর লহরী বাতাসে অনুরণিত করে
তোলে সবাইকে সময় যে আনন্দের মাঝে কি করে গেল তা কেউ জানে না। হঠাৎ
ড্রাইভার বলে উঠলেন নামতে হবে। বের হয়ে দেখা যায় পিকনিক স্পট। সামনে পা
বাড়িয়ে দেখা যায় শ্রীমঙ্গলের মাধবপুর । সবাই বেড়িয়ে পড়ল প্রকৃতির
সান্নিধ্যে। কেউ শিক্ষকদের সাথে সেলফি তুলছে, কেউ কেউ আড্ডা দিতে শুরু
করলো বন্ধুদের সাথে। সবুজ প্রকৃতির পরিপূর্ণ শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির মধুর
মুর্তি উপভোগ করে চলে এল দুপুরের খাবার খেতে। সবাই সবার সাথে শ্রীমঙ্গলের
মাধবপুর গুণগান করতে ব্যস্ত। এই সময় শিক্ষার্থী মুন্নি বলে সত্যিই কবি
বলে গেছেন-‘‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না’কো তুমি….. আমার
জন্মভূমি।’’ তাঁর কথা কেড়ে নিয়ে নুসরাত বলতে ভুল করেনি- ‘‘স্বার্থক জন্ম
আমার জন্মেছি এই দেশে…তোমায় ভালোবেসে।’’ আড্ডা, গান আর ভালোবাসার মধ্য
দিয়ে শেষ হয় এই শিক্ষা সফর।
লিখেছেন
ইতি/সাদাফ/সাদিয়া/নাঈমা/পলি..
সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযক্তি কলেজের
শিক্ষার্থী
Leave a Reply