শংকা আর ভয়ের মধ্যদিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলে ভোটগ্রহণ। প্রায় ৫ লাখ ভোটারের ভোটগ্রহণের এ বিশাল কর্মযজ্ঞে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটানার খবর পাওয়া যায়নি।
এতে প্রধান দু’দলের প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সন্তুষ্ট ভোটাররাও।
শান্তিপূর্ণ এ নির্বাচনে ভোট দিতে পেরে ভালো অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ভোটাররা। এসময় তাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। কম যাননি প্রবীণরাও। ছেলের কাঁধে চড়ে ১১০ বছর বয়সী ভোটারও এসেছেন ভোট কেন্দ্রে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বাবার কবর জিয়ারত করে নিজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। সকাল ৯টায় শহরের মাসদাইর পৌর কবরস্থানে প্রয়াত বাবা আলী আহম্মদ চুনকার কবর জিয়ারত করে তিনি। এরপর সাড়ে নয়টায় ১৬নং ওয়ার্ডের দেওভোগ শিশুবাগ স্কুল কেন্দ্রে নিজের ভোট দেন।
সকাল সোয়া ৮টার দিকে নগরীর ১৩নং ওয়ার্ডের মাসদাইরের আদর্শ স্কুল ভোটকেন্দ্রে নিজের ভোট দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।
২টা ৪০ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। এসময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী তার সঙ্গে ছিলেন। তারা নৌকার পক্ষে স্লোগান দেন। এসময় তিনি বলেন, আশানুরূপভাবে আমরা বলতে পারি, আমরা জয়লাভ করব।
শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রমাণ করেছে, প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াই দলের স্বার্থে, শেখ হাসিনার স্বার্থে কিভাবে ভোট দিতে হয়। আমি আশা করি, জনগণ শান্তির পক্ষে ভোট দেবে। নৌকার জয় হবে।
‘ভীতি ছিল, নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরছি’
‘ভোটে মারামারি হয়। টিভিতে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই দেখেছি। এজন্য ভোট নিয়ে একটা ভীতি ছিল। কিন্তু বাস্তবে জীবনের প্রথম ভোট দিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরছি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারায় ভালো লাগছে।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জীবনে প্রথমবারের মত ভোটাধিকার প্রয়োগ করে এভাবেই নিজেদের সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভোটাররা।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কয়েকজন নতুন ভোটারের কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, ‘আমরা কখনও ভোট দেইনি। আগে শুধু টিভি বা পত্রপত্রিকায় নির্বাচন বা ভোট নিয়ে মারামারি, কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাইসহ নানা ঘটনা দেখেছি। কিন্তু জীবনে প্রথমবার সরাসরি ভোট দিতে এসে ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরেছি। ভালো লাগছে।’
ছেলের কাঁধে চেপে ভোট দিলেন শতবর্ষী
কনকনে শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকে নানা বয়সী ভোটাররা কেন্দ্রে এসে সুশৃংখলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের এ নির্বাচন নিয়ে যে উচ্ছ্বাস, তা ১১০ বছর বয়সী মহিউদ্দিন মিয়াকে দেখেই বোঝা যায়। ছেলে নাসির উদ্দিনের (৩২) কাঁধে চেপে তিনি ভোট দিতে এসেছেন। সকাল ১১টার দিকে মিজমিরি দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা কেন্দ্রে এসে ভোট দেন। তিনি ২ নং ওয়ার্ডের মিজমিরি পশ্চিমপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন।
ভোট শেষে মহিউদ্দিন মিয়া যুগান্তরকে জানান, এটাই হয়তো তার জীবনের শেষ ভোট। তাই অসুস্থতা সত্ত্বেও ছেলের কাঁধে চড়ে তিনি ভোট দিতে এসেছেন।
Leave a Reply