ডেইলি চিরন্তন:নিহার রঞ্জন পুরকায়স্থ এডভোকেট:বিচারপতি জ্যোতির্ময় নারায়ন দেব চৌধুরী (জে,এন, দেব)সিলেট তথা বাংলাদেশের
আইন ও বিচারাঙ্গনের একটি উজ্জল নক্ষত্র। বিচারাঙ্গনের আকাশে উদিত হয়ে তাহার আলোকছটায়
চর্তুদিকে আলোকিত করতে না করতেই খসে পড়লেন। তিনি সিলেটের একটি ঐতিহ্যবাহী
পরিবারের সন্তান।
বিচারপতি জ্যোতির্ময় নারায়ন দেব চৌধুরী ১৫/০৩/১৯৬৫ ইংরেজী তারিখে সিলেট
শহরের কাষ্টঘর মহল্লার ৪০ কাষ্টঘর স্থিত বাসায় জন্ম গ্রহন করেন। তাহার পিতার নাম জিতেন্দ্র
নারায়ন দেব, মাতা খুশী রানী চৌধুরী, পিতামহ জয় নারায়ন দেব চৌধুরী। তাহার গ্রামের বাড়ী
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কাইস্থগ্রাম গ্রামে। জ্যোতির্ময় নারায়ন দেব চৌধুরী শিক্ষাজীবন শুরু করেন
সিলেটের ব্ল ুবার্ড স্কুলে। তৎপর কিছুদিন মেঘালয়ের শিলং এর সেন্ট পিটার্স স্কুলে অধ্যয়ন করেন।
তিনি সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক, সিলেটের এম সি কলেজ হতে উচ্চ
মাধ্যমিক ও স্নাতক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সিলেট ল কলেজ থেকে এল, এল , বি
ডিক্রী অর্জন করেন। ১৯৯০ ্ ইংরেজীতে তিনি সিলেট জেলা বারে যোগদান করেন। সিলেট জেলা
বারে যোগদান করেই তিনি সিলেট জেলা বার সমিতির সহ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অতঃপর
তিনি বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও পরে আপীল বিভাগের আইনজীবী হিসাবে
তালিকা ভূক্ত হন। ২০১৫ ইংরেজীতে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে শপথ
গ্রহন করেন। তিনি বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হওয়ার পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদান করেন।
তিনি শ্রম আইনের উপর ১টি বই লিখেন।
তাহার পিতা জিতেন্দ্র নারায়ন দেব একজন প্রথিতযশা আইনজীবী ছিলেন। তিনি নিম্ন
আদালত থেকে দেশের সর্বোচ্চ্য আদালতে আইন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। তিনি জেলা বার সমিতিতে
অনেক বার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন এবং সিলেটের হাইকোর্ট বেঞ্চের ২ বার সভাপতিও নির্বাচিত
হন। তিনি ৫৪ বৎসর আইন পেশায় নিয়োজিত থেকে ১৯৯৫ ইংরেজীর ৫ই জুন ৮৪ বৎসর বয়সে
মৃত্যুবরণ করেন। তাহার মা খুশী রানী চৌধুরী একজন নারী নেত্রী। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ মহিলা
পরিষদ সিলেট শাখার সভানেত্রী ছিলেন।
জ্যোতির্ময় নারায়ন দেব চৌধুরীর পিতামহ জয় নারায়ন চৌধুরী ও আইনজীবী হিসাবে
আইন পেশায় ৫০ বৎসর পূর্তি করেন। তাহার পিশতুতো ভাই সবিতা রঞ্জন পাল বাংলাদেশ সুপ্রীম
কোর্টের একজন প্রখ্যাত আইনজীবী ছিলেন। সিলেটের সারদা মেমোরিয়েল হলের প্রতিষ্ঠাতা সারদা
চরন শ্যাম সিলেটের প্রথম বি এ, বি এল। তিনি জ্যোর্তিময় নারায়ন দেব চৌধুরীর পিতার মামা
ছিলেন। বিচারপতি জ্যোর্তিময় নারায়ন দেব চৌধুরীর বড়মামা ব্যোমকেশ ঘোষ ও একজন
আইনজীবী এবং মৌলবীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ছিলেন।
বিচারপতি জ্যোতির্ময় নারায়ন দেব চৌধুরী ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক।
কন্যা জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী (রিয়া) বর্তমানে লন্ডনে ব্যারিষ্টারী পড়ছে। বিচারপতি জ্যোতির্ময়
নারায়ন দেব চৌধুরী বিগত ১৫/১২/২০১৬ ইংরেজী তারিখে ইহজগতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে
পরপারে চলে গেলেন। তার এই আকাস্মিক চলে যাওয়ায় আইন ও বিচারাঙ্গনের সবাই স্তম্বিত।
তাহার মৃত্যুর খবর চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর সুগ্রীমকোটেৃর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আব্দুল
ওয়াহ্হাব মিঞা সহ হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা Ñ উল হক, বিচাপতি এস,এম, মজিবুর
রহমান, বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবির, বিচারপতি খিজির আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশের এটর্নী
জেনারেল মাহবুবে আলম, অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সুপ্রীম কোর্ট বারের
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ আইনজীবী আত্মীয়স্বজন সুহৃদ স্কয়ার হাসপাতালে ছুটে যান।
পরদিন তাহার মরদেহ সুর্প্রীম কোর্টে নেয়া হলে সুর্প্রীম কোর্টের বিচারপতি বৃন্দ ও আইনজীবী সমিতির
কর্মকর্তা ও সদস্য বৃন্দ তাহার কফিনে ফুল দিয়ে শেষ বিদায় জানান। অতঃপর তাহার মরদেহ
সড়কপথে সিলেটে নিয়ে সিলেট জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে উপস্থিত
বিচারক বৃন্দ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি , সাধারন সম্পাদক সহ উপস্থিত আইনজীবী বৃন্দ
তাহাকে ফুলদিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান । পরে সিলেটের চালিবন্দরস্থিত শ্মশান ঘাটে তাহার অন্ত্যোষ্টি
ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তাহার অকাল মৃত্যুতে জাতীর অপূরনীয় ক্ষতি হল ।
Leave a Reply