নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের দুই মামলায় প্রধান আসামি নূর হোসেন, র্যাব কমকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ ২৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।
এ মামলার বাকি নয় আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রায়ে মামলার প্রধান আসামি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, কমান্ডার এম এম রানা, মেজর আরিফ, ল্যান্স নায়েক বেলাল, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দ বালা, সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবীর, নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী, আবুল বাশার, মোর্তুজা জামান (চার্চিল), সেলিম, সানাউল্লাহ ছানা, ম্যানেজার শাহজাহান ও ম্যানেজার জামাল উদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
আর বিভিন্ন মেয়াদে নয়জনকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তারা হলেন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ (অপহরণের দায়ে ১০ বছর),এএসআই বজলুর রহমান (সাক্ষ্য-প্রমাণ সরানোর দায়ে ৭ বছর), এএসআই কামাল হোসেন (অপহরণের দায়ে ১০ বছর),কর্পোরাল মোখলেছুর রহমান (অপহরণের দায়ে ১০ বছর), কর্পোরাল রুহুল আমিন (অপহরণের দায়ে ১০ বছর), হাবিলদার নাসির উদ্দিন (সাক্ষ্য-প্রমাণ সরানোর দায়ে ৭ বছর), কনস্টেবল বাবুল হাসান (অপহরণের দায়ে ১০ বছর), কনস্টেবল হাবিবুর রহমান (অপহরণের দায়ে ১০ বছর, সাক্ষ্য-প্রমাণ সরানোর দায়ে ৭ বছর)ও সৈনিক নুরুজ্জামান (অপহরণের দায়ে ১০ বছর)।
রায় ঘিরে সকাল থেকে আদালতপাড়া ও এর আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়।
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে সকাল পৌনে ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির করা হয় নূর হোসেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট (চাকরিচ্যুত) কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, চাকরিচ্যুত কমান্ডার এম এম রানা, চাকরিচ্যুত মেজর আরিফ ও চাকরিচ্যুত ল্যান্স নায়েক বেলালকে।
প্রায় একই সময়ে মামলার বাকি ১৮ আসামিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে আদালতে নেয়া হয়।
গত ৩০ নভেম্বর দুই মামলার ওপর শুনানি শেষে ১৬ জানুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। ওইদিন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনসহ ২৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার ৩৫ আসামির মধ্যে ২৩ জন কারাবন্দি আছেন। এদের মধ্যে ২১ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি দিয়েছিলেন।
পলাতক আসামিরা হলেন, কর্পোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান হাবিব এবং নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম, সানাউল্লাহ ছানা, ম্যানেজার শাহজাহান ও ম্যানেজার জামাল উদ্দিন।
এ মামলায় সাক্ষী করা হয় ১২৭ জনকে। ১০৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। এদের মধ্যে ২০ জন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন।
তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরদিন মেলে আরেকটি লাশ।
নিহত বাকিরা হলেন, নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।
এরপর ২৮ এপ্রিল নিখোঁজ নাসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি প্রথম মামলা করেন। আর ৮ মে নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দ্বিতীয় মামলা করেন।
২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়।
Leave a Reply