অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের জন্য আবেদনের সময়সীমা তুলে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তির প্রকৃত মালিক যেকোনো সময় আবেদন করতে পারবেন। ৮ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে আদেশের কপি তিন পার্বত্য জেলা ছাড়াও সব জেলা প্রশাসককে (ডিসি) পাঠানো হয়েছে। এর ফলে জন হয়রানি ও ভোগান্তি কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই আদেশে বলা হয়, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন ২০১৩-এর মাধ্যমে ‘খ’ তফসিল বাতিল হওয়ার পর ১২ জুলাই পরিপত্রের মাধ্যমে ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তির রেকর্ড সংশোধনের জন্য ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময়সীমা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ফলে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্তহীন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের ধারা ২৮ক-এর উপধারা (১) মূলে বাতিলকৃত ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তিতে উপধারা ৪ অনুযায়ী সরকার বা কোনো ব্যক্তির স্বত্ব বা স্বার্থ সম্পর্কে প্রচলিত আইনে প্রতিকার লাভে কোনো আইনগত বাধা থাকবে না বলে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। এ আইনের বিধানে সরকার বা কোনো ব্যক্তির স্বত্ব বা স্বার্থ অনুযায়ী প্রতিকারের কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সময়সীমাসংক্রান্ত বিষয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি না করে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের ধারা ২৮ক-এর উপধারা (১) মূলে বাতিলকৃত ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তিতে উপধারা ৪ অনুযায়ী সরকার বা ব্যক্তির আইনানুগ প্রাপ্য স্বত্ব বা স্বার্থ সংরক্ষণে প্রচলিত আইন অনুযায়ী কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য বলা হয় আদেশে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত রোববার যুগান্তরকে বলেন, এ আদেশের ফলে জন হয়রানি ও ভোগান্তি কমবে। কারণ আগের বিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেকর্ড সংশোধনের আবেদন না করতে পারলে এ জন্য হাইকোর্টে রিট করতে হতো- যা ছিল হয়রানি, ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এই সময়সীমা তুলে দেয়ার ফলে জনগণের আর হয়রানিতে পড়তে হবে না এবং অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে না। এটি একটি ইতিবাচক দিক। তিনি আরও বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন একাধিকবার সংশোধন হলেও তা বাস্তবায়নে তৃণমূলে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এবার আশা করছি, এ সমস্যার সমাধান হবে।
জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর ‘ডিফেন্স অব পাকিস্তান রুলস-১৯৬৫’ অনুসারে ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেসব নাগরিক পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়, তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে শত্রু সম্পত্তির নাম রাখা হয় অর্পিত সম্পত্তি। এর পরিমাণ ছয় লাখ ৬০ হাজার ২২১ একর। এর মধ্যে প্রত্যর্পণযোগ্য সরকারের দখলে থাকা ‘ক’ তালিকাভুক্ত সম্পত্তির পরিমাণ এক লাখ ৮৯ হাজার ৬৬২ একর ও সরকারের দখলের বাইরে ‘খ’ তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ চার লাখ ৭০ হাজার ৫৫৮ একর। বৈধ উত্তরাধিকারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যপর্ণ আইন করা হয় ২০০১ সালে। নানা জটিলতায় প্রণয়নের পর আইনটি পাঁচবার সংশোধন করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দু’বার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় তিনবার। এই আইনের আওতায় অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১০ সালে। এই প্রক্রিয়ায় সারা দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে ভুক্তভোগীদের দাবি, এখন পর্যন্ত কোনো দাবিদারের কাছে সম্পত্তি প্রত্যর্পণ করা হয়নি। এ অবস্থায় গত বছরের ২৪ অক্টোবর সপ্তমবারের মতো আইনটি সংশোধনের জন্য পাঠানো হলে মন্ত্রিসভা তা ফেরত পাঠায়।
Leave a Reply