বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :::
ডেইলি চিরন্তন অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য সিলেটসহ দেশ বিদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আগ্রহীরা ইমেইলে যোগাযোগ করুন
শিরোনাম ::
শিশু মুনতাহাকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করা হয়,গ্রেপ্তার ৪ রেকর্ড গড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ট্রাম্প ট্রাম্পকে সমর্থন জানালেন জো রোগান আবু সাঈদ হত্যা: বেরোবির ২ শিক্ষকসহ ৯ জন বহিষ্কার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নতুন চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা মজুমদার কোন শিক্ষায় বড় করছেন মেয়েকে, জানালেন ঐশ্বরিয়া বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্যাডেট ফোরামের ৬ষ্ট প্রতিষ্টা বার্ষিকী উদজাপন ‘মাজার ভাঙচুর করে সুন্নি জনতাকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না’ জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টার কঠোর বার্তা পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় বাংলাদেশের মেসির মাঠে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন মায়ামি কোচ বন্যায় আরো মৃত্যু, সবচেয়ে বেশি কুমিল্লায় প্রাথমিকের ‘শপথ বাক্য’ থেকে বাদ গেল বঙ্গবন্ধুর অংশ অন্তর্বর্তী সরকারে কে কোন দপ্তর পেলেন নোবেল বিজয়ী থেকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য উপদেষ্টা যারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার সিদ্ধান্ত ৪২ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ আশঙ্কা ছিল এ ধরনের একটা আঘাত আসবে : প্রধানমন্ত্রী
মাদকের জন্য পা হারিয়ে এখন লড়ছেন মাদকের বিরুদ্ধে

মাদকের জন্য পা হারিয়ে এখন লড়ছেন মাদকের বিরুদ্ধে

50936_f1সহপাঠীদের কেউ সরকারি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, কেউ নামকরা চিকিৎসক। কেউ সেনাবাহিনীর উচ্চ পদের কর্মকর্তা হয়েছেন। আবার কেউ স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়ে গেছেন সাফল্যের স্বর্ণশিখরে। কিন্তু মনি’র কোনো উত্থান নেই। কেবলই পতন। ১৯৯৪ থেকে ২০১৪ সাল। এই দীর্ঘ ২০ বছর তিনি ডুবে ছিলেন নেশার অন্ধকার জগতে। যত প্রকার নেশাদ্রব্য আছে তার সবগুলোতেই বিচরণ ছিল তার। তার হাত ধরে নেশার অন্ধকার জগতে পা বাড়িয়েছে বহু কিশোর, যুবক। অবৈধভাবে দু’হাতে রোজগার করেছেন টাকা-পয়সা। কিন্তু নেশার কাছে সবই হার মেনেছে। সব পেয়েও হারিয়েছেন নেশার ভয়াল থাবায়। এমনকি ধরে রাখতে পারেননি প্রিয়তমাকেও। জীবনকে নিয়ে গেছেন একেবারে মৃত্যুর কিনারে। শেষ পর্যন্ত প্রাণে বেঁচেছেন ঠিকই কিন্তু হারিয়েছেন শরীরের মূল্যবান অঙ্গ। একবার নয়, দুই দুইবার পা কেটে ফেলতে হয়েছে তার। কোনোরকম পচনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে গোটা শরীর। একেবারে উরু থেকে কেটে ফেলা হয়েছে বাম পা-টি। শেষ পর্যন্ত নেশার রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হয়েছেন মনি। নিজেকে জড়িয়েছেন মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার আন্দোলনে। এখন তিনি ক্র্যাচের সহযোগিতায় এক পা নিয়ে খুঁড়িয়ে চলেন। ব্যবসা করছেন। পেছনে তার ধূসর অতীত। সেই অতীতের দিকে ফিরে তাকাতে চান না আত্মবিশ্বাসী মনি।  বলেন, বেঁচে আছি এই পরম সৌভাগ্য। তার সঙ্গীদের বেশ কয়েকজন নেশার ছোবলে মারাও গেছেন। এখনো নেশায় বুঁদ হয়ে থাকেন কেউ কেউ। একসময়ের তার সহপাঠীরা জানান, সে তাদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী ছিল। পড়াশুনায় খুব কম সময় দিতো। তাতেই ভালো রেজাল্ট করতো। তাদের ভাষায়- যে উচ্চতায় মনি পৌঁছানোর কথা ছিলো, সে সুযোগ হয়তো এখন আর নেই। কিন্তু তার মেধা হারিয়ে যায়নি। সে মাদকমুক্ত ও সুদমুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছে। আশা করি, সে সফল হবে। অনেকের চেয়ে সমাজকে অনেক বেশি কিছু দিতে পারবে।
আতিকুল কবির মনির বাড়ি জামালপুর জেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত নান্দিনা গ্রামে। বাবা এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলী ছিলেন। তারা ৪ ভাই ও ২ বোন। ভাইবোনেরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তার বয়স এখন ৩৯ বছর। বৃহস্পতিবার দীর্ঘক্ষণ কথা হয় মনির সঙ্গে। তিনি তুলে ধরেন, তার জীবনের নানা কাহিনী। কাহিনীজুড়ে জীবনের একটি বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকার গল্প। মনি শুরু করেন তার পারিবারিক ঐতিহ্য দিয়ে। বলেন, গ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। পড়ালেখায় ছিলেন প্রথম সারির। নবম শ্রেণি শেষ করে ১০ম শ্রেণিতে ওঠতেই মাথায় ভূত চাপে সে বছরই এসএসসি পাস করার। অন্য একটি বিদ্যালয়ের অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ১৯৯৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। ফলাফল ফার্স্ট ডিভিশন। কিন্তু এতে তৃপ্ত হননি তিনি। ফিরে আসেন আগের বিদ্যালয়ে। নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে অংশ নেন এসএসসিতে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার পান ৮শ’ নম্বর। এরপরই বাবার কর্মস্থলের সুবাদে ভর্তি হন যশোরের একটি কলেজে। মনি বলেন, তারা থাকতেন যশোরের চাকলা পাড়ার রেলগেট এলাকায়। সেখানেই তার নেশার হাতেখড়ি। এলাকার বন্ধুদের সংস্পর্শে ফেনসিডিল দিয়ে নেশার জগতে প্রবেশ তার। এরপর আস্তে আস্তে গাঁজা, আফিম, বাংলা মদ, বিদেশি মদ, হেরোইন, ঘুমের ট্যাবলেট, প্যাথেড্রিন ইনজেকশনসহ হাজারো নেশাদ্রব্য থেকে অতি আধুনিককালের ইয়াবায় আসক্তি। মনি বলেন, তখনো পরিবার জানতে পারেননি তিনি নেশাসক্ত। কিন্তু যখন এইচএসসি পরীক্ষায় ড্রপ দেন তখন তারা বুঝতে পারেন। পরবর্তীতে পরিবারের কঠোর অনুশাসনে নেশার মাত্রা কমিয়ে দিলেও বাদ দেননি। তার ভাষায়- যখন গাঁজা সেবন করতাম খুব দ্রুত পড়া মুখস্থ হতো। তাই লুকিয়ে-আড়ালে-আবডালে গাঁজা সেবন করতাম। পরে বুঝতাম, পড়া দ্রুত মুখস্থ করতে পারলেও কিছু সময় বা একদিন পর তার কিছুই মনে থাকে না। পরের বছর ১৯৯৭ সালে এভাবেই এইচএসসি পাস করি। এবার শুধু সাদামাটা একটা ফার্স্ট ডিভিশন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকি। এরপর বাবা বদলি হয়ে ঢাকায় আসলেন। আমিও আসলাম। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং শুরু করি। অল্প অল্প মাদক নিই তখনো। এরইমধ্যে তাদের নিজ গ্রামের নান্দিনা শেখ আনোয়ার হোসেন মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। ক্ষমতার মোহে এলাকায় গিয়ে বি.কম ভর্তি হলাম। তখনো নেশাসক্ত। কিন্তু সেটা এলাকার মানুষ জানতো না। ১৯৯৮ সালে ছাত্রসংসদের ভিপি পদে নির্বাচিত হলাম। জড়িয়ে পড়লাম রাজনীতিতে। পারিববারিক ঐতিহ্যের কারণে সবকিছুই আমার জন্য সহজ ছিলো। ভিপি হওয়ার পর নিজের প্রভাব বেড়ে গেলো। হাতে আসলো টাকা-কড়ি। ছোটখাটো চাঁদাবাজিও আমার নামে হতো। গ্রামটি তখন মাদকদ্রব্যের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতো মাদক ব্যবসায়ীরা। আমি নেশার রাজ্য পেয়ে গেলাম। আগে নেশার টাকা যোগাড় করতে নানা ফন্দি-ফিকির করতে হতো। কিন্তু ভিপি হওয়ার পর অগাধ সম্মান (!), টাকা-পয়সা, প্রভাব-প্রতিপত্তি। তখন আর টাকা দিয়ে মাদক কিনতে হতো না। তারা তাদের ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালানোর জন্য আমাকে সরবরাহ করতে লাগলো। এলাকার ছোট ভাই-বড় ভাই-বন্ধুবান্ধব দিয়ে আমার একটা নেশার জগত গড়ে ওঠলো। এই জগতে ছিলো ৩০-৪০ জন কিশোর-যুবক। বাংলা মদ থেকে ইয়াবা। মদের পার্টি। সবই ছিলো ওপেন সিক্রেট। কেউ সাহস করে থামাতে পারেনি তাদের। মনি বলেন, শুধু পরিবারের বিরাগভাজন ছিলেন তিনি। কেউ তাকে বিশ্বাস করতো না। একসময় ক্ষমতার পালাবদল হয়। তখনই নিজের মধ্যে উপলব্ধি আসে। সবকিছু ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
মনি বলেন, এর আগে কখনোই মনে হয়নি আমি নেশাসক্ত। মনে হয়েছে, আমি চাইলেই ছেড়ে দিতে পারি। ২০০১ সালে কলেজে সংঘর্ষের সময় পুলিশকে মারপিঠ করে একটি কক্ষে আটকে রেখে পালিয়ে যাই। তখন বি.কম ফাইনাল পরীক্ষা চলছিলো। থানা থেকে বাবাকে খবর দিলো। তিনি ঢাকায় নিয়ে আসলেন। কিন্তু ঢাকায় আসার পর প্রথম বুঝতে পারি আমি নেশা না নিয়ে থাকতে পারছি না। অসুস্থ হয়ে পড়ছি। রাতে ঘুম হচ্ছে না। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। মাদক নেয়ার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছি। প্রথমবারের মতো বুঝতে পারি আমি নেশাসক্ত। পরিবার বিষয়টি টের পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠি। কিন্তু মুশকিল হলো- নেশা থামানোর জন্য তারা যে ওষুধ দিয়েছে তাতেই আসক্ত হয়ে পড়েছি। ওষুধ না নিয়ে আর থাকতে পারছি না। সেটাও এক প্রকার নেশা। তখন মনে হয়েছে এরচেয়ে মাদকই ভালো। ওষুধ থামিয়ে আবার নেশাদ্রব্য নেয়া শুরু। আগারগাঁওয়ের বিএনপি বস্তির মাদক বিক্রেতাদের নিয়মিত কাস্টমার আমি। সেখানে গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিলের মতো হাজারো নেশাদ্রব্যের তালিকায় যুক্ত হলো প্যাথিড্রিনের ইনজেকশন। মাঝে মাঝে মাদক নিতে চলে যেতাম তেজগাঁওয়ের নাবিস্কোর পেছনে। এই অবস্থায় পরিবার তাকে সাভারের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে গেল। সেটা ২০০২ সাল। সেখানে ৪ মাস ছিলাম। এরপর সুস্থ হয়ে ফিরে আসি। এরইমধ্যে ১৯৯৯ সালে একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। পুর্নবাসন কেন্দ্র থেকে ফিরে এসে দেখি তার বিয়ে হয়ে গেছে। মাদকাসক্ত হওয়ায় আমার এবং মেয়েটির পরিবার মিলে তাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেয়। এ অবস্থায় নিজের মধ্যে হতাশা চলে আসলো। দেখি সহপাঠীরা ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। কেউ কেউ ব্যবসায় উন্নতি করছে। আমি কিছুই করি না। সবমিলে দারুণ হতাশায় কাটে সময়। নিজেকে আর বেশিদিন ধরে রাখতে পারিনি। ৪ মাস পর আবারো নেশায় ডুবে গেলাম। এভাবে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চললো। ঘুম-খাওয়া-গোসল ঠিকমতো না করলেও মাদক নিতে হতো নিয়মিত। এই সময়ে অন্তত ১৫-২০ বার বিভিন্ন মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২০০৬ সালে মাদকাসক্ত এলাকার এক ছোট ভাই পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে এসে নিজেই একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। সেখানে মাসখানেক রোগী হিসেবে এবং পরে ৮-৯ মাস স্টাফ হিসেবে কাজ করি। সুস্থ হলে ঢাকায় চলে আসি। কোরিয়া যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিই। পাশাপাশি যাত্রাবাড়ী এলাকায় মোবাইলের দোকান দেই। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবারো এলাকায় গিয়ে রাজনীতিতে জড়াই। বিয়ে হয়ে যাওয়া প্রেমিকার সঙ্গেও যোগাযোগ হয়। তখন সে কন্যা সন্তানের মা। কথাবার্তার এক পর্যায়ে ২০০৯ সালে সে তার মেয়েকে নিয়ে চলে আসে। কিন্তু আমার পরিবার মেনে নেয়নি। মেয়েটি ফিরে যায়। এ ঘটনার পর আবারো চলে যাই নেশার জগতে। মনি বলেন, এরই মধ্যে ২০১০ সালে তিনি বিয়ে করেন। ২ মাস পুনর্বাসন কেন্দ্রে, ১ মাস বাড়ি এভাবেই চলছিলো। স্ত্রী নিষেধ করতো নেশা করতে। কান্নাকাটিও করতো কিন্তু পুরোপুরি ছাড়তে পারিনি। নেশার ইনজেকশন নেয়া হতো নিয়মিত। ২০১৪ সালে এক কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। যখন মেয়ের বয়স একমাস তখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মনি। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। চিকিৎসকরা জানান, ইনজেকশনে মাদক নিতে নিতে তার শিরা বন্ধ হয়ে গেছে। রক্ত চলাচল করতে পারছে না। বাম পায়ে পচন ধরেছে। এখন সেটি কেটে ফেলতে হবে। বিকল্প কোনো নেই। সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রথমে হাঁটুর একটু ওপরে থেকে কেটে ফেলা হয়। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ না হওয়ায় আবারো কাটা হয়। এবার পা’টা একেবারে উরু থেকে কেটে ফেলা হয়। এতোক্ষণ স্বাভাবিক থাকলেও এ কথা বলতে বলতে এক সময় কণ্ঠটা ধরে আসে মনির। বলতে থাকেন, আফসোস হয়। আজ অনেক উপরে পৌঁছানোর কথা ছিলো। বন্ধুরা অনেকে অনেক ভালো পজিশনে আছে। বন্ধুরা তাকে ভালোবাসে উল্লেখ করে জানান, বিভিন্ন সময় তারা আমাকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। আমি মোহাচ্ছন্ন ছিলাম। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, অতীত মনে করতে চাই না। আফসোস হলেও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া- যে বেঁচে আছি। নেশামুক্ত আছি। তার সঙ্গে নেশা করতো বেশ কয়েকজন মারা গেছে বলেও জানান তিনি। অনেকে এখনো নেশাসক্ত। কেউ জেল খাটছে। কেউ ছাড়া পাচ্ছে আবার জেলে যাচ্ছে। চেষ্টা করছি তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে। তিনি বলেন, এখন ব্যবসা করছি। সাইকেলের শো-রুম দিয়েছি। গ্যাস, স্যানিটারি, টাইলসেরও ব্যবসা করছি। ভালো চলছে। সবচেয়ে বড় পাওয়া- এখন আমাকে সবাই বিশ্বাস করে। সবাই ভালোবাসলেও আগে কেউ বিশ্বাস করতো না। বলেন, এখন একটাই লক্ষ্য, এলাকাকে মাদকমুক্ত করা। এলাকায় আগের থেকে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবী কমেছে উল্লেখ করে বলেন, এখনো পুরোপুরি সফল হইনি। তবে নির্মূল করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। আতিকুল কবির মনি আরো জানান, গত রমজানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত এলাকার বন্ধুদের নিয়ে একটি সংগঠন করেছি। সংগঠনের নাম সমমনা বন্ধু সংগঠন (এসবিএস)। এর লক্ষ্য মাদক নির্মূলের পাশাপাশি সমাজকে সুদমুক্ত করা। তিনি এই সংগঠনের সভাপতি। জানান, সংগঠনে ১০১ জন সদস্য রয়েছে। যাদের মধ্যে চিকিৎসক, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তাসহ সমাজের নানা পেশার মানুষ যুক্ত হয়েছেন। এরা প্রতিমাসে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা দেন। এই টাকা দিয়ে হাসপাতাল-পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ নানা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান করা হবে। এ থেকে কোনো লভ্যাংশ আসলে তা মানুষের সেবায় ব্যয় করা হবে। মনি জানান, তিনি আশাবাদী এক সময় সমাজ মাদকমুক্ত হবে, সুদমুক্ত হবে। তিনি দেশকে মাদকমুক্ত করতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক আন্দোলন করার জন্য সচেতনদের এগিয়ে আসার তাগিদ দেন। মনি নিজস্ব ব্যবসা, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জামালপুরের বানিয়াবাজার এলাকায় অবস্থিত শেফা মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

November 2024
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  



© All rights reserved © dailychironton.com
Design BY Web Nest BD
ThemesBazar-Jowfhowo