শুধু গরম-গরম মিষ্টি আলু সেদ্ধ খেতেই কি শিম্পাঞ্জিরা পছন্দ করে, রান্নার কোন গুণ নেই তার! মানুষের দেহাবয়বের সঙ্গে মিল থাকা এ প্রাণীটির রয়েছে বিচক্ষণতাও। রান্না করার জন্য মস্তিষ্কের যে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োজন, তা রয়েছে শিম্পাঞ্জির। নতুন এক গবেষণায় তো তেমনটিই দাবি করা হচ্ছে। নিজের পছন্দের খাবার কাঁচা মিষ্টি আলুটাকে রান্না করার পাত্রে সেদ্ধ করে গবেষকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে একদল বন্য শিম্পাঞ্জি। আজ চার্লস ডারউইন বেঁচে থাকলে, তিনি বেজায় খুশি হতেন। তার দেয়া তত্ত্ব অসার, এমন দাবি যারা করছেন তাদের জন্য এটাকে দাঁতভাঙা জবাবই মনে করতেন তিনি। প্রসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি সাময়িকীতে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা আইএএনএস। গবেষণায় দেখা গেছে, মানবজাতির ক্রমবিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে রান্না করার এ সামর্থ্য প্রকাশ পায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রান্না করার সামর্থ্যরে জন্য অপরিহার্য যে দক্ষতাসমূহ প্রয়োজন, তার সবই হয়তো শিম্পাঞ্জির মস্তিষ্কে বিদ্যমান রয়েছে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ফেলিক্স ওয়ারনেকেন গবেষক বলছিলেন, ধারণা করা হয়, রান্নার বিশেষ গুণটি শুধু মানুষের মধ্যেই রয়েছে। সে কারণেই আমরা তা শিম্পাঞ্জির মধ্যেও পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলাম। প্রশ্নের উত্তর পেতে গবেষকদের দলটি ২০১১ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোয় ‘জেইন গুডঅল ইনস্টিটিউট’-এর একটি শিম্পাঞ্জি অভয়ারণ্যে ভ্রমণ করেছিলেন। বন্য শিম্পাঞ্জিরা রান্নার জন্য যে বিশেষ সামর্থ্য প্রয়োজন, তা অর্জন করতে পারে কিনা তা দেখতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালেন তারা। মাখন বা তেল ছাড়া একটি গরম প্যানে এক মিনিট মিষ্টি আলু সেদ্ধ করা হলো এবং পাশেই একটি কাঁচা মিষ্টি আলু রাখা হলো। শিম্পাঞ্জিরা সেদ্ধ মিষ্টি আলুটাকেই বেছে নিলো। এরপর গবেষকরা দুটি ডিভাইস বেছে নিতে দিয়ে শিম্পাঞ্জিদের রান্নার দক্ষতা পরীক্ষা করলেন। রান্নার একটি ডিভাইস, যা দিয়ে কাঁচা মিষ্টি আলু সেদ্ধ করা হলো এবং নিয়ন্ত্রণকারী একটি বিশেষ ডিভাইস, যাতে কাঁচা মিষ্টি আলু অপরিবর্তিতই রইলো। প্রায় প্রতিটি শিম্পাঞ্জিই বেছে নিলো রান্নার পাত্রটি। যার অর্থ, তারা দ্রুত পরিবর্তনটা ধরতে পেরেছে। গবেষকর দেখলেন, এদের মধ্যে কয়েকটা শিম্পাঞ্জিকে যখন কাঁচা মিষ্টি আলু দেয়া হলো, তারা সেটাকে রান্না করার পাত্রে রেখে রান্না করলো এবং আলুটাকে সেদ্ধ করে নিলো। গবেষকটির সহ-লেখক ইয়েল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলেকজান্ডার রসাটি বলছিলেন, প্রথমবারের মতো কোন শিম্পঞ্জিকে যখন আমি এমনটা করতে দেখলাম, আমি দারুণ বিস্মিত হয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, আমি সত্যিই আগে এমনটা ধারণা করতে পারিনি। যখন এই কাজটি একটি শিম্পাঞ্জি করলো, তখন আমরা ভেবেছিলাম হয়তো এই শিম্পাঞ্জিটা ‘জিনিয়াস’। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত একই কাজ করে দেখালো গবেষণায় অংশ নেয়া প্রায় অর্ধেক শিম্পাঞ্জি। সেটাও তো প্রায় বিনা প্রশিক্ষণেই। প্রশিক্ষণ দিলে, বাকিরাও অচিরেই তা রপ্ত করে নেবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
Leave a Reply