সিলেটের বিশ্বনাথে ৪র্থ দফায় আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ব্যাপক প্রচার-প্রচরণা শেষে করে ভোটারদের প্রদান করা রায়ের অপেক্ষায় আছেন প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীরা। এদিকে সুষ্ঠ-অবাদ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহন করা হয়েছে ৬ স্থরের ব্যবস্থা। বর্তমানে চেয়ারম্যানের পদে থাকা ৩ জন প্রার্থী এবারও নির্বাচনে অংশ গ্রহন করছেন। ফলে এবারের নির্বাচনে নতুনদের জয়-জয়কার বেশিই হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এরমধ্যে অলংকারী ইউনিয়নে পাবে একেবারেই নতুন চেয়ারম্যান।
‘২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তর ও ইউএনও গাড়ী পুড়ানো, লুটপাঠ, হত্যা, দূর্নীতির’ অভিযোগে বিএনপি-জামায়াত মনোনীত ও সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আদালতে চলমান থাকা নির্বাচনে নিজেদের বিজয় নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। বিএনপির অভ্যন্তরীন কোন্দল ও জামায়াত-বিএনপির মধ্যে থাকা দূরত্বকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনের দিন চমক দেখাতে অনেকটাই এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। যদিও অনেক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। সেক্ষেত্রে প্রচার-প্রচারণার মাঠে ‘নৌকা প্রতিক’র সুফল আদায় করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে চেয়ারম্যান পদে ২৯ জন, সাধারণ সসদ্য পদে ২৪৫ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৫৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এরমধ্যে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র এবং ৪টি ইউনিয়নে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী রয়েছেন। দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের পাশাপাশি ৫টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ও ২টি ইউনিয়নে বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী, ৩টি ইউনিয়নে জামায়াত নেতা এবং ১টি ইউনিয়নে খেলাফত মজলিস নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
লামাকাজী ইউনিয়ন: উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নেই কেবল মাত্র প্রধান ৪টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত (সমর্থিত) একক প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। কোন দলেরই নেই বিদ্রোহী প্রার্থী। ফলে উপজেলার বিএনপির মধ্যে থাকা দ্বন্দ ও লামাকাজীতে বিএনপি-জামায়াতের পৃথক প্রার্থী থাকায় এবং আওয়ামী লীগে গৃহবিবাদ না থাকায় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ের ক্ষেত্রে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক ডা. শাহনুর হোসাইন (নৌকা)। এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কবির হোসেন ধলা মিয়া (ধানের শীষ) প্রধান প্রতিদ্বন্দিতায় থাকবেন বলেন ধারণা ইউনিয়নবাসীর। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারী মঈন উদ্দিন (আনারস) ও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী উপজেলা জামায়াতের যুগ্ম আহবায়ক এ কে এম দুলাল (লাঙ্গল)ও রয়েছেন প্রতিদ্বন্দিতায়।
খাজাঞ্চী ইউনিয়ন: উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পাশাপাশি রয়েছেন একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতায়। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শংকর চন্দ্র ধর (নৌকা)’র বিপক্ষে দলের একটি অংশ থাকার পরও নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ের ক্ষেত্রে রয়েছেন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে। কারণ বিগত নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে থাকা নেতা-কর্মীদের ও এলাকার সুশীল সমাজের একটি বড় অংশ এবারের নির্বাচনে তাঁর (শংকর) পক্ষে কাজ করছেন। অন্যদিকে বিগত নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে রয়েছেন বেশ সক্রিয়। তাছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী (চশমা)’র বিরুদ্ধে দূর্নীতির বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করার জামায়াতের মিত্র বিএনপির বক্তারা বিভিন্ন সভায় বক্তব্য দেওয়ায় শক্তিশালী হচ্ছে আওয়ামী লীগের অবস্থান। তীব্র প্রতিদ্বন্দিতার দৌড়ে রয়েছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী উপজেলা ছাত্রদল নেতা তালুকদার গিয়াস উদ্দিন (ধানের শীষ)। অন্যদের মধ্যে প্রতিদ্বন্তিতা করছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী জাপা নেতা রুবেল আহমদ আফছল (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি পীর লিয়াকত হোসেন (আনারস), স্বতন্ত্র প্রার্থী শিব্বির আহমদ (টেবিল ফ্যান), আবদুস ছত্তার (মোটর সাইকেল) প্রতিক পেয়েছেন।
অলংকারী ইউনিয়ন: উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নে বিএনপির শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ও আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ের ক্ষেত্রে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক রফিক মিয়া (নৌকা)। স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নাজমুল ইসলাম রুহেল (চশমা)’র তাঁর (রফিক) সাথে তাঁর (রফিক) তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা হবে বলে ধারণা ইউনিয়নবাসীর। তবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বিএনপি নেতা আবদুল হক (ধানের শীষ) ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ছালেহ আহমদ তোতা (লাঙ্গল)’ও রয়েছেন প্রতিদ্বন্দিতায়।
রামাপাশা ইউনিয়ন: উপজেলার রামাপাশা ইউনিয়নেই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের পাশাপাশি দু’দলের ২ বিদ্রোহী প্রার্থীও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। বিএনপির দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক বশির আহমদ (চশমা) দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া বিএনপিতে চলতে চরম অভ্যন্তরিন কোন্দল। আর সেই কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার পরও নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ের ক্ষেত্রে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর (নৌকা)। আলমগীর-বশিরের মধ্যেই তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা হবে বলে ধারণা ইউনিয়নবাসীর। তবে প্রতিদ্বন্দিতায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুর রহমান (আনারস) ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন (ধানের শীষ)’।
দৌলতপুর ইউনিয়ন: উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াতের পৃথক প্রার্থী থাকায় ও প্রথম বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বাস্তবায়ন করা ব্যাপক উন্নয়নের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার পরও নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ের ক্ষেত্রে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমির আলী (নৌকা)। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরব খান (ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ নেতা আছাব উদ্দিন (আনারস)’র সাথে তাঁর (রফিক) তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা হবে বলে ধারণা ইউনিয়নবাসীর। তবে প্রতিদ্বন্দিতায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী জাপা নেতা সাইদুর রহমান (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি বাবুল মিয়া (চশমা), কবি খালেদ মিয়া (রজনীগন্ধা)।
বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়ন: উপজেলার বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নকে নিয়েই উপজেলাবাসীর যত জল্পনা-কল্পনা। ৪ প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীর মধ্যে ২ জন প্রার্থী দু’বারের করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ছিলেন এবং অন্য ২ জন প্রথম বারের মতো নির্বাচন করছেন। তাই কে ৭মের নির্বাচনে বিজয়ী হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে যথ হিসেব। তবে সাবেক-বর্তমান চেয়ারম্যানদের ব্যর্থতার তথ্য জনসম্মুখে এনে প্রচার-প্রচারণায় অনেকটাই এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজেন নবীনরা। সরকারী দলের (আওয়ামী লীগ) সভাপতি আলহাজ্ব পংকি খান, সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার’র বাড়ি সদর উপজেলায় হওয়ায় দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তাঁরাও গুরুত্বের সাথে নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী কাজ পরিচালনা করায় ও দলের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি শাহ আসাদুজ্জামান আসাদ নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় এবং বিএনপির মধ্যে থাকা তীব্র অভ্যন্তরীন কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ের ক্ষেত্রে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব আবদুল জলিল জালাল (নৌকা)। তবে তাঁর (জলিল) প্রতিদ্বন্দি অপর ৩ প্রার্থীই অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জালাল উদ্দিন (ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ছয়ফুল হক (আনারস)’র সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা হবে বলে ধারণা ইউনিয়নবাসীর। প্রতিদ্বন্দিতায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা আবদুল মতিন (চশমা)। –
Leave a Reply