সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুইজন চিকিৎসক কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় গতকাল ২৬ ডিসেম্বর সোমবার স্বর্ণালী সাহিত্য পর্ষদ, সিলেটের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীদ্বয়ের বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন সাহিত্য পর্ষদের নেতৃবৃন্দ সহ অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ শহিদুল ইসলাম চৌধুরী।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন স্বর্ণালী সাহিত্য পর্ষদের সভাপতি কবি নূরুদ্দীন রাসেল, সহ সভাপতি হেলাল আহমদ, মোঃ আমিনুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিনুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুল খালিক, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আজাদ আহমদ, নির্বাহী সদস্য আজমল আহমদ রুমন, সৈয়দ শরীফ আহমদ, মোঃ আবুূল কালাম, সিলেট বিভাগ গণদাবী ফোরামের কেন্দ্রিয় সভাপতি আলহাজ¦ আখলাক আহমদ চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড সিলেট মহানগর সভাপতি নুর আহমদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক এন এম ময়না মিয়া, দৈনিক যায় যায় দিনের সিলেট ব্যুরো প্রধান আব্দুল কাইয়ুম, দৈনিক সিলেট সুরমার স্টাফ রিপোর্টার সুলতান সুমন, বাংলার আওয়াজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক মোঃ গোলাম রব্বানী, ডেইলী স্বর্ণালী দিন ডটকমের সম্পাদক জায়েদ আহমদ চৌধুরী, সিলেট টুয়েন্টিফোর নিউজ ডটকমের সম্পাদক মোঃ সাইফুর রহমান প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, সিলেট মহানগর’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাহিত্য সংগঠন ‘স্বর্ণালী সাহিত্য পর্ষদ, সিলেট’ ও ‘বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, সিলেট বিভাগীয় সভাপতি’ কবি নূরুদ্দীন রাসেল (৩০) রাসেল গত ৫ ডিসেম্বর ডাক্তার কর্তৃক লাঞ্চনার শিকার হন। তিনি দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানের ছেলে। গত ৪ ডিসেম্বর রোববার রাসেলের মা তাঁর ছোটবোন তাহমিনা বেগম’র চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের বহির্বিভাগের (নাক, কান, গলা) আবাসিক সার্জন ডাক্তার কৃষ্ণ কান্ত ভৌমিক’র কাছে যান। এ সময় ডাক্তার তার ব্যবস্থাপত্রে দুইটি পরীক্ষার কথা লিখে দেন। একটি পরীক্ষার (ডিজিটাল এক্সরে) ব্যবস্থা ওই হাসপাতালের ভেতরেই রয়েছে এবং অপরটি বাহিরের অন্য কোনো মেডিকেল সেন্টারে। হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ থেকে সংগৃহীত টিকিটে মুক্তিযোদ্ধা সীল থাকার পরও ওই ডাক্তার ডিজিটাল এক্সরে পরীক্ষার জন্য ফ্রি তে কোন ব্যবস্থা করে দেননি। বিষয়টি নিয়ে আলাপ করার জন্য পরদিন ৫ ডিসেম্বর সোমবার রোগী তাহমিনার বড় ভাই লাঞ্চিত নূরুদ্দীন রাসেল হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ডা. কৃষ্ণ কান্ত ভৌমিকের সাথে সাক্ষাত করতে চাইলে তিনি চেম্বারে উপস্থিত হননি। তিনি হাসপাতালের পুরাতন বিল্ডিং-এর ৪র্থ তলায় ৭ নং ওয়ার্ডে অবস্থান করছেন এমন সংবাদ পেয়ে রাসেল সেখানে যান। কিন্তু সরজমিনে দেখা গেল তিনি ওই রুমে না বসে একই বিল্ডিং-এর ৪র্থ তলার ৪১৭নং কক্ষে অধ্যাপক ডাক্তার এন.কে. সিনহা’র সাথে খোশ গল্প করছেন। সিনহা একই বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ও হেড নেক সার্জারী বিভাগ। সেখানেও তাঁর সাথে দেখা করতে বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন রাসেল। পরে প্রায় আধ ঘন্টার মতো অপেক্ষা করে রুমে ঢুকার অনুমতি পান। অথচ ওই রুমে অনেক বিভিন্ন মহলের অনেক নেতাকর্মীরা দেদারছে ঢুকছেন বলে তিনি দেখতে পান।
তিনি আরো জানান, রুমে অবস্থানরত ডাক্তার কৃষ্ণ কান্ত ভৌমিক ও ডা. এন.কে সিনহা উভয়কে সম্মান জানিয়ে তিনি গতকালের বিষয়টি নিয়ে আলাপ করার অনুমতি চান। পরে ডা. ভৌমিক অনুমতি দিলে তিনি বিনয়ের সাথে বলেন ‘গতকাল আপনার সাথে সাক্ষাতের সময় আমার মা মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র আপনাকে প্রদর্শন করেন, অথচ হাসপাতালের ইনডোরে ফ্রিতে ডিজিটাল এক্সরে করা থেকে আমাদের বঞ্চিত করলেন। দেখুন, দয়াকরে আমাকে এই সুবিধাটা প্রদান করুন মর্মে বার বার বিনয়ের সাথে আকুতি জানান’। কিন্তু তার কথায় হুঙ্কার দিয়ে ডা. ভৌমিক বলেন ‘আপনি আমাকে চার্জ করছেন? আপনার টাকার সমস্যা আছে কি? আর টাকা না থাকলে এখানে আসছেন কেন’? পরক্ষণেই ডা. সিনহাও ডা. ভৌমিকের সাথে তাল মিলিয়ে অভিযোগের বাদি রাসেল’র সাথে রূঢ় আচরণ করে বলেন ‘এখানে স্বয়ং মুক্তিযোদ্ধারা ফ্রিতে কোনরূপ সুযোগ সুবিধা পায় না সেখানে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এই সুবিধা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না’। এছাড়া ওই মুক্তিযোদ্ধা সন্তানকে ইন্টার্নি ডাক্তারের সামনেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে তিনি জানান। নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক সিওমেক থেকে অভিযুক্ত ডাক্তারদের দ্রুত অপসারণের জন্য মন্ত্রী মহোদ্বয়ের নিকট জোরদাবী জানান।
Leave a Reply